১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

দারুণ জয়ে শুরু বাংলাদেশের

ম্যাচ সেরা রিশাদ হোসেনের আরেকটি শিকার। উইকেট নেয়ার পর এই লেগ স্পিনারকে অভিনন্দন সতীর্থদের : বিসিবি -


বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হার এরপর ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে লড়াই করতে না পারা বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। লঙ্কানদের বিপক্ষে খাদের কিনারা থেকে পাওয়া জয় বাংলাদেশের জন্য আরাধ্য এক স্বপ্ন জয়ের মতো। এই ম্যাচে ক্ষণে ক্ষণে ছিল নাটকীয়তা। বোলাররা অনেক আগ থেকেই দলের নিঃশ্বাস বাঁচিয়ে রেখেছিল। ব্যাটাররা যতটুকুই লড়াই করেছে তা বোলারদের ভালো বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে আটকে দেয়ার কারণে। তারপরও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারত না ব্যাটাররা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেও তাই ঘটল। বোলাররা আটকে দিলো অল্প রানে। কিন্তু ব্যাটারদের খারাপ ব্যাটিংয়ে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আগামীকাল ১০ জুন গ্রুপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও স্পিনার রিশাদ হোসেনের বোলিং নৈপুণ্যে জয় দিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ‘ডি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ২ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষেও জিততে পারেনি লঙ্কানরা। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রান করে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের মোস্তাাফিজ ও রিশাদ তিনটি করে উইকেট নেন। জবাবে ১৯ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৫ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে তৌহিদ হৃদয় ২০ বলে ৪০, লিটন দাস ৩৮ বলে ৩৬ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ১৬ রান করেন। গতকাল ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় ওভারেরই পেসার তাসকিন আহমেদের হাত ধরে ম্যাচে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে (১০) বোল্ড করেন তাসকিন। সতীর্থকে হারালেও রানের গতি বাড়ান আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। এতে ৫ ওভারেই ৪৮ রান করে শ্রীলঙ্কা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। মিড অফে তানজিমকে ক্যাচ দেন ৪ রান করা কামিন্দু মেন্ডিস।
মারমুখী ব্যাটিংয়ে হাফ-সেঞ্চুরির পথে ছিলেন নিশাঙ্কা। নবম ওভারে দলীয় ৭০ রানে নিশাঙ্কাকে সাজঘরের পথ দেখান কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ বলে ৪৭ রান করে কভারে শান্তকে ক্যাচ দেন নিশাঙ্কা। চতুর্থ উইকেটে ৩২ বলে ৩০ রানের জুটিতে শ্রীলঙ্কার রান শত রানে পৌঁছে দেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও চারিথ আসালঙ্কা। ১৪ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১০০ রান নিয়ে ভালো অবস্থায় ছিল লঙ্কানরা।
এরপর শ্রীলঙ্কা ইনিংসে ধস নামান স্পিনার রিশাদ হোসেন। ইনিংসের ১৫ ও নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন রিশাদ। প্রথমে বলে স্লগ সুইপে ডিপ স্কয়ার লেগে সাকিব আল হাসানকে ক্যাচ দেন ১টি ছক্কায় ১৯ রান করা আসালঙ্কা। পরের বলে আউটসাইড-এজড হয়ে স্লিপের সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক হাসারাাঙ্গা ডি সিলভা। প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্টিকের সম্ভাবনা জাগান রিশাদ; কিন্তু রিশাদকে বঞ্চিত করেন সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। এক ওভার পর নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন রিশাদ। ২৬ বলে ২১ রান করা ধনাঞ্জয়াকে স্টাম্প আউট করেন।

১০৯ রানে ৬ উইকেট পতনে চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা। এরপর ইনিংসের শেষ দিকে বাংলাদেশের তিন পেসার ৩ উইকেট শিকার করলে, ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা। দাসুন শানাকাকে ৩ রানে তাসকিন, থিকশানাকে শূন্যতে মোস্তাফিজ ও ম্যাথিউজকে ১৬ রানে শিকার করেন তানজিম। মোস্তাফিজ ১৭ রানে ও রিশাদ ২২ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। ১৮ ম্যাচের টি-২০তে এটিই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং রিশাদের। এ ছাড়া তাসকিন ২টি ও তানজিম ১টি উইকেট নেন।
১২৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই ওপেনার সৌম্যকে হারায় বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার আগেই স্পিনার ধনাঞ্জয়ার শিকার হন সৌম্য। পরের ওভারে তানজিদকে ৩ রানে বোল্ড করেন থুশারা। দলীয় ৬ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে টাইগাররা। দলকে চাপমুক্ত করতে তৃতীয় উইকেটে ২২ বলে ২২ রানের জুটি গড়েন লিটন ও শান্ত। ষষ্ঠ ওভারে শান্তকে ৭ রানে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন থুশারা। ২৮ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ক্রিজে এসেই শ্রীলঙ্কার বোলারদের ওপর চড়াও হন তৌহিদ হৃদয়। লিটনকে সাথে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৩৮ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়েন হৃদয়। হাসারাঙ্গার করা ১২তম ওভারের প্রথম তিন বলে তিনটি ছক্কা মারেন হৃদয়। কিন্তু চতুর্থ বলে লেগ বিফোর আউট হন ৪টি ছক্কা ও ১টি চারে ২০ বলে ৪০ রান করা এই ব্যাটার। দলীয় ৯১ রানে হৃদয় ফেরার কিছুক্ষণ পর হাসারাঙ্গার বলে লেগ বিফোর আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৩৬ রান করা লিটন।

দলের রান ১০০ পার করে ব্যক্তিগত ৮ রানে পাথিরানার বলে আউট হন সাকিব। ১৮তম ওভারে রিশাদ ১ ও তাসকিন শূন্যতে ফিরলে দলীয় ১১৩ রানে অষ্টম উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। শেষ ২ ওভারে ১১ রান দরকার পড়লেও, শ্রীলঙ্কার পেসার দাসুন শানাকার করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারেন মাহমুদুল্লাহ। ওভারের বাকি পাঁচ বল থেকে ৫ রান নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। ১টি ছক্কায় ১৩ বলে অপরাজিত ১৬ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। ১ রানে অপরাজিত থাকেন তানজিম। থুশারা ১৮ রানে ৪ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড : শ্রীলঙ্কা ইনিংস : ১২৪/৯ (নিশাঙ্কা ৪৭, কুশল ১০, কামিন্দু ৪, ধনাঞ্জয়া ২১, আসালঙ্কা ১৯, হাসরাঙ্গা ০, ম্যাথিউজ ১৬, শানাকা ৩, থিকশানা ০, পাথিরানা ০*, থুশারা ০*, তানজিম ১/২৪, সাকিব ০/৩০, তাসকিন ২/২৫, মোস্তাফিজুর ৩/১৭, রিশাদ ৩/২২, মাহমুদুল্লাহ ০/৪)।
বাংলাদেশ ইনিংস : ১২৫/৮ (১৯ ওভার) (তানজিদ ৩, সৌম্য ০, লিটন ৩৬, শান্ত ৭, হৃদয় ৪০, সাকিব ৮, মাহমুদুল্লাহ ১৬*, রিশাদ ১, তানজিম ১*, ধনাঞ্জয়া ১/২৪, থুশারা ৪/১৮, থিকশানা : ০/২৫, হাসারাঙ্গা ২/৩২, পাথিরানা ১/২৭, শানাকা ০/১১)।
ফল : বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : রিশাদ হোসেন (বাংলাদেশ)।


আরো সংবাদ



premium cement