১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা

-

- কোটা নিয়ে রায়টি এখন কার্যকর হবে না : অ্যাটর্নি জেনারেল
- বিক্ষুব্ধদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান বিচারপতির : ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানি

সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) জারি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সাথে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর দায়ের করা পৃথক আপিল আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আদেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, সব প্রতিবাদী কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ কাজে অর্থাৎ পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হলো। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টর এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা তাদের ছাত্রছাত্রীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবেন বলে এই আদালত আশা করে। প্রতিবাদকারী ছাত্রছাত্রীরা চাইলেও আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য এই আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেন। আদালত মূল আবেদন নিষ্পত্তির সময় তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন।
চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা দেয়া হলো উল্লেখ করে আপিল বিভাগ বলেছেন, ৭ আগস্ট পরবর্তী দিন রাখা হলো। প্রধান বিচারপতি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল আবেদনের শুনানির সময় আমরা সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আইনজীবীদের মাধ্যমে যুক্তি শুনব। যারা রাস্তায় আছে তাদের কিছু কথা আছে আমরা শুনবো। তিনি বলেন, অনেক হয়েছে, রাস্তা থেকে ক্লাসে যান।

হাইকোর্টের রায়টি এখন কার্যকর হবে না-অ্যাটর্নি জেনারেল : আপিল বিভাগের আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, উভয়পক্ষকে শুনানি করে আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। অর্থাৎ যে অবস্থায় আছে, সেই অবস্থায়ই থাকবে। যে চাকরিগুলো চলমান আছে, সেগুলো সবই ঠিক থাকবে। এই স্থিতাবস্থার কারণে হাইকোর্টের রায়টি এখন আর কার্যকর হবে না। তিনি বলেন, কোটা বাতিল সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্রের ভিত্তিতে যেসব সার্কুলার দেয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে কোটা থাকছে না।
এখন কোটার প্রকৃত অবস্থা কি হলো এ প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আগে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায়ই আছে। স্থিতাবস্থা দেয়া হয়েছে সাবজেক্ট ম্যাটারে। সাবজেক্ট ম্যাটারে এটা বাতিল করা ছিল। যে বিজ্ঞপ্তিগুলো রয়েছে, সেগুলোতে কোটা পদ্ধতি লাগবে না। নতুন করে কোনো বিজ্ঞপ্তি দিতে হলে, এখন আপাতত কিছু করবে না। মামলাটা আগামী ৭ তারিখে শুনানি হবে, তখন ঠিক করবে এটা।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর রিটকারীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো: মুনসুরুল হক চৌধুরী।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোটা পদ্ধতি রাখা না রাখা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। হাইকোর্ট এ নিয়ে রায় দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে এখনো স্বাক্ষর হয়নি। ফলে আমরা নিয়মিত লিভ টু আপিল ফাইল করতে পারছি না। আমরা স্থগিতাদেশ চাচ্ছি। কারণ হচ্ছে সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোতে ব্যাঘাত ঘটছে। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাসহ অনেকগুলো নিয়োগ পরীক্ষা আটকে আছে।
গত ৫ জুন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এক রিটে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। এর ফলে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনবর্হাল হলো বলে জানিয়েছিলেন আইনজীবীরা।

এর আগে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করা হয়। তারও আগে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা রয়েছে ১০ শতাংশসহ আরো কিছুসংখ্যক কোটা বিদ্যমান ছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়।
যা বলেছেন রিটের পরে আইনজীবী : রিটকারীপক্ষের আইনজীবী মো: মুনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, আপিল বিভাগ কিন্তু হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেননি। স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যাও দেখা যাচ্ছে। আপাতত নিয়োগে কোটা অনুসরণ করতে হবে কি না সে বিষয়ে তিনি বলেন, আপাতত দরকার হবে না। তিনি বলেন, মানে হলো যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকবে। হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে।
দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী : ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, আপিল বিভাগ থেকে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা বা স্থগিতাদেশ চেয়েছিলাম। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ শুনানি শেষে হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। তিনি বলেন, এই স্থিতাবস্থার ফলে হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে। ২০১৮ সাল থেকে যেভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল আগামী দিন সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চলতে থাকবে।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক : তবে এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আমরা দেখেছি অনেক ক্ষেত্রে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগ পর্যন্ত রায় স্থগিত করা হয়। এখানে সরকার পক্ষ এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষে আরো একটি পক্ষ হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়েছে। তিনি বলেন, এখানে এই স্থিতাবস্থার মধ্যে অস্পষ্টতা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই স্থিতাবস্থার আদেশের ফলে প্রত্যেকটি পক্ষ নিজেদের মতো করে আদেশটি ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। এর মানে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা আছে বা নেই সে ব্যাপারে অস্পষ্টতা থেকে গেছে।
গতকাল আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আর রিটকারীপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো: মুনসুরুল হক চৌধুরী ।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কোটা পদ্ধতি রাখা না রাখা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। হাইকোর্ট এ নিয়ে রায় দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সে রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের রায়ে এখনো স্বাক্ষর হয়নি। ফলে আমরা নিয়মিত লিভ টু আপিল ফাইল করতে পারছি না। আমরা স্থগিতাদেশ চাচ্ছি। কারণ হচ্ছে সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলোতে ব্যাঘাত ঘটছে।
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীর পক্ষে এসেছি (আবেদন করা হয়েছে)। তারা কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে নেই। তারা বিষয়টির একটি ন্যায্য সমাধান চাচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা এই আবেদনটি করেছেন। আমরা আপাতত হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ চাচ্ছি।

আইনজীবী মো. মুনসুরুল হক চৌধুরী শুনানিতে বলেন, ২০১৮ সালে একটা আন্দোলন হয়। বলা হলো, কোটা থাকলে জাতি মেধাহীন হয়ে যাবে। পরে এই আন্দোলনের কারণে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে একটা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়। আমার নিবেদন হচ্ছে- রায় পাওয়ার পরে লিভ টু আপিল দায়ের করা পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল থাকুক। তা ছাড়া কোটা পদ্ধতি নিয়ে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত আছে। সেখানে কোটা পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ করার নির্দেশনা ছিল। হাইকোর্টের রায় স্থগিতে আমি আপত্তি জানাচ্ছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে উপাসনাস্থল নিয়ে আপাতত নতুন মামলা করা যাবে না সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারকে যে বার্তা দিলো পশ্চিমতীরের ইসলামী আন্দোলন প্রধান বিএনপি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন চায় না : ড. মঈন খান রাজশাহীতে আরো ২ মামলায় গ্রেফতার সাবেক এমপি আসাদ স্কুলে ভর্তির লটারির ফল জানা যাবে যেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদের রুখে দিতে হবে : জাহিদ হোসেন পতিত স্বৈরশাসকের জন্য ভারত মায়াকান্না করছে ‘অপশক্তিকে রুখে দিয়ে দেশকে বাঁচাতে হবে’ বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের আহ্বান ফেনীতে মুক্তিপণ না দেয়ায় শিশু খুন, গ্রেফতার ৩ কিশোর ড. ইউনূসের সাথে এসএফও প্রতিনিধিদলের বৈঠক

সকল