মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সামনে ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা
৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা- মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
- ০৯ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনায় সাতজনকে আসামি করে টঙ্গিবাড়ী থানায় মামলা করা হয়েছে। নিহতের ছোট ভাই এইচ এম ইমন হাওলাদার বাদি হয়ে সোমবার এই মামলা করেন। টঙ্গিবাড়ী থানার ওসি মোল্লা সোহেব আলী বলেন, নিহতের ভাই ইমন হালদার বাদি হয়ে সাতজনকে আসামি করে টঙ্গিবাড়ী থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছে। মামলাটি এরইমধ্যে রেকর্ড করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল আপরাধীদের সহযোগীদের ধরা হয়েছে। মূল অপরাধী নুর মোহাম্মদ গুলি ছোড়তে ছোড়তে পালিয়েছে। এই সময় পুলিশের অস্ত্র কোথায় ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। এ দিকে গতকাল দুপুরে জোহর নামাজের পরে নিহত ইউপি চেয়ারম্যান সুমন হালদারের নামাজে জানাজা শেষে তাকে বেলা ৩টার দিকে উপজেলার গণাইসার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিহতের জানাজায় টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম হালদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আসলাম হোসাইন, টঙ্গিবাড়ী উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ প্রায় ১৫ শত লোক অংশগ্রহণ করেন।
এ দিকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় পরপর পুলিশের সামনে দু’টি প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ যেখানে আশ্রয়স্থল সেই পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে ঘটে গেল পরপর দু’টি হত্যাকাণ্ড। আর এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি। একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান অপরজন দীঘিরপার ইউনিয়নের আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও দীঘিরপার ইউনিয়ন বাজার কমিটির সহসভাপতি সোহরাব হাওলাদার। দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে হত্যার পর হত্যাকারীরা পুলিশের সামনে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে জনমনে।
গত রোববার দুপুরে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে পাঁচগাঁও আলহাজ ওয়াহেদ আলী দেওয়ান উচ্চবিদ্যালয়ের সভাপতি পদে নির্বাচন নিয়ে কয়েক দিন ধরে ছিল ওই এলাকায় উত্তেজনা। তাই কর্তৃপক্ষ নির্বাচনে পুলিশের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। পুলিশ মোতায়েনও করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রে পুলিশ থাকা অবস্থায়ও নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে গুলি করে মূল হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ওই হত্যাকারীদের তিনজন সহযোগীকে আটক করা হলেও মূল দুই হত্যাকারী এখনো পলাতক। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তলও উদ্ধার হয়নি। এর আগে গত ৮ এপ্রিল দীঘিরপাড় পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সামনে ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহরাব খানকে প্রকাশ্যে পুলিশের উপস্থিতিতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার পর তদন্ত কেন্দ্রের সামনে উত্তেজিত জনতা অবস্থান নেন। সে সময় তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো: শাহ আলমকে হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে তদন্ত কেন্দ্রে আক্রমণ করে স্থানীয়রা। পরে পাশের একটি ভবনে পালিয়ে থাকা এই পুলিশ কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ এনে তাকে বুলেট জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে পুলিশের পিকাপে করে উদ্ধার করা হয়। নিহতের কন্যা এবং ভাইদের বক্তব্যসহ এসব ভিডিও ও সংবাদ সে সময় ছড়িয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি স্থানীয় ভোলা হওলাদারের ছেলে রিহান ও রিজভী কুপিয়ে জখম করে সোহরাব খান ও তার ছেলে জনি খানকে এবং সে সময় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তারা। এখনো পলাতক ওই দুই আসামি।
এরপর রোববার (৭ জুলাই) পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে জন সম্মুখে পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য এইচ এম সুমন হালদারকে স্থানীয় নুর মোহাম্মদ নামক ব্যক্তি বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে বীরদর্পে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পুলিশের সামনে দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সোহেল মোল্লা বলেন, নুর মোহাম্মদ ও তার ভাই ভোলা চেয়ারম্যান সুমন হালদারকে গুলি করে। গুলি ফুটাতে ফুটাতে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়। এই নুর মোহাম্মদ কয়েক মাস আগেও প্রকাশ্যে আমাকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি ছোড়ে । সে সময় পুলিশ ওই ঘটনার যদি সুস্থ তদন্ত করে ওই অস্ত্র উদ্ধার করত তাহলে নতুন করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, হঠাৎ করে পুলিশের সামনে গুলি করে পালিয়ে যায় দুই খুনি নুর মোহাম্মদ ও ভোলা। তারা এর আগেও পাঁচগাঁও এলাকায় অস্ত্র নিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি ও গুলি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। পুলিশ যদি ওই সমস্ত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করত এবং অস্ত্র উদ্ধারে সেই সময় তৎপর হতো তাহলে প্রকাশ্যে এ ধরনের ঘটনা হয়তো ঘটত না।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আউটশাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেকান্দর বেপারী বলেন, প্রকাশ্যে একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা করা হলো। যেখানে আমাদের জন প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নাই সেখানে আমরা সাধারণ মানুষকে কিভাবে নিরাপত্তা দিবো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা