মংলা মিরসরাইয়ে দ্রুত ইপিজেড চালু করতে চায় দিল্লি
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
মংলা ও মিরসরাইয়ে ভারতকে বাংলাদেশের দেয়া দু’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) কার্যক্রম দ্রুত চালু করতে চেয়েছে দিল্লি। পাশাপাশি নতুন সীমান্ত-হাট খোলা, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য সুবিধা, সড়ক, রেল, বিমান এবং সামুদ্রিক যোগাযোগের উন্নতি করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত। ভারত বাংলাদেশ যৌথ ইশতিহারে এমন অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে দিল্লি।
ইশতিহারে জনগণের সমৃদ্ধির উন্নয়নে কাজ করার সঙ্কল্প এবং একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারদের জন্য আলোচনার প্রাথমিক সূচনাসহ একে অপরের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক জোরদার করার অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করা হয়েছে। দিল্লি মনে করে বাণিজ্য অবকাঠামো নির্মাণের ফলে ভৌগোলিক নৈকট্যকে দুই দেশের জনগণের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগে রূপান্তর করতে পারে।
শেখ হাসিনার দিল্লি সফর শেষে প্রকাশিত যৌথ ইশতেহারে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে যৌথ নদী কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে তথ্য আদান-প্রদানকে অগ্রাধিকার প্রদান এবং অন্তর্বর্তীকালীন পানি বণ্টনের কাঠামো প্রণয়নে নিয়োজিত থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। এ জন্য ১৯৯৬ সালের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির পুনর্নবীকরণের জন্য আলোচনা শুরু করার জন্য একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আর এ কারণে উন্নয়ন সহযোগিতার অংশ হিসেবে, দুই দেশের পারস্পরিক সম্মতিতে ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বহুমুখী সংযোগের বিষয়ে অভিপ্রায় ব্যক্ত করে ইশতিহারে বলা হয়েছে, আমরা একটি রূপান্তরমূলক অংশীদারিত্ব অনুসরণ করব যা আমাদের ভৌগোলিক নৈকট্যকে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগে রূপান্তর করে আমাদের উভয় দেশের পাশাপাশি সমগ্র অঞ্চলের জন্য প্রচারে ভাগ করা স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এর মধ্যে কানেক্টিভিটির বিস্তৃত অবয়বে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ফিজিক্যাল কানেক্টিভিটি যা মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট এবং ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য ও ট্রানজিট অবকাঠামোকে সীমাহীন আন্তঃসীমান্ত মানুষ, পণ্য ও পরিষেবার চলাচলের জন্য, সেইসাথে শক্তি সংযোগ ও ডিজিটাল সংযোগকে কভার করবে। ইশতেহারে বলা হয়, আমাদের উপআঞ্চলিক সংযোগ উদ্যোগের অংশ হিসেবে, ভারত রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট সুবিধা প্রসারিত করবে। উপআঞ্চলিক সংযোগ প্রচারের জন্য বিবিআইএন মোটর ভেহিক্যাল চুক্তির দ্রুত কার্যকরীকরণের জন্য প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয় ইশতেহারে। এই প্রেক্ষাপটে রেলওয়ে সংযোগে একটি নতুন এমওইউকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়, গেদে-দর্শনা থেকে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি হয়ে হাসিমারা হয়ে ডালগাঁও রেলহেড হয়ে ভারত-ভুটান সীমান্তে পণ্য-ট্রেন পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২১-২২ জুন ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করেন। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই দুই দেশ যৌথ ইশতিহার দিয়েছে।
ইশতিহারে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে দিল্লি অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বলেছে, এই অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করে আমরা দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করব। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, আমরা বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা অন্বেষণ করব, যাতে প্রতিরক্ষার জন্য তাদের সক্ষমতা জোরদার করা যায়। ইশতিহারে ভারত অভিপ্রায় ব্যক্ত করে বলেছে, আমরা আমাদের বহুমুখী সামরিক মহড়া, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবো।
উন্নয়ন অংশীদারিত্বের জন্য একটি নতুন ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি শেষ করার মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগিতাকে আরো জোরদার করার ইচ্ছা ব্যক্ত করে ইশতিহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকার ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতাকে প্রসারিত করা হবে। ইশতেহারে সিভিল সার্ভিস, জুডিশিয়াল অফিসার, পুলিশ এবং বাংলাদেশের অন্যান্য বিশেষায়িত পরিষেবাগুলোর জন্য আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মসূচি সম্প্রসারিত করতে একসাথে কাজ করার কথা বলা হয়। একই সাথে ভাগ করা সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও প্রাণবন্ত জনগণের মধ্যে বন্ধনকে স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা, পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, শিল্পী, পর্যটক, ছাত্র এবং যুবকদের বিনিময় কর্মসূচির মাধ্যমে বিদ্যমান সংযোগগুলোকে লালন করার কথা বলা হয়। চিকিৎসা ও শিক্ষাগত সহায়তার জন্য নতুন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সহায়তার মাত্রা আরো বাড়ানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি সহজতর আন্তঃসীমান্ত ভ্রমণের সুবিধার্থে এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারত চিকিৎসার জন্য সে দেশ ভ্রমণকারী বাংলাদেশীদের জন্য ই-মেডিক্যাল ভিসা সুবিধা প্রসারিত করার কথা বলা হয়েছে। ইশতেহারে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের জনগণের জন্য দ্রুত কনসুলার ও ভিসা পরিষেবার সুবিধার্থে রংপুরে ভারতের একটি নতুন সহকারী হাইকমিশন খুলতে সম্মতি প্রকাশ করা হয়। প্রাপ্যতার ভিত্তিতে এবং তার সর্বোত্তম ক্ষমতার ভিত্তিতে, ভারত বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে সহায়তা করবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা