রাত থেকে ভোর পর্যন্ত মোবাইল টাওয়ার নিষ্ক্রিয় রাখার প্রস্তাব
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৩ জুন ২০২৪, ০৩:০৪
আমি একজন চিকিৎসক হিসেবে সবসময় প্রযুক্তির পক্ষে। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশের পক্ষে, স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে। কিন্তু আমাদের ডিজিটাল পদ্ধতি অর্থাৎ মোবাইলফোন যেভাবে অপব্যবহার হচ্ছে তাতে খুব বেশি দিন এই প্রজন্ম প্রতিবন্ধী না হয়ে থাকতে পারবে না বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন ডা: প্রাণ গোপাল দত্ত। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বিল গেটস নিজে বলেছেন, উনি উনার সন্তানকে ১৬ বছরের আগে মোবাইল ফোন টাচ করতে দেননি। মার্টিন কুপার এক বছর আগে বলেছেন, আমি যদি জানতাম যে এই প্রজন্ম মোবাইল ফোনের সাথে ৫/৬ ঘণ্টা আঠা হয়ে লেগে থাকবে, তাহলে এটা আবিষ্কার করা আমার জন্য একটা নির্মম ভুল হয়েছে বলে আমি মনে করি। একই সাথে বুকার প্রাইজ উইনার হাওয়ার্ড জ্যাকপসন বলেছেন, আগামী ২০ বছর পরে বিশ্বের জনসংখ্যা লেখাপড়ায় প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে, তারা প্রযুক্তি চালাতে পারবে কিন্তু কম্পজিশন করতে পারবে না, কোনো কিছু শিখতে পারবে না।
জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন এই চিকিৎসক সংসদ সদস্য। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন। ডা: প্রাণ গোপাল বলেন, কোনোভাবে মোবাইলের কোনো একটা অ্যাপস সৃষ্টি করে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে মোবাইল টাওয়ারগুলোকে নিস্ক্রীয় করা যায় কি না অথবা সেই মোবাইল টাওয়ার যাতে ব্যবহৃত না হয়, মানে ফ্রিল্যান্সিং বা অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিকল্প পথ ছাড়া অন্য কোথাও যেন ব্যবহৃত না হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের নজর দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, আমার রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। ১০ বছর থেকে শুরু করে সবাই একটা কথা বলে কানে শোঁ শোঁ করে। ভুঁ ভুঁ করে, কানে শুনি না, লেখাপড়ায় মন দিতে পারে না। তাহলে আমরা কোথায় চলে যাচ্ছি। এই জায়গা থেকে কোনো কিছু একটা আবিস্কার করা উচিত, যা রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত এই প্রযুক্তি থেকে আমাদের তরুণ সমাজ একটু দূরে থাকবে। তিনি বলেন, শিক্ষার বিষয়ে এক শ’ বছরের কথা চিন্তার কোনো বিকল্প নেই। এই শিক্ষা পেতে হলে দরকার একটা সুস্থ জাতি। সেই জাতির জন্য প্রয়োজন মেডিকেশন। আমাদের এই স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে অনেকেই অনেক সমালোচনা করেন। তারপরও কিন্তু বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খুব কম যে উন্নতি লাভ করেছে তা আমি স্বীকার করব না।
প্রাণ গোপাল বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা এখনো অনেকটাই উন্নতির পর্যায়ে আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা বিচ্যুতি লক্ষ করা যায় এবং সেগুলো ডাক্তার ও ডাক্তারদের আবাসিক সমস্যা সমাধান না হলে কখনোই সেটা দেয়া সম্ভব হবে না। বিদেশে ডাক্তাররা সর্বক্ষণ হাসপাতালে থাকেন, বাংলাদেশে আমরা সে ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারছি না, কারণ আমরা অফিস মেইনটেইন করি। ডাক্তারি পেশা এমন একটা পেশা যেখানে অফিস মেইনটেইন করা সম্ভব না। ডাক্তারদের আবাসিক সুবিধা দেয়াটা সবচেয়ে অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, অমর্ত্য সেনের ভাষায় যদি আমরা বলি, শিক্ষা এবং চিকিৎসা সেটা থাকা উচিত সরকারি খাতে। এটাকে যদি বেসরকারি করা হয় তাহলে শিক্ষা এবং চিকিৎসার কোনো গুণগত মান থাকে না, তখন সেটা হয়ে যায় একটা পণ্য। দুর্ভাগ্যবশত পৃথিবীর সব দেশেই শিক্ষা এবং চিকিৎসা পণ্য হয়ে গেছে। আপনার টাকা আছে আপনি চিকিৎসা পাবেন, আপনার টাকা নেই তো আপনি চিকিৎসা পাবেন না। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক যারা মধ্যম শ্রেণীর নিচে আছেন তাদের বেলায় কিন্তু দেখার মতো কেউ নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা