বাজে ব্যাটিং বোলিংয়ে সেমির স্বপ্ন শেষ বাংলাদেশের
- জসিম উদ্দিন রানা
- ২৩ জুন ২০২৪, ০২:৫৭
বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম বাংলাদেশকে আর কিছু উপহার দেক বা না দেক, ৩ বলে দুই রান না নিতে পারার আজীবন আক্ষেপ করার মতো একটা ট্র্যাজেডির সাক্ষী করে রেখেছে। ভারতের বিপক্ষে হয়তো একদিন বাংলাদেশ টি-২০ বিশ্বকাপে হেসেখেলে জিতবে কিংবা বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয় নিয়মিতই হয়তো পাবে, তবে এক রানে হারের সেই ক্ষত কি কোনোভাবে ভুলা সম্ভব। বিশ্বকাপে আবারও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ। এবার আর কাছে ধারে যাওয়ার সুযোগ দেয়নি ভারতীয়রা। টস হেরে প্রথম ব্যাট করে ২০ ওভারে হার্দিক পান্ডিয়ার ফিফটিতে ৫ উইকেটে ১৯৬ রান করে। জবাবে শুরু থেকেই ঢিমে তালে খেলা বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ১৪৬ রানই করতে পারে। ফলে ৫০ রানের হারে সেমিতে খেলার স্বপ্ন পুরোপুরিই শেষ হয়ে যায়। সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগামী ২৫ জুন সকাল সাড়ে ৬টায়।
বরাবরের মতো ব্যাটারদের হতাশাজনক ও দৃষ্টিপ্রদাহজনক ব্যাটিং রয়েই গেল। গতকাল সাথে যোগ হয়েছে বোলারদের বাজে বল। সাকিবের ৩ ওভারে ৩৭ রান, তানজিদ হাসান তামিমের ৪ ওভারে ৩২ রান, মোস্তাফিজের ৪ ওভারে ৪৮ রান, রিশাদ হোসেনের ৩ ওভারে ৪৩ রান খরচ করলে কিভাবে ভারতের নাগাল পাবে টাইগাররা। প্রাপ্তি রিশাদ ও তানজিদের ২টি করে উইকেট।
আগের চার দেখায় একটাও জেতেনি লাল সবুজরা। এবার সেই আক্ষেপের সাথে যোগ হলো আরো একটি হার। অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যাট হাতে নেমে ৩ ওভারে ২৯ রান তুলে ভারতকে ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। চতুর্থ ওভারে দ্বিতীয় বারের মতো বোলিংয়ে এসে ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। ছক্কা মারতে গিয়ে মিড অফে জাকের আলিকে ক্যাচ দেন ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১ বলে ২৩ রান করা রোহিত। এতে টি-২০ বিশ্বকাপে প্রথম বোলার হিসেবে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব।
লম্বা সময় ধরেই উইকেট শৃঙ্গে সাকিব। বিশ্বকাপে তার চেয়ে ১১ উইকেট পিছিয়ে পাকিস্তানের গ্রেট শহীদ আফ্রিদি। ৩৮ উইকেট নিয়ে তিনে লাসিথ মালিঙ্গা। খেলা চালিয়ে যাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে ৩৭ উইকেট নিয়ে চারে আছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি সাকিবের ১৪৯তম উইকেট। ১ উইকেট পেলে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দেড়’শ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবেন। সঙ্গে অসাধারণ এক ডাবলেরও সাক্ষী হবেন। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২৫০০ রান এবং ১৫০ উইকেটের কীর্তি গড়বেন সাকিব। উইকেট সংখ্যায় সাকিব এখন দুইয়ে রয়েছেন। ১৬৪ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আছেন টিম সাউদি।
দলীয় ৩৯ রানে রোহিত ফেরার ভারতের রানের চাকা ঘুরিয়েছেন কোহলি ও রিশভ পান্থ। ৮ ওভারে দলের রান ৭১ এ নেন দু’জনে। নবম ওভারে বাংলাদেশকে ডাবল উইকেটে মাতান পেসার তানজিম হাসান সাকিব। প্রথম বলে কোহলিকে বোল্ড করেন। ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৮ বলে ৩৭ রান করেন অফ ফর্মে থাকা কোহলি। এরপর ক্রিজে এসেই প্রথম বলে ছক্কা মারেন সূর্যকুমার যাদব। তবে পরের বলে আউটসাইড-এজে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সূর্য। ৭৭ রানে ৩ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন পান্থ। কিন্তু ১২তম ওভারে রিশাদের বলে রিভার্স সুইপ করে শর্ট থার্ডে ক্যাচ দেন পান্থ। আউট হওয়ার আগে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৪ বলে ৩৬ রান করেন।
দলীয় ১০৪ রানে পান্থ ফেরার পর ভারতকে বড় সংগ্রহের পথ তৈরি করে দেন শিবম দুবে ও হার্দিক পান্ডিয়া। পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন। ৩টি ছক্কায় ২৪ বলে ৩৪ রান করা দুবে আউট হলেও ইনিংসের শেষ পর্যন্ত খেলে ভারতকে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৬ রানের সংগ্রহ এনে দেন পান্ডিয়া। ইনিংসের শেষ বলে চার মেরে টি-২০তে ক্যারিয়ারে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৭ বলে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ধীরলয়ে শুরু করেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। এই প্রথম দুই অঙ্কের ঘরে গিয়ে আউট হলেন ওপেনাররা। ৪.৩ ওভারে দলীয় ৩৫ রানে হার্দিকের প্রথম শিকার সেই লিটন দাস। ১০ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৩ রান করেন তিনি। তানজিদের সঙ্গী হন অধিনায়ক শান্ত। ৯.৪ ওভারে দলীয় ৬৬ রানে কুলদ্বীপের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ব্যাক্তিগত ৩১ বলে ৪ চারে ২৯ রানে ফেরেন তানজিদ। শান্তর সাথে জুটি গড়তে পারেননি তৌহিদ হৃদয় (৬ বলে ৪) ও সাকিব আল হাসান (৭ বলে ১১)। দুজনকেই ফেরান কুলদ্বীপ যাদব।
যা একটু আশার আলো হয়ে উঠছিলেন শান্ত। বুমরাহর বলে আর্শদ্বীপকে ক্যাচ দিয়ে ৪০ রানে ফেরেন তিনিও। ৩২ বলে এক চার তিন ছক্কায় ওই রান করেন শান্ত। তাসকিনের বদলে সুযোগ পাওয়া জাকের আলী অনিক কি শট খেললেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আর্শদ্বীপের বলে কোহলিকে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ১ রানে। ১৬.১ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১০ রানে ধুঁকছে বাংলাদেশ।
মাহমুদুল্লাহর সাথে জুটি গড়ার চেষ্টায় থাকলেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। ১০ বলে ২৪ রান করে বুমরাহর দ্বিতীয় শিকার রিশাদ। মাহমুদুল্লাহ ১৯.৫ ওভারে আর্শদ্বীপের বলে আউট হলেন ১৩ রান করে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৪৬ রান। মাহেদী ৫ ও তানজিম ১ রানে অপরাজিত ছিলেন। কুলদ্বীপ যাদব নিলেন ৩ উইকেট, জসপ্রীত বুমরাহ ও আর্শদ্বীপ দুটি করে এবং হার্দিক এক উইকেট নেন।.
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
ভারত ইনিংস : ১৯৬/৫ ( রোহিত ২৩, কোহলি ৩৭, পান্ত ৩৬, শিভম ৩৪, হার্দিক ৫০, তানজিম ২/৩২, রিশাদ ২/৪৩, সাকিব ১/৩৭)।
বাংলাদেশ ইনিংস : ১৪৬/৮ (তানজিদ ২৯, শান্ত ৪০, রিশাদ ২৪, কুলদ্বীপ ৩/১৯, বুমরাহ ২/১৩, আর্শদ্বীপ ২/৩০)।
ফল : ভারত ৫০ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : হার্দিক পান্ডিয়া।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা