১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ইসলামী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি

বাংলাদেশ ব্যাংক ও নাবিল গ্রুপসহ ১৪ কোম্পানিকে দুদকের চিঠি

-

ইসলামী ব্যাংকের আলোচিত ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নাবিল গ্রুপের ১১টিসহ মোট ১৪ টি কোম্পানিকে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল সোমবার এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দুদকের জনসংযোগ বিভাগ নিশ্চিত করেছে। চিঠিতে ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মালিক মো: গোলাম কিবরিয়া চৌধুরীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ঋণের নামে ইসলামী ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত ঋণগুলো সম্পর্কে রেকর্ডপত্র ও তথ্যাদি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
দুদকের উপ-পরিচালক ইয়াসির আরাফাত গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও ঋণ জালিয়াতির সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে চট্টগ্রামের চাকতাই ইসলামী ব্যাংক শাখার গ্রাহক মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ইসলামী ব্যাংকের জুবলী রোড শাখার গ্রাহক ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার গ্রাহক সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ইসলামী ব্যাংকের রাজধানীর গুলশান করপোরেট শাখা, রাজশাহী ও রাজশাহী নিউমার্কেট শাখা, রাজশাহী এবং পাবনা শাখা, পাবনার গ্রাহক নাবিল গ্রুপের ১১টি প্রতিষ্ঠানের ঋণজালিয়াতির অনুসন্ধানকালে প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র প্রয়োজন। এ ছাড়া আরো তিনটি প্রতিষ্ঠানের ঋণ জালিয়াতির অনুসন্ধানের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের তিনটি শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা প্রায় তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেনামি ঋণের খোঁজ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্ট এবং মুরাদ এন্টারপ্রাইজকে এ ঋণ দেয়া হয়। তবে ঋণের নথিপত্রে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পায়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ ছাড়াও নাবিল গ্রুপের ১১টি কোম্পানির নামে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদকের তদন্তে নাবিল গ্রুপের পিওন ও বেশ কয়েকজন কর্মচারীর নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠান বানিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকের ছাড়কৃত ঋণের বিপরীতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সরেজমিনে অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনের সময় পর্যন্ত তিন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দুই হাজার ৬১০ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা আগের দায় সমন্বয় করা হয় এবং ঋণ সমন্বয় করতে পে-অর্ডার ইস্যুর মাধ্যমে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকের এমডির কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে সেঞ্চুরি ফুড প্রডাক্ট, জুবিলী রোড শাখা থেকে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্স ও চাক্তাই শাখা থেকে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নির্বাহী কমিটির ১৯৫৯তম সভায় বিনিয়োগ অনুমোদন করা হয়েছে। এসব বিনিয়োগের মেয়াদ ইতোমধ্যে অতিক্রম করায় বকেয়া স্থিতি অবিলম্বে ১৫ দিনের মধ্যে আদায় করতে হবে। আর আদায় করতে না পারলে ক্ষতিজনক, মানে খেলাপি করে জানাতে হবে। পাশাপাশি এই বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার সুপারিশ, অনুমোদন ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ার সাথে জড়িত সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে জানাতেও ওই চিঠিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement