সমাবেশে বিপুল সমাগম ঘটিয়ে সরকারকে চাপ দিতে চায় বিএনপি
- মঈন উদ্দিন খান
- ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ২৮ জুন ২০২৪, ০৫:৪০
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামীকাল ঢাকায় বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের পর রাজপথে এটি দলটির সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। সমাবেশে বিপুল জনসমাগম ঘটিয়ে সরকারকে চাপ দিতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে নানামুখী প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগরে কমিটি না থাকলেও বিলুপ্ত কমিটির নেতাদেরই সমাবেশ সফলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পদপ্রত্যাশী নেতারাও পৃথকভাবে শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলটির অন্যান্য ইউনিটও নিচ্ছে জোর প্রস্তুতি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সমাবেশে বিপুল উপস্থিতি ঘটানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ের যেকোনো সমাবেশের জেরে এটি বড় সমাবেশ হবে। কমিটি ভেঙে দেয়া হলেও এর কোনো প্রভাব সমাবেশে পড়বে না, বরং দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির এই সমাবেশ সফলে প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্ত কাজ করছে।
জানা গেছে, সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা। একই সাথে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের নতুন কমিটি গঠনকে সামনে রেখে সমাবেশকে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্র হিসেবেও বিবেচনা করছে দলটির হাইকমান্ড। এর মধ্য দিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতাদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করা হবে।
সরকারবিরোধী বিগত আন্দোলনের মূল্যায়নের ভিত্তিতে ঘুরে দাঁড়াতে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গত ১৩ জুন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সঙ্গে কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। সংশ্লিষ্টদের ধারণা ছিল, ঈদুল আজহার আগে কিংবা ঈদের পরপরই সেখানে নতুন কমিটি দেয়া হবে। কিন্তু ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও সেখানে কমিটি দেয়া হয়নি। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, ঢাকায় সমাবেশের পর এসব ইউনিটে নতুন কমিটি দেয়া হতে পারে।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন তিনি। ওই সময় আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী মানববন্ধন, অবস্থান, গণঅনশন, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ সমাবেশ, সমাবেশসহ নানান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। পরে করোনা মহামারীকালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাময়িক স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। কারামুক্তির পর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকছেন শারীরিকভাবে অসুস্থ খালেদা জিয়া। এমন অবস্থায় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২১ জুন গভীর রাতে খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হওয়ায় মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়।
নতুন করে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের এই অবনতিতে গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় চেয়ারপারসনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার রাজধানী ঢাকায়, ১ জুলাই সব মহানগর এবং ৩ জুলাই সব জেলা শহরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তিসহ সব রাজবন্দীর মুক্তির দাবিতে সর্বশেষ গত ১০ মে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও মিছিল করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। তবে ওই সমাবেশে খুব কম সংখ্যক উপস্থিতি ছিল। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যানারে আগামীকাল ঢাকায় নির্বাচনের পর সবচেয়ে বড় সমাবেশ করতে চায় দলটি। জানা গেছে, ঢাকার এই সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। সমাবেশ বাস্তবায়নে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে প্রধান সমন্বয়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া দলের সিনিয়র নেতারাও সমাবেশ সফলে কাজ করছেন।
সমাবেশে বড় ধরনের শোডাউন ঘটাতে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির সমাবেশের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সদ্য বিলুপ্ত দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, নতুন কমিটি সামনে রেখে এই সমাবেশ দিয়ে দলের পক্ষ থেকে পদপ্রত্যাশী নেতাদের পারফরম্যান্স যাচাই করা হবে। জানা গেছে, নতুন কমিটিকেন্দ্রিক আবহ থাকায় বিষয়টি মাথায় রেখে নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশে আলাদাভাবে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। এ ছাড়া কর্মসূচিতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা ও মহানগরগুলো থেকেও বিএনপির নেতাকর্মীরা আসবেন। অংশ নেবেন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। ছাত্রদলের সদ্যঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিকেও সমাবেশে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিতের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ দিকে সমাবেশ সফলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে যৌথসভা করেছেন। প্রস্তুতি সভা করেছে সংগঠনের অন্যান্য ইউনিটগুলোও।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্যসচিব আমিনুল হক বলেন, বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন গণতন্ত্রের প্রতীক। তাকে মুক্ত করার অর্থ প্রাথমিকভাবে গণতন্ত্র মুক্ত করার মতোই। ফলে বেগম জিয়ার মুক্তির সাথে গণতন্ত্রের মুক্তির বিষয়টিও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এমন প্রেক্ষাপটে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সমাবেশ সফলে দলের প্রতিটি নেতাকর্মী বদ্ধপরিকর। মহানগর উত্তর বিএনপির বিলুপ্তকৃত কমিটির পাশাপাশি অধীন থানা ও ওয়ার্ড পর্যন্ত প্রস্তুতি চলছে।
এ দিকে ঢাকার বাইরে মহানগর ও জেলা শহরে অনুষ্ঠেয় সমাবেশের কর্মসূচি বাস্তবায়নেও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। জানা গেছে, ঢাকার পাশাপাশি এসব সমাবেশও বড় পরিসরে পালনে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা