১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ

নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশ
-

বেশ কয়েকদিন হলো পেনশন স্কিম প্রত্যয় বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ দেশের সবখানেই এখন দুটো আন্দোলনই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। যদিও দুটো আন্দোলনই অরাজনৈতিক, তারপরও রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে কোটাবিরোধী আন্দোলনে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্রদের সমর্থন দেয়া এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির বিস্তৃতি দিনকে দিন ছড়িয়ে পড়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

গত বুধবার সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) জারি করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এরপরও গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন এবং সাঁজোয়া যান ঘিরেই বিক্ষোভ করতে থাকেন তারা। এর ফলে শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ বিএনপি শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক কোটাবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে রাজনীতির রঙ ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে। সাধারণ ছাত্রদের ওপর ভর করে বিএনপি ফায়দা লুটতে চায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বিএনপি ও তার মিত্ররাও নতুন করে আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছে। যদিও সর্বশেষ গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ পণ্ড হওয়া এবং রাজনীতির মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে। এখন তারা অন্যের ওপর ভর করে রাজনৈতিক মাঠ ঘোলা করার ষড়যন্ত্র করছে।

এ প্রসঙ্গে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে শিক্ষার্থীদের প্ররোচনা দিচ্ছে। বিএনপিসহ কিছু দল প্রকাশ্যে কোটা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলে তারা নতুন করে আন্দোলন করার পাঁয়তারা করছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনকে তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ দেয়ার চেষ্টা করছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, এই আন্দোলনকে কেউ যদি রাজনৈতিক ফাঁদে ফেলতে চায়, সেটিকে আমরা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করব। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচন ও আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি এখন কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করেছে। তারা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ফায়দা নিতে চায়। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক আছি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে, রাজপথে আগুন সন্ত্রাস করলে আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব।

দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা আলাপকালে বলেন, ২০১৮ সালের পর এখন ফের কোটাবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা হয়েছে। তাদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ব্যাপ্তি কিছুটা হলেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে বিএনপি সুবিধা নিতে চাইছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন যারা করছে তাদের বিভ্রান্ত করে এই আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরিত করার একটা অপচেষ্টা করছে বিএনপি ও তার মিত্ররা।

সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও এমন তথ্য দিচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ এবং সরকার সতর্ক রয়েছে। তারপরও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভুলভাল বুঝিয়ে যদি আন্দোলনের মোড় বিএনপি একবার ঘুরিয়ে দিতে পারে- সে ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও সরকার বিপদে পড়বে। তখন এর সর্বোচ্চ ফায়দা নেবে বিএনপি। ওই নেতা আরো বলেন, এর আগে ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর এবং গত বছরের ২৮ অক্টোবর দুই দফায় ঘোষণা দিয়েও মাঠে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি ও তার মিত্ররা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দৃঢ়তার কারণে বিএনপি তাদের নিজস্ব শক্তি দিয়ে আন্দোলনে সফল হতে পারেনি। চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ থাকায় এই আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কিছুটা হলেও দল ও সরকারকে ভাবতে হচ্ছে। আদালত স্থিতাবস্থা দেয়ার পরও পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ করাটা মোটেও সুখকর নয়।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, কোটাবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়–ক কোনোভাবেই সরকার এটা চায় না। এ জন্য গক বুধবার হাইকোর্টের রায়ের ওপর সর্বোচ্চ আদালতের স্থিতাবস্থা জারির পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করায় বিষয়টি আমলে নিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আন্দোলনের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা তৈরি এবং জনভোগান্তি হয় এমন কর্মসূচি পালন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দলীয়ভাবে ঢাকা জেলা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে চোখ-কান খোলা রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় তিনি আন্দোলনের নামে শিক্ষাব্যবস্থাকে জিম্মি করে রাখলে রুখে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা যদি জানমালের ক্ষতি করে, অগ্নিসংযোগ ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে, তাহলে তো পুলিশ বসে থাকবে না। তিনি আরো বলেন, অনেকেই তাদের ব্যবহার করার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছে। তাদের ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement