‘অধিকারহারা’ কোটি শ্রমিককে সঙ্ঘবদ্ধ করতে চায় বিএনপি
- মঈন উদ্দিন খান
- ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০
‘অধিকারহারা’ দেশের কোটি শ্রমিককে সঙ্ঘবদ্ধ করতে চায় বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, কৃষি, প্রবাসী আয় ও তৈরী পোশাক খাতের ওপর ভিত্তি করে টিকে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। অথচ এই খাতগুলোর সাথে জড়িত শ্রমজীবীরাই দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাপকভাবে অবহেলিত। তারা তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পাচ্ছেন না। হয়রানির শিকার হচ্ছেন পদে পদে। এদেরকে তাই অধিকার সচেতন করে তোলার তাগাদা অনুভব করছে বিএনপি।
জানা গেছে, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে শ্রমজীবীদের কিভাবে জাগিয়ে তোলা যায়, তা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে বিএনপির একটি কমিটি। এই কমিটিতে শ্রমিকদলের নেতারা ছাড়াও সিনিয়র নেতারা যুক্ত আছেন, যাদের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সক্রিয় সব শ্রমিক সংগঠনের নেতাদেরকেও পাশে রাখতে চায় বিএনপি। প্রাথমিক পর্যায়ে সারা দেশের ১০টি বিভাগে শ্রমজীবীদের কাউন্সিলিং করা হবে। এরপরে তাদেরকে অধিকার আদায়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করে তোলা হবে।
শ্রমজীবীদের সঙ্ঘবদ্ধ করার এই উদ্যোগের দায়িত্বে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘আমি একজন শ্রমিক এবং এই পরিচয়ে আমি গর্বিত’। জিয়া আসলে বাংলাদেশের মানুষকে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখাননি। তিনি শ্রমজীবী মানুষকে সম্মানিত করেছিলেন। জিয়ার সেই আদর্শকে সামনে রেখে আমরা নতুন করে শ্রমজীবীদের সঙ্ঘবদ্ধ করতে চাই। যাতে করে তারা তাদের অধিকার বুঝে নিতে পারে।’’
বিএনপির নেতারা এও মনে করছে, বিএনপির আন্দোলনে শ্রমিকদেরও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। কারণ সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার আদায়েই তারা কাজ করছেন। তারা বলছেন, দেশের খেটেখাওয়া দিনমজুররা এখন বিচ্ছিন্ন। তারা সংগঠিত নয়। এককভাবে প্রতিবাদ করার অনেকের সাহস থাকলেও তারা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারছে না। অন্য দিকে সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেও শ্রমিকের সংসার চলছে না। মৌলিক ও নাগরিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। ঘরে ঘরে চলছে নীরব কান্না। এমতাবস্থায় বিএনপি নেতারা মনে করছেন, শ্রমজীবী মানুষকে যদি সাংগঠনিক কাঠামোয় আনা যায় তাহলে তারা অধিকার সচেতন হতে পারবে।
জানা গেছে, শ্রমিকদের অধিকার সচেতন করে তুলতে শুরুতে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার মধ্য দিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হবে। যা সব বিভাগে চলবে। এরপর অন্যান্য জেলায় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রত্যেক থানা-উপজেলা, পৌর এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এক দিনের এ কর্মসূচিতে আন্দোলন-সংগ্রামে শ্রমিকদের শক্তি ও দুর্বলতা নির্ধারণ, নিবন্ধিত শ্রমিক সংগঠনের সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা ও পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য করণীয় কৌশল নির্ধারণ করা হবে। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের তালিকা সংশ্লিষ্ট আয়োজক কমিটি কেন্দ্রের কাছে পাঠাবে। সেখানে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে।
কর্মশালার সার্বিক নির্দেশনায় রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক দলের প্রধান উপদেষ্টা নজরুল ইসলাম খান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে থাকছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। শ্রমিক দলের নেতারা জানান, বিভাগওয়ারি প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করার সিদ্ধান্তও রয়েছে। সারা দেশে কর্মশালা শেষে তারা কেন্দ্রীয় কাউন্সিলও করবেন। আগামী এক বছরের মধ্যে ওই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা আশা করছেন।
সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেছেন, বিবিএস-এর হিসাবে বর্তমানে দেশে-বিদেশে শ্রমিকের সংখ্যা সাত কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে এক কোটি শ্রমিক শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই কর্মরত আছেন। আর ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন গার্মেন্ট সেক্টরে। চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে দিশেহারা এসব শ্রমিক একটি প্লাটফর্ম খুঁজছে। কারণ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, লুটপাট, সর্বত্র দলীয়করণে শ্রমিকরা সুবিধাবঞ্চিত। এ অবস্থায় যদি উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে জাতীয় বেতন স্কেল, মজুরি কমিশন, সব ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা, শ্রমিক শোষণ বন্ধ, ধনী-গরিবের আয়-ব্যয়ের বৈষম্য দূরীকরণ, পাট, চিনিসহ বন্ধ মিলকারখানা চালু, শ্রমিকের জন্য রেশন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা, শ্রমিকের সন্তানদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থার দাবিসহ বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটাধিকার নিশ্চিত, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান সরকারবিরোধী এক দফা আন্দোলনে একটি ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক প্লাটফর্ম গড়ে তোলা সম্ভব।
শিমুল বিশ্বাস বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা অপরিহার্য। অতীতে ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি শ্রমিক আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তাও আলোচিত হয়েছে। দাবি আদায় এবং যেকোনো পরিবর্তন দ্রুত ও অপরিহার্য করতে ছাত্রদের পাশাপাশি শ্রমিকদের ভূমিকা লাগবে। ছাত্র এবং তরুণ বুদ্ধিজীবী সমাজের সাথে শ্রমিকদের যদি সংগঠিত করা যায় তাহলে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি বনে, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শ্রমিক সমাজকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা