আফগানদের থামিয়ে প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা
- ক্রীড়া প্রতিবেদক
- ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০৫
বোলারদের হাত ধরে প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপে কোনো ফরম্যাটের ফাইনালে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে ও টি-২০ বিশ্বকাপ মিলিয়ে মোট সাতবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়ে ‘চোকার্স’ খ্যাতি পেয়েছিল প্রোটিয়ারা। ১৯৯৮ সালের পর আইসিসির কোনো ইভেন্টে এই প্রথম ফাইনালে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতেছিল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর আইসিসির ১০টি ইভেন্টের সেমিতে উঠলেও ফাইনালে পৌঁছানো হচ্ছিল না তাদের। অবশেষে সেমির হারের সেই ‘চোকার্স’ তকমা ছাপিয়ে ১১তম বারের চেষ্টায় সফল মার্করাম-ক্লাসেনরা। সে সাথে থেমে গেল আফগানিস্তানের স্বপ্নের মিশন। প্রথম বিশ্বকাপের সেমিতে খেলা এশিয়ান দেশটি সেটাকে প্রথম ফাইনালে পরিণত করতেন পারলেন না ব্যাটিং ব্যর্থতায়।
২৪০ বলের ম্যাচ শেষ স্রেফ ১২৪ বলে। সেটিও আবার টি-২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মঞ্চে। বিশ্বকাপের নবম আসরের প্রথম সেমিতে প্রোটিয়াদের সামনে স্রেফ ৫৭ রানের লক্ষ্য দেয় আফগানরা। মামুলি সেই লক্ষ্য ৯ উইকেট হাতে রেখেই ৮ ওভার ৫ বলে তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৯ উইকেটের দাপুটে এই জয় দিয়ে ২৬ বছর পর আইসিসি কোনো ইভেন্টে ফাইনালে পৌঁছাল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবং টি-২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে এই ‘প্রথম’। বল বিবেচনায় টি-২০তে এটিই সবচেয়ে বড় জয় দক্ষিণ আফ্রিকার। আগামীকাল ব্রিজটাউনে রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা।
মামুলি সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অবশ্য শুরুতেই ধাক্কা খায় প্রোটিয়ারা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ৫ রানের মাথায় ওপেনার কুইন্টন ডি কককে ফেরান ফজলহক ফারুকি। তবে এরপর আর কোনো বিপত্তি আসতে দেয় প্রোটিয়া ব্যাটাররা। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আফগানিস্তানের বাঁ হাতি পেসার ফারুকির বলে বোল্ড হন ৫ রান করা ওপেনার কুইন্টন ডি কক। এই উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ ১৭ শিকারের রেকর্ড গড়েছেন ফারুকি। এর আগে ২০২১ সালের আসরে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা।
তৃতীয় ওভারে নাভিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। কিন্তু বল মার্করামের ব্যাটে লেগেছে কি না, সেটি নিশ্চিত না হতে পারায় রিভিউ নেয়নি আফগানিস্তান। পরে রিপ্লেতে দেখা যায় মার্করামের ব্যাট ছুঁয়ে বল জমা পড়ে গুরবাজের গ্লাভসে। দ্বিতীয় উইকেটে রিজা হেনড্রিক্স ও অধিনায়ক এইডেন মার্করামের অপরাজিত ৫৫ রানের জুটিতে ৮ ওভার ৫ বলেই লক্ষ্য ছাড়িয়ে ৬০ রান তুলে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এতেই নিজেদের স্বপ্নের বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রথমবারের মতো উঠে যায় মার্করাম-শামসিরা। সর্বোচ্চ ২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন হেনড্রিক্স, এ দিকে মার্করাম করেন ২৩ রান।
এ দিকে এর আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই রানে খাতা না খোলা রহমানউল্লাহ গুরবাজকে সাজঘরে ফেরান ইয়ানসেন। খালি হাতে ফিরলেও আসরজুড়ে ছন্দে থাকা এই ব্যাটারই এখন পর্যন্ত আছেন আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার শীর্ষে। ৮ ম্যাচে ৩৫.১২ গড়ে তার ব্যাটে আসে ২৮১ রান। এ দিকে সর্বোচ্চ উইকেটের শীর্ষস্থানটাও আপাতত আফগানদের দলে। ৮ ম্যাচে ফারুকি নিয়েছেন ১৭ উইকেট।
গুরবাজের উইকেটের পর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে আফগানরা। বাকি ব্যাটারদের কেউই আর ধরতে পারেননি ম্যাচের হাল। এমনকি ব্যক্তিগত দুই অঙ্কের ইনিংস এসেছে কেবল আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের (১০) ব্যাটে। শেষ পর্যন্ত ১১ ওভার ৫ বলে আফগানদের সংগ্রহ থামে ৫৬ রানে। টি-২০তে এটিই আফগানদের সর্বনিম্ন স্কোর। প্রোটিয়াদের হয়ে ৩ ওভার বল করে ১৬ রান খরচে ৩ উইকেট নেন জানসেন। এতে জেতেন ম্যাচসেরার খেতাবও। এদিকে ১ ওভার ৫ বলে স্রেফ ৬ রান দিয়ে সমান ৩ উইকেট নিয়েছেন শামসিও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
আফগানিস্তান : ১১.৫ ওভারে ৫৬/১০ (ওমারজাই ১০, নাইব ৯, অতিরিক্ত ১৩, জানসেন ৩/১৬, শামসি ৩/৬)।
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৮.৫ ওভারে ৬০/১ (হেনড্রিক্স ২৯*, মার্করাম ২৩*, ফারুকি ১/১১)।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মার্কো জানসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা