১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বগুড়ায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি পলায়ন

তিন রক্ষী সাসপেন্ড ২ জনকে শোকজ

-

বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে ফাঁসির চার আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় প্রধান কারারক্ষীসহ তিনজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অপর দুই কারারক্ষীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া ব্যক্তিরা হলেন প্রধান কারারক্ষী দুলাল হোসেন, হাবিলদার আব্দুল মতিন এবং কারারক্ষী আরিফুল ইসলাম। এছাড়া কারারক্ষী ফরিদুল ইসলাম ও কারারক্ষী হোসেনুজ্জামানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া জেল সুপার আনোয়ার হোসেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে সেলের ছাদ ফুটো করে বিভিন্ন চাদরকে রশি হিসেবে ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ রাত ৪টা ১০ মিনিটের দিকে কিছুটা দূরে চেলোপাড়া চাষীবাজার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার কয়েদি হলেন- কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা এলাকার নজরুল ইসলাম ওরফে মজনু, নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি এলাকার আমির হোসেন, বগুড়ার কাহালু পৌরসভার মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে মো: জাকারিয়া এবং বগুড়া সদরের কুটুরবাড়ি পশ্চিমপাড়া এলাকার ফরিদ শেখ। এ ঘটনায় গত বুধবার বগুড়া জেলা প্রশাসকের গঠিত ছয় সদস্যের এবং অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক শেখ সুজাউর রহমান সুজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। একই সাথে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জেলার ফরিদুল ইসলাম রুবেল বুধবার ওই চার কয়েদির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে কুড়িগ্রামের নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ও নরসিংদীর আমির হামজা ফোর মার্ডার মামলার ফাঁসির আসামি। এ ছাড়া বগুড়ার কাহালু উপজেলার জাকারিয়া ২০১২ সালে কাহালু উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র নাইমুর ইসলাম নাইমের হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি।
বগুড়া সদর ফাঁড়ির এসআই খোরশেদ আলম বলেছেন, ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ওই চার কয়েদি এক মাস আগে থেকে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুয়ায়ী তারা নিজেদের সংগ্রহে থাকা একটি স্টিলের পাত ও ভাঙ্গা স্ক্রু ডাইভার দিয়ে সেলের ছাদ ফুটো করতে থাকে। চুন ও সুরকির ছাদটি অনেক পুরোনা। এটি ব্রিটিশ আমলে ১৮৩৩ সালে নির্মিত। প্রতিদিন তারা স্টিলের পাত ও স্ক্রু ডাইভার দিয়ে একটু একটু ছাদ ফুটো করতে থাকে। প্রতিদিন যে ধুলোবালি হয় তারা তা নিজেরাই পরিষ্কার করে। কেউ পরিষ্কার করতে এলে বলে কোনো আবর্জনা নেই। এভাবে তারা ছাদ কেটে গভীর করে সুড়ঙ্গ তৈরি করে। এরপর ওই সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে আসে। এরপর বিছানা কাপড় ও চাঁদর বেঁধে দড়ি বানিয়ে প্রাচীর টপকে পালিয়ে যায়। তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন তথ্য পেয়েছেন বলে এস আই খোরশেদ জানান। সেই সাথে ওই স্টিলের পাত, দড়ি ও স্ক্র ড্রাইভার জব্দ করা হয়েছে।
বগুড়া কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাজুক। তার প্রমাণ হলো ওই চার আসামির পলায়ন। কারাগারজুড়ে নিরাপত্তার জন্য কারা প্রহরীরা থাকেন। কিন্তু তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় ওই চার কয়েদির পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
কারাগারে কনডেম সেলে তাদের পরনে কয়েদির পোশাক পরে থাকার কথা। কিন্তু পালানোর পর দেখা গেছে শুধু একজন ছাড়া অন্যদের পরনে কয়েদির পোশাক ছিল না। তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা সাধারণ পোশাক পরে চলে যায়। বাইরে ধরা পড়ার ভয়ে তারা এই পোশাক পরিবর্তন করতে পারে বলে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা।
এই চার কয়েদি পালিয়ে যেতে কেউ সহযোগিতা করতে পারে বলে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার ধারণা। তারা বলেন, শুধু স্টিলের পাত ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ছাদ ফুটো করে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে ড্রিল মেশিন, বিদ্যুৎ সংযোগ ও কেবল দরকার হতে পারে। এছাড়া ছাদ ফুটো করার সময় শব্দ হওয়ার কথা। কিন্তু কেউ শব্দ শুনলো না, বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
গ্রেফতার হওয়ার পর যখন ওই ফাঁসির আসামিদের ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। তখন তারা কারাগারের দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকদের কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ এ সময় তাদের কিছু বলতে দেয়নি। অনেকে বলছেন, কারাগারে অনেক দুর্নীতি হয়, নির্যাতন করা হয় তারা হয়তো সে বিষয়ে বলতে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্ধর্ষ আসামি হওয়ার কারণ দেখিয়ে তাদের সেই সুযোগ দেয়া হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement