কলকাতার খালে পাওয়া গেছে হাড় : আওয়ামী লীগ নেতা রিমান্ডে
এমপি আজিম হত্যা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভারতের কলকাতায় অপহরণের মামলায় গ্রেফতার ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এদিকে কলকাতার খালে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করেছে সিআইডি পুলিশ। তবে হাড়গুলো আনারের কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার পর। অপর দিকে এমপি আনার হত্যাকাণ্ড ও অপহরণে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার কাজী কামালের মতো বড় বড় ব্যবসায়ীসহ অনেকের নামই উঠে এসেছে। তবে সে সব নাম যাতে প্রকাশিত না হয় তার জন্য মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দফতরে শুরু হয়েছে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ। অভিযোগ রয়েছে, এসব সন্দেহভাজন নিজের নাম বাদ দিতে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আদালত সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ থেকে গ্রেফতার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতের কোনো একসময় ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়া এলাকা থেকে তাকে আটক করে ঢাকা থেকে যাওয়া ডিবির একটি দল।
এদিকে আনার অপহরণ ও হত্যার সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি দুই দেশের গোয়েন্দারা। রাজনৈতিক, ব্যবসায়িকসহ বেশ কিছু কারণ মাথায় নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এসব তদন্ত করতে গিয়ে একে একে উঠে আসছে বড় বড় ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাদের নামও। তবে এটি নিশ্চিত না হয়ে নামগুলো প্রকাশ করতে চাইছে না তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ ঝিনাইদহ থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। তবে এরই মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী ও নেতারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বিভিন্ন দফতরে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় নিখোঁজের জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। ২২ মে খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে খুন হয়েছেন তিনি।
এদিকে কলকাতা প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশের এমপি আনার খুনের তদন্তে নয়া মোড় নিয়েছে। বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশকিছু হাড়গোড়। মূলত মূল অভিযুক্ত সিয়াম হোসেনকে নেপাল থেকে গ্রেফতার করার পর বড়সড় সাফল্য পেল তদন্তকারী দল। বাগজোলা খালে তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া গেল মানবদেহের হাড়গোড়। তদন্তকারী দলের অনুমান, হাড়টি বাংলাদেশের নিখোঁজ এমপি আনারের।
নিউটাউনের একটি অভিজাত ফ্ল্যাটে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে প্রথমে খুন এবং তারপর তার দেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছিল, এই সন্দেহ আগেই করেছিলেন গোয়েন্দারা। কিন্তু পাওয়া যায়নি লাশ। আজিমের দেহাংশের খোঁজে ভাঙড়ের সাতুলিয়া ও কৃষ্ণমাটি এলাকায় বাগজোলা খালে তল্লাশি চালিয়েছিল সিআইডির বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী। বেশ কয়েকবার সেখানে অভিযান চালানোর পরও কিছু মেলেনি। এর পাশাপাশি ভারতীয় নৌসেনার পক্ষ থেকে একটি দল এসে তল্লাশি করেও কিছু উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি।
দীর্ঘদিনের তল্লাশির পর এবার এই ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। এমপি আনার খুনে অভিযুক্ত সিয়ামকে নেপাল থেকে গ্রেফতার করার পর তাকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভাঙড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকায় বাগজোলা খালের একটি অংশকে চিহ্নিত করেন সিআইডির অফিসাররা। এরপর যেখানে রোববার সকাল থেকেই শুরু হয় তল্লাশি। কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবেলা দল ও নৌসেনার যৌথ তল্লাশিতেই মিলল সাফল্য। বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার হয় হাড়গোড়। তবে তা বাংলাদেশের এমপি অনারের কিনা তা জানার জন্য ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। এদিন ভাঙড়ের পোলেরহাট থানা এলাকায় কৃষ্ণমাটিতে অবস্থিত বাগজোলা খালে সকাল থেকে তল্লাশি চালায় সিআইডি। সেখানেই এই হাড়গুলো উদ্ধার হয়। যদিও ডিএনএ প্রোফাইল করার পরেই তা আনারের কিনা জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে নিউটাউনের ওই আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে প্রায় চার কেজি ওজনের নরমাংসের খোঁজ পেয়েছিলেন তদন্তকারী অফিসাররা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা