১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সারা দেশে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন

বারবার ভস্ম থেকে জেগে উঠেছে আওয়ামী লীগ : শেখ হাসিনা

-

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়েছে। বারবার এ দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা হয়েছিল। সেই আইয়ুব খানের মার্শাল ল থেকে শুরু... তবু এ সংগঠনের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো... যেমন পুড়িয়ে ফেলার পরও ভস্ম থেকে জেগে ওঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবেই জেগে উঠেছে।’
গতকাল রোববার ২৩ জুন রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বাংলা ট্রিবিউন।
বাংলাদেশের মানুষের সব অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন, জনগণের অধিকার আদায়ের সংগঠন, জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি করার সংগঠন। কাজেই বারবার আঘাত এলেও এ সংগঠনের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। ফিনিক্স পাখির মতো... যেমন পুড়িয়ে ফেলার পরও ভস্ম থেকে জেগে ওঠে, আওয়ামী লীগও সেভাবে জেগে উঠেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব বেশি দিনের কথা নয়, ২০০৭ সালে চেষ্টা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে কিংস পার্টি গড়ে তুলবে, সেটিও সফল হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ, তৃণমূলের মানুষ, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী, মুজিব আদর্শের সৈনিক। এ সৈনিকরা কখনো পরাজয় মানে না; মাথা নত করে না।’
দলের সাবেক নেতাদের ভুলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হয়তো কখনো কখনো কোনো নেতা ভুল করেছেন, কেউ মনে করেছেন আওয়ামী লীগে থাকলে তারাই বড় নেতা, দলের চেয়েও নিজেকে বড় মনে করে দল ছেড়েছেন, দল ছেড়ে অন্য দল করেছেন। কেউ দল ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু ভুল করেছেন। কেন? আপনারা দেখেন আকাশে মিটিমিটি তারা জ্বলে। তারা আলোকিত হয় সূর্যের দ্বারা। যেসব নেতা ভুল করেছিলেন, তারা ভুলে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন বলেই আলোকিত ছিলেন। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর তারা আর জ্বলেনি, আস্তে আস্তে মিইয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ ভুল বুঝে হয়তো ফেরত এসেছে, আমরাও নিয়েছি। আবার কেউ এখনো বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের সরকার পতন, ধ্বংসসহ নানা জল্পনা-কল্পনা করে যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। তা আমরা প্রমাণ করেছি। পঁচাত্তরের পর বারবার ক্ষমতা বদল হয়েছিল। সেটা হয়েছে অস্ত্রের মাধ্যমে, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। জনগণের অধিকার ছিল না। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেনি।’
আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিকে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আমরা অনেক দূর এগিয়েছিলাম। কাজ করেছি। বাংলাদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করেছিল একটি দলের কাজ হলো জনগণের সেবা করা।’
আওয়ামী লীগকে আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার একটাই আবেদন থাকবে আমাদের সংগঠনের প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছে, সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। যেকোনো একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠনটা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। যদি সংগঠন শক্তিশালী হয় আর দেশের গণমানুষের সমর্থন পাওয়া যায়, যতই ষড়যন্ত্র হোক...।’
প্রত্যেক নেতাকর্মীকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘প্রত্যেক নেতাকর্মীকে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বলব, আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন, এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কত কষ্ট করেছে। বারবার আঘাত এসেছে। পরিবারগুলো কষ্ট করেছে। কিন্তু সংগঠন ধরে রেখেছে। কাজেই যেমন সংগঠন করতে হবে, সেভাবে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস, যেটা আমাদের মূল শক্তি, সেই আস্থা-বিশ্বাসটা অর্জন করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘(জনগণের) সেই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই বারবার জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। বারবার ক্ষমতায় এসে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজ আর্থসামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে।’
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪১, ২১০০ অনেক বয়স হয়েছে, তত দিন হয়তো বেঁচে থাকব না। কিন্তু আজ যারা নবীন, তারা আমার স্মার্ট বাংলাদেশের মূল সৈনিক হবে। আমরা স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে তুলব; স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সোসাইটি গড়ে তুলে এই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাবে- প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্লাটিনাম জুবিলিতে এটিই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
মৃত্যুকে পরোয়া করেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ, মৃত্যু যেকোনো সময় সবার হতে পারে। যেকোনো সময় মৃত্যু আসতে পারে। তার জন্য আমি কোনো দিন ভীত নই। কখনো ভয় পাইনি, পাবোও না। কিন্তু যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার বাবার যে চিন্তাচেতনা, তা বাস্তবায়ন করে এ দেশের মানুষকে একটা উন্নত জীবন দেবো- এটিই আমাদের লক্ষ্য।’
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের এই প্লাটিনাম জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাসহ দেশী-বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরে শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের পায়রা ও বেলুন অবমুক্ত করেন।
এরপর বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
শুরুতে পরিবেশন করা হয় আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর থিম সং। পরে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরে নাচ ও গান পরিবেশন করা হয়।
সারা দেশে আ’লীগের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন : আড়ম্বরপূর্ণ নানা কর্মসূচি মধ্য দিয়ে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী) উদযাপন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, শোভাযাত্রা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, নীরবতা পালন ও আলোচনা সভা ইত্যাদি।
রোববার দিবসটি উপলক্ষে দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে কর্মসূচির আয়োজন করেন দলের নেতাকর্মীরা।
নীলফামারীতে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন হয়েছে। সকালে বঙ্গবন্ধু চত্বরে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হাফিজুর রশিদ মঞ্জুর সভাপতিত্বে সভায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মসফিকুল ইসলাম রিন্টু, সদর উপজেলা সভাপতি আবুজার রহমান বক্তব্য দেন।
জেলা, উপজেলা, পৌর আওয়ামী লীগ ছাড়াও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
মেহেরপুরে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়েছে। সকালে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বাসভবন প্রাঙ্গণে ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।
জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন জাতীয় সঙ্গীতের সুরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement