অভিবাসী বিতাড়ন পরিকল্পনা বাতিল ঘোষণা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৮ জুলাই ২০২৪, ০১:১৫
ব্রিটেনে আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে আগের সরকারের নেয়া বিতর্কিত পদক্ষেপ ‘রুয়ান্ডা পরিকল্পনা’ বাতিল ঘোষণা করলেন দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার। ব্রিটেনের সাম্প্রতিক ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করা জয় নিয়ে সরকার গঠনের পর শনিবার প্রথম কার্যদিবসে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন লেবার পার্টির নেতা স্টারমার। বিবিসি ও রয়টার্স।
১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের নেতা’ হিসেবে পরিচিত পাওয়া নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বলেন, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা এরই মধ্যে ‘মৃত ও সমাহিত’। এই অকেজো পদক্ষেপটি দ্রুতই বাতিল করা হবে। নির্বাচনের ভরাডুবির মধ্য দিয়ে বিদায় নেয়া কনজারভেটিভ দলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ২০২২ সালে ‘রুয়ান্ডা পরিকল্পনা’ গ্রহণের কথা প্রথম জানান দেন। তখনই এটি বাতিলের পক্ষে জোরালো আন্দোলন শুরু হয়। দেশটির আদালতও রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বারবার স্থগিত করে রায় দেয়। ফলে তা আর বাস্তবায়ন করতে পারেননি সুনাক।
নির্বাচনী ইশতেহারেও কনজারভেটিভ পার্টি ফের ক্ষমতায় গেলে রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে লেবার পার্টির ইশতেহারে বলা হয়, তারা সরকার গঠন করলে এটি বাতিল করে নতুন ব্যবস্থা দাঁড় করাবে। নির্বাচনী প্রচারেও ‘রুয়ান্ডা পরিকল্পনা’ একটি ইস্যু হয়ে ওঠে। বিশেষ করে অভিবাসী ভোটাররা সুনাকের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে, যার প্রভাব ভোটের ফলাফলেও দেখা গেছে। এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টি মাত্র ১২১টি আসন পেয়েছে, যা দুই শতাব্দীর ইতিহাসে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে দলটির পাওয়া সর্বনিম্ন আসন। লেবার নেতা স্টারমারসহ তার দলের প্রার্থীরা রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোটের প্রচার চালান। ব্যালটে তারা এর সুফলও পেয়েছেন। ১৯৯৭ সালের পর গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে রেকর্ড ৪১২ আসন নিয়ে নিরঙ্কুশ জয় নিশ্চিত করেছে লেবার পার্টি।
লেবার নেতা স্টারমার শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং মন্ত্রিসভাও গঠন করেন। সে অনুযায়ী শনিবার ছিল তার আনুষ্ঠানিক প্রথম কার্যদিবস। এ দিন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকের পাশাপাশি প্রথমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন স্টারমার। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, রুয়ান্ডা পরিকল্পনা শিগগির বাতিল করা হবে। কারণ এ পরিকল্পনায় মাত্র ১ শতাংশ কাগজপত্রহীন আশ্রয়প্রার্থীদের বিতাড়নের কথা রয়েছে। এটি আশ্রয়প্রার্থীদের ঠেকাতে কোনো কাজে আসবে না।
তিনি বলেন, শুরুর আগেই রুয়ান্ডা পরিকল্পনা মরে গেছে এবং সমাধিস্থও হয়েছে। এটি কখনোই কার্যকর কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হওয়ার মতো কিছু নয়; যা প্রতিরোধ হিসেবে কখনো কাজেই আসবে না, এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ কোনো কিছু এগিয়ে নিতে আমি প্রস্তুত নই।’ টনি ব্লেয়ারের পর সর্বোচ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছেন কিয়ার স্টারমার। তার জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করা সমর্থনের দিক থেকে সহজ। কিন্তু সরকারি সেবা ঠিকঠাক এগিয়ে নিয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা বেশ কঠিন।
এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছোট ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটেনে আশ্রয় পাওয়ার আশায় আসা হাজারো অভিবাসীর চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিল করে বিষয়টি কিভাবে সমাধানের দিকে নিয়ে যাবেন স্টারমার? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে তার সরকার ‘সীমান্ত নিরাপত্তা কমান্ড’ নামে একটি বাহিনী বা শাখা করবেন। পুলিশ, গোয়েন্দা ও প্রসিকিউশন থেকে দক্ষ লোকবল নিয়ে এই কমান্ড গঠন করা হবে। সন্ত্রাসবিরোধী কমান্ডের মতো ক্ষমতা দেয়া হবে তাদের। তারা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে পাচার চক্র ভেঙে দেবে।
সরকার গঠনের পর রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিলে স্টারমারের ঘোষণা তার দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। রুয়ান্ডা পরিকল্পনা নিয়ে ঋষিকের ভাষ্য ছিল- যারা বৈধতার কাগজপত্র ছাড়া বা বিনা অনুমতিতে ব্রিটেনে প্রবেশ করবে, তাদের ধরে ধরে পূর্ব আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে তারা আশ্রয় চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করবে, শেষ পর্যন্ত তারা যদি সুযোগ পায় তা হলে কেবল যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে।
এ পদক্ষেপ ছোট ছোট নৌকায় করে ব্রিটেনে অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করবে বলে দাবি করেছিলেন সুনাক। যদিও আইনি বাধার মুখে একজন অভিবাসীকেও রুয়ান্ডায় পাঠাতে পারেননি তিনি। ব্রিটেনের জাতীয় নির্বাচনের ছয় সপ্তাহের প্রচার পর্বে শুধু দেশটিতেই নয়, বিশ্বজুড়েই সুনাকের রুয়ান্ডা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দেখা যায়। এ পরিকল্পনার সমর্থনকারীদের যুক্তি- এ পদক্ষেপ মানব পাচারকারীদের গুঁড়িয়ে দেবে। বিরোধিতাকারীদের দাবি- এটি অনৈতিক ও অকার্যকর।
গত নভেম্বরে ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্ট রুয়ান্ডা পরিকল্পনাকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে বলে, ‘তৃতীয় বিশ্বের দেশ রুয়ান্ডাকে নিরাপদ মনে করার কোনো কারণ নেই’। এই রায়ের পর সুনাক সরকার আদালতের সিদ্ধান্ত পাশ কাটাতে রুয়ান্ডার সাথে নতুন চুক্তি করে, যাতে তারা আশ্রয়প্রার্থীদের সে দেশে পাঠিয়ে দেয়া শুরু করতে পারে। সরকারের নতুন চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যায় বিভিন্ন অধিকার সংস্থা ও ইউনিয়ন। সেখানেই আটকে আছে সুনাকের রুয়ান্ডা পরিকল্পনা।
তবে চুক্তি অনুযায়ী রুয়ান্ডা সরকারকে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড দিয়েছে সুনাক সরকার। এই অর্থ দিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের রাখার জন্য অবকাঠামো তৈরি করেছে এবং জনবলও নিয়োগ দিয়েছে দেশটি। রুয়ান্ডাকে দেয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার সুযোগ বা আশা না রেখেই এই পরিকল্পনা বাতিল করতে হচ্ছে স্টারমারকে; অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের করের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিয়ে গেছেন সুনাক। রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিলের জন্য যেসব সংগঠন ও সংস্থা কাজ করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো ‘ফ্রিডম ফ্রম টর্চার’।
সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী সোনিয়া স্কিটস স্টারমারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘এই লজ্জাজনক পদক্ষেপের দুয়ার বন্ধে তড়িত সিদ্ধান্ত নেয়ায় স্টারমারকে ধন্যবাদ জানাই। নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার ভাসমান মানুষদের নিয়ে ওই পদক্ষেপে নোংরা রাজনীতির খেলা চলছিল।’ প্রথম দিনের সংবাদ সম্মেলনে কর বৃদ্ধি, কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দির চাপ, অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন কিয়ার স্টারমার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা