১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাসেলস ভাইপার সাপটি প্রচণ্ড বিষধর কিন্তু চিকিৎসা আছে

সাবধানতা অবলম্বন জরুরি
-


রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। প্রচণ্ড বিষধর এই সাপটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। টিভি চ্যানেলগুলোতে এ ব্যাপারে সচিত্র নানা ধরনের নিউজ প্রচার করা হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে, ‘সাপটি হঠাৎ করে দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে চলে এসেছে।’ কিন্তু সাপ নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তারা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে এই সাপের বসবাস ছিল।’ সাপে কামড়ালে আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। হাসপাতালে সাপের কামড়ের ওষুধ রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এই সাপে কামড়ালে ওঝার কাছে যাওয়া যাবে না।
রাসেলস ভাইপার ইংরেজি নাম, এর বাংলা নাম চন্দ্রবোড়া। বাংলাদেশের মানুষ এই নামে আদিকাল থেকেই সাপটির সাথে পরিচিত। বিষধর এই সাপটিকে যতই ভয়ঙ্কর হিসেবে দেখানো হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে অন্যান্য সাপের মতোই এই সাপটিও অত্যন্ত নিরীহ। মূলত এই সাপটি বরেন্দ্র অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বরেন্দ্র অঞ্চলের হালকা লাল মাটি ও প্রকৃতি এই সাপটিকে সেখানে বসবাসের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দিয়েছে। এই সাপটির বিষ অতি তীব্র, বাংলাদেশ সরকার হাসপাতালগুলোতে যে ‘অ্যান্টি ভেনম’ ওষুধ সরবরাহ করেছে, তা দিয়ে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়ালে রোগীকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাঁচানো যায় তবে কিছুটা জটিলতা অনেক সময় থেকেই যায়। ফলে আপাত নিরীহ এই সাপটি থেকে সাবধানতা অবলম্বন করেই মানুষকে বেঁচে থাকতে হবে।

চিকিৎসকরা বলছেন, রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া ক্ষেতে থাকে। পানির মধ্যে কচুরিপানার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। বিষধর এই সাপটি থেকে রক্ষা পেতে হলে এই সাপ যেখানে বেশি থাকে সেখানকার ক্ষেতে নামার আগে উত্তম রূপে শব্দ করে যেতে হবে যেন সাপটি সেখান থেকে সরে যেতে পারে। এই সাপটি সহজে মানুষকে কামড়ায় না যদি না আক্রান্ত হয়। সাপটি কামড়ানোর আগে হিস হিস করে থাকে। হিস হিস শব্দ শুনলে সেখান থেকে দ্রুত সরে আসতে হবে এবং দূর থেকে নানা ধরনের শব্দ তৈরি করে নিশ্চিত হতে হবে সাপটি চলে গেছে।
রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ সম্বন্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ও গবেষক ইব্রাহিম আল হায়দার গতকাল শুক্রবার নয়া দিগন্তের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে, যে কয়টা বিষধর সাপ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া অন্যতম। অন্যান্য সাপ যেমন গোখরা (কোবরা), কালাচ বা কেউটে (কমন ক্রেইট)। এই তিন ধরনের বিষধর সাপের ওষুধ বা অ্যান্টি ভেনম ভারত থেকে আসে। বাংলাদেশের গোখরা ও কেউটে সাপের সাথে ভারতের এই দুই ধরনের সাপের পুরোপুরি মিল থাকলেও এই দুই দেশের চন্দ্রবোড়া সাপের বিষের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। কারণ দুই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান ভিন্ন। ভারতে যে অ্যান্টি ভেনম তৈরি করা হয়েছে তা ভারতের চন্দ্রবোড়া সাপের বিষের ওপর ভিত্তি করে। বাংলাদেশের চন্দ্রবোড়ার বিষের বিরুদ্ধে ভারতীয় অ্যান্টিভেনম পুরোপুরি কাজ করে না। সে কারণে ভারতে এই সাপে কামড়ালে যেখানে এক ডোজ অ্যান্টিভেনম দিলেই চলে কিন্তু বাংলাদেশে একডোজ অ্যান্টিভেনম দিয়ে চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়ানো রোগীকে সুস্থ করা যায় না। এখানে একের অধিক অ্যান্টিভেনম দিতে হয়। তারপরও চন্দ্রবোড়া সাপে কাটা রোগীর কিছু কিছু পোস্ট ক্লিনিকেল সিম্পটম বা পরবর্তীতে জটিলতা দেখা যায়।

ইব্রাহিম আল দায়দার বলেন, চন্দ্রবোড়ায় কামড়ালে সাথে সাথে হাসপাতালে আনা হলে রোগীকে হয়তো বাঁচানো যায় কিন্তু রোগীর কিডনি অকার্যকর হয়ে যায় বলে রোগীকে ডায়ালাইসিস দিতে হয়। একই সাথে রোগীকে বাঁচানোর জন্য ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। সেজন্য উপজেলা হাসপাতালে এক ডোজ অ্যান্টি ভেনম দিয়ে চিকিৎসকরা জেলা হাসপাতালে বা যেকোনো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়।
‘কেন হঠাৎ চন্দ্রবোড়া সাপের উপদ্রব বেড়েছে’ এই প্রশ্নের জবাবে অপর একজন গবেষক জানান, আগে কৃষিজমিতে বছরে একবার বা দুইবার ফসল ফলানো হতো এবং বাকি সময় পানির অভাব থাকায় জমি পরিত্যক্ত পড়ে থাকত। ৯০’র দশকে সেচ পদ্ধতির উন্নতির সাথে সাথে কৃষকরা বছরে দুই থেকে তিনটি ফসল ফলানো শুরু করেন। সারা বছর ক্ষেতে ফসল থাকায় জমিতে ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ইঁদুর চন্দ্রবোড়া সাপের প্রধান খাদ্য। আর ইঁদুর বাড়ার সাথে সাথে সাপ পর্যাপ্ত খাদ্য পেতে শুরু করেছে এবং বংশবিস্তারের জন্য যথাযথ পরিবেশ পাচ্ছে। এই কারণে এই সাপের সংখ্যা বেড়েছে এবং বিলুপ্ত প্রজাতি থেকে হয়তো এর নাম কাটা যেতে পারে।
চিকিৎসকরা বলেন, যে সাপেই কামড় দিক না কেন, সাপটিকে চিনতে পারলে চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে সুবিধা হয়ে থাকে। কামড়ের স্থানে বাধা যাবে না। রোগী যেন নড়াচড়া না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রোগীকে অভয় বাণী শোনাতে হবে যেন, তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে সেখানে ইনজেকশন দিলেই সে সুস্থ হয়ে যাবে। তাহলে রোগী মানসিকভাবে শক্ত থাকবে এবং এই অভয় বাণী দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য ইতিবাচক। যেখানে কামড় লেগেছে সেখানে কোনো ডেটল বা এ ধরনের কিছু দেয়া যাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
হামাসের সাথে চুক্তি চায় ৭২ শতাংশ ইসরাইলি গাজার উত্তরের সর্বশেষ অর্থোপেডিক সার্জন নিহত মালয়েশিয়ায় বাধ্য শ্রমের অভিযোগ : মামলার অনুমতি পেল বাংলাদেশী শ্রমিকরা বিজয় দিবসে নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই : ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি ইসলামি শ্রমনীতি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে : মুহাম্মদ শাহাজাহান অভিবাসী ফেরত না নিলে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি ট্রাম্পের খুলনা রেলস্টেশনের স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘শেখ হাসিনা আবার আসবে’ ঘূর্ণিঝড় চিডোর কারণে ফ্রান্সের মায়োটে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি ঢাকায় পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট রামোস হোর্তা মুক্তিযোদ্ধা দলের মহাসমাবেশে যোগ দেবেন খালেদা জিয়া একই দিনে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে

সকল