১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হিজবুল্লাহর পক্ষে লড়তে প্রস্তুত লেবাননের ফিলিস্তিনিরা

-

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের ধ্বংসলীলা দেখে ক্ষুব্ধ লেবাননের ফিলিস্তিনিরা। তাই গাজার মতো লেবাননেও ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করলে দেশটির বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর সাথে লড়াই করতে প্রস্তুত রয়েছে তারা। সম্প্রতি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলের সর্বাত্মক হামলার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে লেবাননের শরণার্থী শিবিরে বেশ কয়েকজন শরণার্থী আলজাজিরাকে এই কথা জানিয়েছে।
অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই ইসরাইলের সঙ্গে লেবাননের সীমান্তে নিয়মিত গুলিবিনিময় করছে হিজবুল্লাহ। তারা বারবার বলেছে, গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধ হলে তবেই সীমান্তে হামলা বন্ধ করবে তারা। বৈরুতে শাতিলা ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে শরণার্থীদের সাথে কথা বলেছে আলজাজিরা। প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেক মানুষ সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, তারা ভীত নন এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য প্রতিরোধ্য যোদ্ধাদের সাথে মিলে লড়বেন। তবে তাদের মনে পরিবার ও বেসামরিকদের নিয়ে ভয় কাজ করছে। তারা আশঙ্কা করছে, গাজার মতো লেবাননের ঘন জনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরেও হামলা চালাবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। শাতিলায় পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন- জেনারেল কমান্ডের (পিএফএলপি-জিসি) সদস্য আহেদ মাহার বলেছেন, ‘ইসরাইলি সেনাদের কোনো নৈতিকতা নেই। তারা মানবাধিকার মানে না এবং শিশুদের অধিকারের কথাও বিবেচনা করে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইসরাইলি সেনাবাহিনী শুধু প্রতিশোধ নিতে জানে।’
শাতালিয়াতে বড় হওয়া ২৯ বছর বয়সী আবু আলি আলজাজিরাকে বলেছেন, ১৯৪৮ সালের নাকবার সময় ফিলিস্তিন থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি লেবাননের ১২টি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন থেকেই তাদের মনে নিজ দেশে ফিরে যাওযার আকুতি রয়েছে।
আলজাজিরাকে তিনি বলছিলেন, লেবাননে যদি বড় ধরনের কোনো যুদ্ধ হয় তবে তিনি ও তার মা প্রয়োজনীয় কিছু বস্তু নিয়ে ইসরাইল-লেবানন সীমান্তের দিকে ছুটে যাবেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, যুদ্ধ হলে অসংখ্য ফিলিস্তিনি একবার হলেও ফিলিস্তিনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করবে।’ আবু আলি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, যুদ্ধ শুরু হলে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে বোমা ফেলবে ইসরাইল এবং তারা এই বলে নিজেদের পক্ষে সাফাই দেবে যে, সেখানে প্রতিরোধ যোদ্ধারা ছিল, যেমনটা তারা গাজায় করেছিল।
লেবাননে ফিলিস্তিনিরা আইনি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে এবং দরিদ্রতার মধ্যে বসবাস করছে উল্লেখ করে আবু আলি বলেন, লেবাননে ফিলিস্তিনিদের শরণার্থী শিবিরগুলো ধ্বংস হয়ে গেলে রাষ্ট্রহীন শরণার্থীদের নিজ দেশ ফিলিস্তিনে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। আলজাজিরাকে নিজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি হয় ফিলিস্তিন নয় ইউরোপে যেতে পারব। তবে ইউরোপে যেতে হলে আমাকে ১০ থেকে ১২ হাজার ডলার পাচারকারীদের দিতে হবে- এটি কখনোই সম্ভব না।’
লেবাননের বৈরুতের শাতিলা ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে প্রতিরোধ আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেক ফিলিস্তিনি আলজাজিরাকে বলেছে যে, তারা ভয় পায় না। ইসরাইলের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে হিজবুল্লাহর সাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে লড়াই করতে প্রস্তুত রয়েছে তারা। তবে লেবাননে আশ্রয় নেয়া ফিলিস্তিনিরা তাদের পরিবারের নারী এবং শিশুদের নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছে, ইসরাইল আমাদের এই ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে, এখানে আমাদের নারী ও শিশুরা রয়েছে।
বৈরুতের ওই শরণার্থী শিবিরে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। শাতিলায় পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইনের কমান্ডের সদস্য আহেদ মাহার বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনীর কোনো নৈতিকতা নেই। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তারা শিশুদের অধিকার বিবেচনা করছে না।
লেবাননজুড়ে মোট ১২টি শরণার্থী শিবিরে মোট দুই লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসরাইলি বাহিনী ১৯৪৮ সালে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, এরপর থেকে বিভিন্ন সময় এসব ফিলিস্তিনি লেবাননের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেন। ১৯৪৮ সালের ওই সময়টাকে ‘নাকবা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয় যার অর্থ ‘বিপর্যয়’।
ইসরাইল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধ আগের চেয়ে বিপজ্জনক হতে পারে : ইসরাইলের হার্জলিয়ার রাইখম্যান ইউনিভার্সিটির এক সম্মেলনে গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) দেশটির যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য বেনি গ্যান্টজ ঘোষণা করেছিলেন, ‘লেবাননকে পুরোপুরি অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারি আমরা এবং দিনের মধ্যেই কেড়ে নিতে পারি হিজবুল্লাহর ক্ষমতা।’
লেবানন ও হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার পর বিশিষ্ট এক ইসরাইলি ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে সর্বশেষ হুমকি ছিল এটি। লেবাননকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করা ইসরাইলের পক্ষে কঠিন কিছু হবে না। কেননা, কয়েক দশকের অব্যবস্থাপনা ও অর্থনৈতিক পতনের কারণে দেশটির বৈদ্যুতিক লাইনব্যবস্থা ইতোমধ্যেই বিকল হয়ে পড়েছে। এটি কোনোমতে কাজ করছে। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট বিমান হামলা সহজেই এটিকে শেষ করে দিতে পারে।
উচ্চ প্রশিক্ষিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ : অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও যুদ্ধের ময়দানে হিজবুল্লাহ সম্ভবত ৪০ থেকে ৫০ হাজার যোদ্ধা নামাতে সক্ষম। নাসরুল্লাহ সম্প্রতি এই সংখ্যা এক লাখেরও বেশি বলে দাবি করেছেন। এই যোদ্ধাদের মধ্যে অনেকেরই সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে শাসক বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। অন্য অনেক গেরিলা গোষ্ঠীর মতো নয় হিজবুল্লাহ। একটি যোদ্ধা বাহিনী হিসেবে তারা উচ্চ প্রশিক্ষিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ। এই রিপোর্টের সংবাদদাতার অভিজ্ঞতায়, ২০০৬ সালের যুদ্ধের সময় হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মুখোমুখি হওয়া বিরল ঘটনা ছিল।
তার অভিজ্ঞতা নিয়ে সিএনএনের খবরে বলা হয়, ‘এক দিন আমরা দক্ষিণ লেবাননের একটি গ্রামের ধ্বংসাবশেষে তাদের বেশ কয়েকজন যোদ্ধার দেখা পাই। তারা ছিল বিনয়ী তবে দৃঢ়। আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য জোর দিয়েছিল। জবাবে না শুনতে চায়নি তারা। গাজার মতো লেবাননের চারপাশও শত্রু প্রতিবেশী দিয়ে ঘেরা নয়। দেশটির গভীর কৌশলগত সুবিধা রয়েছে। সিরিয়া ও ইরাকে লেবাননের মিত্র সরকার দেশটিকে সরাসরি ইরানে প্রবেশের অনুমতি দেয়। কয়েক বছর ধরে সিরিয়ায় লক্ষ্যবস্তুতে নিয়মিতভাবে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। দেশটি মনে করে, দেশটি হিজবুল্লাহর অস্ত্রকে নিজ ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে পরিবহনের অনুমতি দেয়। একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষই অপরপক্ষকে উল্লেখযোগ্যভাবে আঘাত করতে সক্ষম হবে। হিজবুল্লাহর অস্ত্রের সক্ষমতা ইসরাইলের সাথে একটি যুদ্ধে পারস্পরিক নিশ্চিত ধ্বংস ঘটাতে না পারলেও উভয় দেশে যথেষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাবে। আর সে ক্ষয়ক্ষতির ভার বহন করা উভয় পক্ষের জন্যই ভারী হয়ে পড়বে।
ইসরাইলকে সতর্কবার্তা যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানির : ইসরাইলকে সতর্ক করেছে দুই মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও তুরস্ক সবাই ইসরাইলের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বার্লিন ও ওয়াশিংটন জানিয়েছে, যুদ্ধ আরো প্রসারিত হলে, তার ফল কী হবে, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ে সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, ‘যুদ্ধের পরিধি ও তীব্রতা বাড়লে তার ফল মারাত্মক হবে। আমি এটাকে ফ্ল্যাশ পয়েন্ট হিসেবে দেখছি। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক বুধবার বলেছেন, আরেকটি যুদ্ধ মানে আঞ্চলিক সঙ্ঘাতের সম্ভাবনা অভাবনীয়ভাবে বেড়ে যাওয়া। বেয়ারবক মঙ্গলবার ইসরাইল ও লেবাননের নেতাদের সাথে দেখাও করেছেন। তিনি সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে যুদ্ধ হলে বিপদ বাড়বে। বেয়ারবক জানিয়েছেন, এই যুদ্ধ যাতে না হয়, সেটা আমাদের দেখতে হবে। এখনই দুই দেশের মধ্যে আক্রমণ বাড়ছে। দুই দেশেরই মানুষের বড় অংশ যুদ্ধ চান না। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর বলেছেন, ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে আরেকটি যুদ্ধ মানে তা আঞ্চলিক যুদ্ধের আকার নেবে। কূটনৈতিক পথেই এই উত্তেজনা কমাতে হবে।
লেবাননের পাশে থাকবে তুরস্ক : লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনায় ইসরাইলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করা থেকে দূরে থাকার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। তিনি বলেছেন, ইসরাইল লেবাননের সাথে যুদ্ধে জড়ালে তুরস্ক বৈরুতের পাশে থাকবে। এই ধরনের যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। রয়টার্স জানায়, এরদোগান বুধবার পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। পার্লামেন্টে একে পার্টির সভায় এরদোগান বলেন, ইসরাইলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন লেবাননের দিকে নজর দিয়েছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি পর্দার আড়ালে থাকা পশ্চিমা শক্তিগুলো ইসরাইলকে পিঠ চাপড়াচ্ছে, এমনকি যুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে। এরদোগান বলেন, নেতানিয়াহু মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করছেন এবং এই ধরনের পরিকল্পনা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে। নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন, গাজায় এখন সবচেয়ে জটিল অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এবং এরপর সেনাদেরকে উত্তর সীমান্তে মোতায়েন করা হবে। এর কয়েকদিন আগে ইসরাইলের বর্বর সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, লেবাননের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়েছে। ইসরাইলের এই ঘোষণার পর হিজবুল্লাহ মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইহুদিবাদীরা জানে এ ধরনের যুদ্ধের পরিণতি কী এবং তাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে। তিনি আরো বলেন, ইসরাইল যদি লেবাননের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায় তাহলে বিশ্ব মানচিত্রে ইসরাইল নামে কোনো দেশ থাকবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
২৩ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে বেক্সিমকোর দায়-দেনা ৫০৫০০ কোটি টাকা দোয়ারাবাজারে ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেফতার এবার আমন সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে : খাদ্য উপদেষ্টা কুলাউড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪ আ‘লীগ নেতা গ্রেফতার সোমবার যেসব এলাকায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না হাবে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তা পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধা পাবেন দেওয়ানগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় গৃহবধু নিহত মদিনা রুটে ফ্লাইট বাড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ চৌদ্দগ্রামে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩ ভারতের বিভিন্ন মসজিদে সমীক্ষা নিয়ে মোদিকে তুলোধুনো ওয়াইসির

সকল