স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায় হামাস রাজি হচ্ছে না ইসরাইল
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০৫
- অস্থায়ী বিরতিকে ইসরাইলের বন্দিমুক্তির কৌশল ভাবছে ইসরাইল
- হামাসের দাবি নিয়ে আলোচনা করছেন ব্লিনকেন
- জাতিসঙ্ঘ কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের চিন্তা ইসরাইলের
যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া গাজার শান্তিচুক্তি প্রস্তাবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস সেটির ওপরই জোর দিচ্ছে। কিন্তু ইসরাইল এখনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে না। টাইমস অব ইসরাইল, আলজাজিরা ও বিবিসি।
সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদেও গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতেও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল এখনো তা মেনে নেয়ার কথা বলছে না। আর হামাস বলছে, তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা চায়।
গত ২৭ মে ইসরাইল যে প্রস্তাব দিয়েছিল, তাতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। এতে বলা হয়েছে, দুই পক্ষ প্রথমে ছয় সপ্তাহে প্রথম ধাপের অস্ত্রবিরতিতে যাবে। এ সময় তারা বন্দী বিনিময় করবে। দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হবে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে। কিন্তু এখানে যদি কোনো অবস্থাতেই ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয়? হামাস তাই শুরুতেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা দাবি করছে।
ইসরাইল-যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায় বা ধাপটির স্থায়িত্ব হবে ছয় সপ্তাহের। এতে যদি সমঝোতা না হয়, তবে তা সম্প্রসারিত করা হবে। কিন্তু হামাস মনে করছে, এই প্রস্তাবে ইসরাইলকে যুদ্ধ আবার শুরুর অধিকার দেয়া হয়েছে।
মধ্যস্থতাকারীরা বলছেন, হামাস আরো কয়েকটি সংশোধনী দাবি করছে। তবে সেগুলো খুবই ছোটখাটো। সেগুলো সমাধান করতে সমস্যা হবে না। কিন্তু স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়টিই এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বার বার বলে আসছেন, হামাসকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত তারা যুদ্ধ বন্ধ করবে না। তিনি আরো দাবি করেছেন, তাদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে এই যুদ্ধে তাদের লক্ষ্য পূরণের বিষয়টি অনুমোদন করা রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে হামাস মনে করছে, ইসরাইল কেবল যুদ্ধবিরতির প্রথম অংশটুকু বাস্তবায়ন করবে। এর মাধ্যমে তারা জীবিত নারী, বয়স্ক এবং অসুস্থ পণবন্দীদের মুক্ত করিয়ে নেবে। এসব বন্দী মুক্ত হলেই তারা পূর্ণ গতিতে আবার হামলা চালাবে। এমনকি তখন হামলার গতি হবে আরো ভয়াবহ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন হামাসের উদ্দেশে বলেছেন, ‘দরকষাকষি বন্ধের সময় এসেছে।’ দোহায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কিছু পরিবর্তন প্রস্তাব নিয়ে কাজ করা গেলেও অন্যগুলো নিয়ে কাজের সুযোগ নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও আলোচনার মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিসর চুক্তিটি করতে চেষ্টা করে যাবে। হামাস গত মঙ্গলবার বলেছে, তারা এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। তবে তারা গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিয়েছে। ইসরাইল সরকার এ নিয়ে মন্তব্য করেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির প্রতিক্রিয়া প্রত্যাখ্যানের মতোই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে প্রস্তাব ১২ দিন আগেই দেয়ার কথা বলেছেন তা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখনো প্রকাশ্যে অনুমোদন করেননি। ব্লিনকেন অবশ্য বলেছেন, সোমবার জেরুসালেমে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদও ওই প্রস্তাবের সমর্থনে একটি রেজুলুশন পাস করেছে। উপসাগরীয় দেশটিতে কূটনৈতিক এ সফরের মাধ্যমে ব্লিনকেন আঞ্চলিক সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আলে সানির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন হাসিমুখেই।
দেশটি এ সঙ্কটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার কার্যালয় আছে সেখানে। আবার ইসরাইলের সাথে আলোচনারও একটি মাধ্যম আছে। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেনকে কিছুটা উত্তেজিতও দেখা গেছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘হামাস যেসব প্রস্তাব গত ৬ মে দিয়েছিল তার সাথে এবারের প্রস্তাব প্রায় অভিন্ন। এর পেছনেই পুরো বিশ্ব আছে। ইসরাইলও তা গ্রহণ করেছে। এখন হামাস একটিই প্রতিক্রিয়া দিতে পারে এবং তা হলো ইয়েস।’
তিনি বলেন, ‘এর পরিবর্তে হামাস দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করল এবং তারপর অনেকগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করল এবং এর কয়েকটি তারা আগেও গ্রহণ করেছে। এর ফলে হামাস যে যুদ্ধ শুরু করেছে তা চলছে এবং আরো মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে। ফিলিস্তিনিরা দুর্ভোগে পড়বে, আরো ইসরাইলিরা দুর্ভোগে পড়বে।’
ব্লিনকেন অবশ্য হামাসের পরিবর্তনের দাবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। হামাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে বিবৃতি দিয়েছে সেখানে ‘গাজায় আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ’ এবং ইসরাইলি সেনাদের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন সদস্য ইজ্জাত আল রিশক জানান, তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল ‘দায়িত্বশীল, গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক’ এবং এটি সমঝোতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ‘বড় পথ’ তৈরি করেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করে একজন ইসরাইলি কর্মকর্তা বিবৃতিতে জানান, হামাস প্রধান ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়গুলো পরিবর্তন করেছে এবং বন্দী মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে যেটি প্রেসিডেন্ট বাইডেন উপস্থাপন করেছিলেন। বুধবার রয়টার্সকে দেয়া আরেক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, সমঝোতায় পৌঁছাতে তারা পুরোপুরি ইতিবাচক এবং তারা ইসরাইলকে চাপ দেয়ার জন্য ব্লিনকেনকে অনুরোধ করেছে। এমন প্রেক্ষাপটেও ব্লিনকেন বলেন, কাতার ও মিসরকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি দূরত্ব ঘুচিয়ে আনা সম্ভব। তবে হামাসকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
জাতিসঙ্ঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের চিন্তা ইসরাইলের : জাতিসঙ্ঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের কথা ভাবছে ইসরাইল। জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের বিশেষ দূত গিলাদ এরডান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নিরপরাধ শিশুদের ওপর হামলা ও হাজার হাজার শিশুর মৃত্যুর কারণে ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে ‘অপরাধী’ দেশের তালিকায় যুক্ত করেছে জাতিসঙ্ঘ। সে সময়ই ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ জানান, এই পদক্ষেপের কারণে জাতিসঙ্ঘের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং জাতিসঙ্ঘকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ইসরাইল জাতিসঙ্ঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের কথা চিন্তা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরাইলের একটি রেডিও চ্যানেলকে গিলাদ এরডান বলেন, কিছু দিনের মধ্যেই ইসরাইল তার ভূখণ্ড থেকে জাতিসঙ্ঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তাদের দেশটি থেকে প্রত্যারের এবং ইসরাইলের ভালো-মন্দ বিবেচনা করার সময় এসে গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা