১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সংসদে জি এম কাদের

অর্থনীতি সঙ্কটে ও নিম্নগামী, বাজেট গতানুগতিক

-

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সঙ্কটজনক। আমাদের অর্থনীতি প্রতিদিন এখনো নিম্নগামী। এমন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট গতানুগতিক বলে মন্তব্য করেছেন। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অর্থনীতিতে চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না দেয়ার প্রস্তাব করে তিনি পাশাপাশি দিতে হলেও কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করার বিধান রাখা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারীর প্রকোপ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি কারণে সারা বিশ্বে বড় ধরনের অর্থনেতিক মন্দার ধাক্কা লেগেছিল। ধীরে ধীরে প্রায় দেশই এর থেকে উত্তরণে সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশ উত্তরণের পথে অগ্রসরমান। কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। আমাদের অর্থনীতি প্রতিদিন নিম্নগামী। উত্তরণ তো দূরের কথা অধঃপতন ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে।
সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে অস্থির চিত্র তার কিছু কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি, টাকার বিনিময় হারের পতন, সীমিত রফতানি প্রবৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, উচ্চ নন-পারফরমিং ঋণ, সরকারের সঙ্কুচিত আর্থিক ক্ষমতা, এডিপি ব্যয়ের হ্রাস, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণের ওপর অতি নির্ভরশীলতা, বিদেশী বিনিয়োগের পতন, বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস বড় কারণ।
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট একটি গতানুগতিক বাজেট উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর আগের ৪-৫ বছরের বাজেটে যে ধরনের ধ্যান ধারণার ওপর ও যে প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল, যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল মোটামুটি সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এ বছরের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বেশি সঙ্কটময় বলা যায়। যেটা আগেই বলেছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে কম বেশি অর্থনৈতিক মন্দা ও যা থেকে প্রায় দেশই উত্তরণের পথে। কিন্তু আমাদের ক্রমাবনতি চলমান। সে পরিপ্রেক্ষিতে, আমাদের দেশের চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী কোন দিক নির্দেশনা বা উদ্যোগ এ বাজেটে লক্ষ করা যায় না। সবগুলো না হলেও কিছু কিছু সমস্যা বাজেটে চিহ্নত করার প্রয়াস লক্ষ করা গেছে। কিন্তু বাজেট প্রণয়নে বরাদ্দ, রাজস্ব আহরণে যে কর প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে করে চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধানের পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘাড়ে এটি এক বড় বোঝা। সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে এটা বাধা সৃষ্টি করবে।
ব্যাংক ঋণনির্ভর বাজেট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের যে খারাপ অবস্থা তার প্রধান কারণ খেলাপি ঋণ। এ বিষয়ে অতিসম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক ঋণ খেলাপি হওয়ার আগের ধাপ ওভারভিউ বা মেয়াদোত্তীর্ণ। আর চলতি ২০২৪ সালের মার্চে খেলাপি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণ ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। খেলাপি হিসাবে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত বিতরণকৃত মোট ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে বিতরণকৃত ঋণের ২৬.৮০ শতাংশ খেলাপি ঋণ।
কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ী যারা বিপুল অঙ্কের আয়কর ফাঁকি দেন, তারা ভুল করে কর ঠিক মত দেননি, এটা সম্পূর্ণ ভুল। ভুল করে যারা আয়কর দেন না তারা ধরা পড়েন ও খেসারত দেন। যারা ইচ্ছা করে আয়কর ফাঁকি দেন তারা হিসাব-নিকাশ করেই তা করেন ও সে জন্যই তারা ধরা পড়েন না। তিনি বলেন, সমস্যা হলো, স্বাভাবিকভাবে বৈধ আয়ের ওপর করের হার বিভিন্ন স্তরে ভিন্নতর করলেও সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ, সেখানে অবৈধ আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিলেই বৈধ হওয়া যেমন অনৈতিক তেমন যুক্তিসঙ্গত নয়। যার জন্য খোড়া যুক্তি দিতে হয়। তিনি বলেন, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ খুব বেশি অঙ্কের রাজস্ব আসে না। কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগ তেমন কেউ গ্রহণ করবে না। আর রাজস্ব আদায়ে বেশি কোনো ভূমিকা রাখবে না এ ধারণা বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের হলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম হতে পারেও বলে ধারণা করি। এবারের আইনে ব্যাপকভাবে অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি পরিমাণে দায়মুক্তি দিয়ে সবধরনের আইনের আওতামুক্ত করা হয়েছে অবৈধ আয়কে। ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। এ ধরনের ঢালাওভাবে অবৈধ কাজকে দায়মুক্তি দিয়ে আইনসিদ্ধ আগে কখনো করা হয়নি।
বিরোধী দলের নেতা বলেন, আর দ্বিতীয় কারণ হলো, অসৎ ব্যক্তিবর্গ সরকার পরিবর্তনের ভয়ে নিজের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে সাহস করত না। পরবর্তী সরকার আসলে সমস্যা হতে পারে এ আশঙ্কা ছিল। এখনকার নির্বাচনী ব্যবস্থায় সরকারি দল ও তাদের পছন্দমতো মানুষেরা জয়লাভ করে সরকার গঠন করে চলেছেন। ফলে, সরকার পরিবর্তনের কোনো আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে না। তবে সাধারণত কালো টাকার মালিকরা অবৈধ অর্থের মুনাফা চান না, তারা তাদের অর্থের নিরাপত্তা চান। এভাবে দায়মুক্তি দিলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে। এর মাধ্যমে দুর্নীতির যে দুষ্টচক্র সৃষ্টি হবে তা থেকে ভবিষ্যতে উদ্ধার পাওয়া কঠিন হবে। এভাবে চলতে থাকলে অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যাবে না। ফলে, অর্থনীতিতে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিদ্যমান সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে বলা যায়। অবৈধ অর্থ অর্থাৎ কালো টাকাকে বৈধ বা সাদা করার সুযোগ না দেয়ার প্রস্তাব করছি। দিতে হলেও অন্তত ন্যায়বিচারের স্বার্থে ৩০ শতাংশের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কর দিয়ে অবৈধ অর্থ বৈধ করার বিধান রাখা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় একদিনে আরো ৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করল ইসরাইল ৬ বছর পর রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন খালেদা জিয়া রৌমারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধ নিহত কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের সভাপতি আশরাফ, সম্পাদক আল আমিন ইসরাইলি পাইলটদের যুদ্ধবিমান না চালানোর আহ্বান সাবেক আইন কর্মকর্তার আমতলীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মা নিহত, ছেলে-মেয়েসহ আহত ৬ এবার ব্রিটিশ ব্যাংকে ‘ফ্রিজ’ করা হলো বাশারের ৫৫ মিলিয়ন পাউন্ড নোয়াখালীতে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত বিজয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ গোয়ালন্দে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত কোম্পানীগঞ্জের দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, আহত অর্ধশতাধিক

সকল





up