প্রত্যয় স্কিম বাতিলের আন্দোলনে একাট্টা ঢাবি শিক্ষকরা
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:২৮
অর্থমন্ত্রণালয় কতৃক প্রত্যয় স্কিম প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন, পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের নেতৃত্বে একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের মোট ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ আন্দোলনে শামিল হয়েছে।
গতকাল দুপুরে ঘোষণাকৃত কর্মসূচির অংশ হিসেবে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষকেরা। এসময় সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি জানানো হয়। অবস্থান কর্মসূচিতে আন্দোলন নিয়ে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ওবাইদুল কাদেরের মধ্যকার কথোপকথনের বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
অর্থমন্ত্রণালয় কতৃক প্রত্যয় স্কিমের ব্যাখ্যাকে ভুল আখ্যা দিয়ে ঢাবি শিক্ষক সমিতির অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, অর্থমন্ত্রণালয় প্রত্যয় স্কিমের যে ব্যাখ্যা প্রদান করেছে, সে ব্যাখ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সন্তুষ্ট নন। প্রত্যয় স্কিম যে বৈষম্যমূলক সেটা একজন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারবে। আমরা তিন দফা দাবি জানিয়েছি। প্রত্যয় স্কিম’ বাতিল করতে হবে। এছাড়া আলাদা বেতন কাঠামো ও সুপারগ্রেড চালু করতে হবে। দাবিগুলো যদি মেনে নেওয়া না হয় তাহলে আমরা লাগাতার কর্মবিরতি চালিয়ে যাবো।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবাইদুল কাদের আমাদেরকে বৈঠকের আমন্ত্রণ করেছেন। তিনি আমাদের প্রশ্ন করেন প্রত্যয় স্কিমে আমাদের সমস্যা কি। আমি তার কাছে শিক্ষকদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি। তিনি বলেছেন, “আপনি সহ আরও দু-তিনজন শিক্ষকসহ সন্ধ্যায় আমার সাথে দেখা করেন। আমি বললাম, আমার শিক্ষক ফেডারেশন রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি রয়েছে। সংগঠনের সিন্ধান্ত ছাড়া আমি কোনো সিন্ধান্ত দিতে পারব না।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওয়াইদুল কাদের আজ কাল সকালে বৈঠকের সময় নির্ধারণ করেছে বলে জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি : প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলন নিয়ে করা এক মন্তব্যের জেরে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পদত্যাগ দাবি করেছেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
গতকাল বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা- কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
আন্দোলনকারীরা বলেন, এ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫ লাখ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করেছে। সেই ৩৫ লাখ গ্র্যাজুয়েটের মধ্যে অর্থমন্ত্রীও একজন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই গ্র্যাজুয়েট করেছেন। শুনেছি তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবেও জয়েন করেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫ লাখ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করেছে, তারা আমাদের গর্ব। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর মতো এমন ‘অথর্ব’ গ্র্যাজুয়েট দিয়ে আমরা কী করব? যারা শিক্ষকদের অধিকার কেড়ে নেয়।
সংগঠনটির নেতারা বলেন, এমন কোনো শক্তি নেই যে আমাদের এই আন্দোলন থামাতে পারে। অর্থমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি, আপনি প্রত্যয় স্কিম নামে আপনার যে একটা ভুয়া স্কিম আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন সেটি অবিলম্বে বাতিল করেন। দাবি না মানলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য (বিশ্ববিদ্যালয়ের) কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে আপনার পদচ্যুতি ঘটতে পারে।
রুয়েটে কর্মবিরতি পালন
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, পেনশনসংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল এবং ইউজিসির সুপারিশকৃত অভিন্ন নীতিমালায় ১২ দফা সংযোজনের দাবিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশনের ঘোষিত ১ থেকে ৪ জুলাই অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও ৭ জুলাই থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে গতকাল বুধবার রুয়েট ক্যাম্পাসে অর্ধ দিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন রুয়েট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।
শিক্ষকদের আন্দোলনে অচল ববি : এদিকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষকরা।
বুধবার (৩ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফ্লোরে এ কর্মবিরতি পালন করেন তারা। ফলে ববির ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাণচাঞ্চল্য হারিয়ে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিপাকে পড়া শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কর্মবিরতিতে শিক্ষকরা সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবি জানান। দাবি পূরণ না হলে এ আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন ববি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী।
শিক্ষার্থীরা জানান, ববিতে তিন দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এ কারণে তারা শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পরীক্ষাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন। তাই অবিলম্বে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলমান থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে সমাধান হবে বলে আশা করছি। কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থাশীল।
বাউবির ৫ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত
গাজীপুর প্রতিনিধি জানায়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ৫ জুলাই (শুক্রবার) তারিখের সব পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরীক্ষার তারিখ জানানো হবে। বিষয়টি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. আ ফ ম মেজবাহ উদ্দিন।
জবি প্রতিনিধি জানান, সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ফলে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম।
গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
শিক্ষকদের কর্মসূচির বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, আমরা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাথে সমন্বয় করে আন্দোলন করছি। আমরা পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত একইভাবে আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা সরকারের কাছে আমাদের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।
এদিন কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও। এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মো: আব্দুল কাদের (কাজী মনির) বলেন, আমরা আগামীকাল থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করব।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সর্বজনীন পেনশন থেকে মুক্ত করে প্রজ্ঞাপন বাতিলের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা