কোহলির ৭৬ রানে ভারতের সংগ্রহ ১৭৬
- জসিম উদ্দিন রানা
- ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০০:৫৯
ভারতের ১৭৬ রানের সংগ্রহ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে করা সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এর আগে ২০২১ আসরে সর্বোচ্চ ১৭৩ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। রান তাড়ার সেই ম্যাচটি ৮ উইকেটে জিতেছিল অসিরা। গতকালের সমীকরণটাও ছিল ওই রকম। নিজেদের প্রথম শিরোপা জিততে হলে তাই রেকর্ডই গড়তে হতো প্রোটিয়াদের। কিন্তু প্রোটিয়ারা অসিদের মতো হতে পারল না। দক্ষিন আফ্রিকার ক্লাসেন-স্টাবস-ডিককরা পারলেন না। ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানই করতে পারে তারা। প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপের কোন ইভেন্টে ফাইনালে উঠে শিরোপার কাছাকাছি গিয়েও দক্ষিন আফ্রিকাকে হার মানতে হলো ৭ রানে। তাতেই ১৭ বছরের বন্দনা পূরণ হলো ভারতীয়দের। দ্বিতীয় বারের মতো টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল রোহিত বাহিনী। আর আইসিসির কোনো ইভেন্ট জিতল ১১ বছর পর।
১৯ ওভারে ৬ উইকেটে ১৬১ রান ছিল প্রোটিয়াদের। জয়ের জন্য ৬ বলে দরকার ছিল ১৬ রান। হার্দিকের প্রথম বলে বাউন্ডারি থেকে সূর্যকুমার চমৎকার ক্যাচ নিয়ে ফেরালেন মিলারকে (১৭ বলে ২১ রান)। দ্বিতীয় বলে রাবাদা ৪ মারলেন। তৃতীয় বলে ১ রান। চতুর্থ বলেও ১ রান। পঞ্চম বল ওয়াইড। শেষ দুই বলে দরকার ছিল ৯ রান। পরের বলে রাবাদা আউট। ষষ্ঠ বলে ১ রান। তাতেই ৭ রানের জয় ভারতের। হাতের নাগালে থাকা শিরোপা ছোঁয়া হল না প্রোটিয়াদের।
কোহলি ফর্মটা হয়তো ফাইনালের জন্য জমিয়ে রেখেছিলেন। ফাইনালের আগে ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে পুরো আসরজুড়ে অফ-ফর্মে থাকা বিরাট কোহলিকে নিয়ে ঠিক এ কথাটাই বলেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ফাইনালে কোহলির ছন্দে ফেরার আশায় ছিলেন দলের প্রধান কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও। দলের অধিনায়ক ও কোচকে তাই মোটেও হতাশ করেননি। ঠিক ফর্মে ফিরলেন ফাইনালেই। প্রোটিয়া বোলারদের শুরুতে টপ-অর্ডারের বাকি ব্যাটাররা ব্যর্থ হলেও ইনিংসের ১৯তম ওভার পর্যন্ত টিকে ছিলেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত এই ডান হাতি তারকা ব্যাটারের ৭৬ ও অক্ষর প্যাটেলের ৪৭ রানের চড়ে ফাইনালে ৭ উইকেটে ১৭৬ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে ভারত।
সেমিফাইনাল পর্যন্ত আসরের ৭ ম্যাচে মিলে ১০.৭১ গড় এবং ১০০ স্ট্রাইক রেটে ৭৫ রান করেছিলেন কোহলি। সেই রান খরা কাটিয়ে ফাইনালে ৫৯ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় করলেন ৭৬ রান, যা আগের ৭ ম্যাচের রানের চেয়ে ১ বেশি। ১৫ বছর ধরে খেললে ফর্ম কোনো সমস্যাই নয়।
কেনসিংটন ওভালে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ ঝোড়ো পেয়েছিল ভারত। প্রথম ওভারেই স্কোর বোর্ডে ওঠে ১৫ রান। তবে দ্বিতীয় ওভারেই বড় ধাক্কা খায় ভারত। কেশভ মহারাজের জোড়া আঘাতে তিন বলের মধ্যেই সাজঘরে ফেরেন রোহিত ও পান্ত। পরে দলীয় ৩৪ রানের মাথায় চাপ বাড়িয়ে ফেরনে সূর্যকুমার যাদবও।
আসরের ফাইনালে এসে রানে ফেরার দিনে অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে শুরুর সেই চাপ সামলে নেন কোহলি। চতুর্থ উইকেটে গড়েন ৭২ রানের সময় উপযোগী জুটি। সেখানে অক্ষর ৩১ বলে ৪৭ রান করে ফিরলেও ছন্দে এগোতে থাকেন কোহলি। পরে দলীয় ১৬৩ রানের মাথায় জানসেনের বলে রাবাদার হাতে ক্যাচ এই ডান হাতি ব্যাটার। শেষে ১৬ বলে ২৭ রানের ক্যামিও খেলেন শিবাম দুবে। আর এতেই ১৭৬ রানের বিশ্বকাপের ফাইনালের রেকর্ড সংগ্রহে পৌঁছে যায় ভারত। প্রোটিয়াদের হয়ে সেখানে দু’টি করে উইকেট নেন মহারাজ ও নরকিয়া।
লক্ষ্যটা ১৭৭ রানের। টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। এতে প্রথম কোনো বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলতে রীতিমত রেকর্ডই গড়তে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার। তবে রান তাড়ার শুরুতেই বড় ধাক্কা খেল প্রোটিয়ারা। দলীয় ১২ রানের মাথায়ই হারিয়েছে ২ উইকেট। ইনিংসের প্রথম ওভারটা বেশ বুঝেশুনেই পার করেন দুই ওপেনার ডি কক ও হেনড্রিক্স। তবে দ্বিতীয় ওভারে জাসপ্রীত বুমরাহের দারুণ এক বলে বোল্ড হয়ে ফেরনে হেনড্রিক্স। এদিকে পরের ওভারেই প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে সাজঘরের রাস্তা দেখান আরেক পেসার আর্শদীপ সিং। সেই চাপ সামলে সময় নিয়ে হাত খুলে খেলতে শুরু করেন ডি কক-স্টাবস দু’জনই। তৃতীয় উইকেটে ডি ককের ৫৮ রানের জুটি সেই চাপ অনেকটাই নিয়েছে সামলে। সেখানে স্টাবস ৩১ রানে ফিরলেও ডি কক এগোচ্ছে পিচে থিতু হয়ে।
১২ ওভারে ৩ উইকেটে ১০১ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জয়ের জন্য তাই ৪৮ বলে প্রোটিয়াদের প্রয়োজন ৭৬ রান। আধুনিক টি-২০ বিবেচনায় যা সহজের কাতারে থাকলেও আসরের অন্যতম বোলিং বিভাগের শক্তিশালী দল ভারতের সামনে সেটি অতটাও সহজ হয়নি। মাঝের ইনিংসে লড়াইটা চলেছে সমানে-সমান।
১৩তম ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে জ্যাকস ক্যালিসকে (২৩৮ রান, ২০০৯ সালে) ছাড়িয়ে এক বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন কুইন্টন ডি কক। পরের বলে চার মারেন। একই শট খেলতে গিয়ে কুলদীপ যাদবের ক্যাচ হন তিনি। ৩১ বলে ৩৯ রান করে আর্শদীপ সিংয়ের কাছে উইকেট হারালেন ডি কক। ১০৬ রানে চার উইকেট পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
এরপর এনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার ঝড় তোলেন। ১৪তম ওভারে কুলদীপ যাদবের ৬ বলে ১৫ রান যোগ করেন। পরের ওভারে অক্ষর প্যাটেল ২৪ রান দেন। ক্লাসেন ২৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন। ১৬ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫১ রান দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৭তম ওভারে ব্রেকথ্রু আনলেন হার্দিক পান্ডিয়া। লক্ষ্য থেকে ২৬ রান দূরে থাকতে আউট হন ক্লাসেন। ঠিক তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় প্রোটিযারা। ২৭ বলে ২ চার ও ৫ ছয়ে ৫২ রান করেন। ডেভিড মিলারের সঙ্গে তার জুটি ছিল ২২ বলে ৪৫ রানের।
শেষ ৩ ওভারে ২২ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। যশপ্রীত বুমরাহ বল হাতে নিয়ে দারুণ বোলিংয়ে মার্কো জানসেনকে বোল্ড করে ভারতকে লড়াইয়ে ফেরালেন। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৬ রানের। সেটি নিতে ব্যার্থ প্রোটিয়া ব্যাটাররা। হার্দিকের ওই ওভারে ৮ রানই নিতে পারে রাবাদারা। ফলে ৭ রানের জয়ে ১৭ বছর পর দ্বিতীয় শিরোপা পেল ভারত। হার্দিক ৩টি, আরশদীপ ও বুমরাহ দু’টি করে, অক্ষর একটি উইকেট পান।
ভারত : ১৭৬/৭
দক্ষিন আফ্রিকা : ১৬৯/৮
ফল : ভারত ৭ রানে জয়ী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা