এক দিন পেছাল শপথ জোট শরিকদের দাবির চাপে মোদি
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। আগামীকাল শনিবার তার শপথ নেয়ার কথা ছিল। তবে এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান পিছিয়ে যাচ্ছে। তবে লোকসভা নির্বাচনে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। দলটি পেয়েছে ২৪০ আসন। তাই ক্ষমতায় যেতে জোট ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সই (এনডিএ) ছিল মোদির শেষ ভরসা। সবশেষ সভায় এরই মধ্যে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। বুধবার এক বৈঠকে জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এ মতৈক্য হয়। তবে সরকারকে সমর্থনের বিনিময়ে নরেন্দ্র মোদির কাছে এক গুচ্ছ দাবি-দাওয়া জানিয়ে রেখেছেন এনডিএর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই শরিক- নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু। রাজ্যের জন্য বিশেষ প্যাকেজের পাশাপাশি নীতিশ তার দলের জন্য চার পূর্ণমন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ এবং চন্দ্রবাবু তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দু’টি প্রতিমন্ত্রীর পদ চেয়ে তদবির করেছেন। শুধু তাই নয়, স্পিকার পদও চাইছেন চন্দ্রবাবু।
ভারতের গণমাধ্যম আনন্দবাজার ও এনডিটিভি জানায়, গত মঙ্গলবার ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফল ঘোষণা শেষে দেখা যায় মোদির বিজেপি এবারের নির্বাচনে ২৪০টি আসনে জয় পেয়েছে। যেখানে ২০১৯ সালে তারা একাই ৩০৩টি আসন পেয়েছিল। বিজেপি ২৪০টি আসন পাওয়ার অর্থ হলো তারা লোকসভায় এবার আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে মোদি এবার এনডিএ জোটের প্রার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। বিজেপির এ এনডিএ জোটের সবচেয়ে বড় শরিক হলেন নীতিশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডু। তাদের দল যথাক্রমে ১৬ এবং ১২টি আসন পেয়েছে। সরকার গঠনে এই দুইজনের দল মোদিকে বড় সমর্থন দিচ্ছেন। এর বদলে অবশ্য নীতিশ চার পূর্ণমন্ত্রী ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ এবং চন্দ্রবাবু তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দু’টি প্রতিমন্ত্রীর পদ চেয়ে তদবির করেছেন। শুধু তাই নয়, স্পিকার পদও চাইছেন চন্দ্রবাবু।
বিজেপির সমস্যা বাড়িয়ে বিহারের চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি, জিতনরাম মাঁঝির হাম, উত্তরপ্রদেশের আপনা দল, মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্দের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিতে শুরু করেছে। লক্ষ্য বিজেপিকে চাপে রেখে বেশিসংখ্যক মন্ত্রিত্ব আদায় করে নেয়া। ভোটের আগে নীতিশের সাথে বিজেপির যে সমঝোতা হয়েছিল, তাতে এনডিএ ক্ষমতায় এলে নীতিশকে তিনটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে হাঁসফাঁস করা বিজেপির কাছে চারটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ চেয়েছেন নীতিশ। সূত্রের মতে, মূলত পরিকাঠামো সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলোর দিকে নজর নীতিশের। যার মধ্যে রয়েছে রেল, গ্রামোন্নয়ন, জলসম্পদের মতো মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি ২০২৩ সালে বিহারে নীতিশ আর্থসামাজিক সমীক্ষার পরে রাজ্যের প্রায় ৯৫ লাখ পিছিয়ে থাকা পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেছেন। আগামী বছর বিহারে নির্বাচন। তাই পাঁচ বছরের ওই প্রকল্পে কেন্দ্র যাতে চলতি অর্থবর্ষে নিজেদের অংশের টাকা বাড়ায়, সেই দাবি জানিয়েছেন নীতিশ।
অন্যদিকে চন্দ্রবাবুর দাবি, তিনটি পূর্ণমন্ত্রী ও দু’টি প্রতিমন্ত্রী পদ। নীতিশের মতোই জলসম্পদ, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে নিজেদের এমপিদের দেখতে চাইছেন চন্দ্রবাবু। তালিকায় রয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ও। এ ছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা হওয়ায় রাজ্যের আর্থিক চাপ সামলাতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি করে প্রায় এক দশক ধরে সরব নাইডু। সূত্রের মতে, এই মুহূর্তে রাজ্যের মাথায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার দেনা। যা মেটাতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছেন তিনি। ছোট দলগুলোর মধ্যে বিহারে চিরাগ পাসোয়ানের পেয়েছে পেঁটি আসন। তাদের দাবি, একটি পূর্ণ ও একটি প্রতিমন্ত্রী পদ। ওই রাজ্যেই একটি আসন পেয়েছে জিতনরাম মাঁঝির হাম। তারাও দাবি করেছে একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ।
এ দিকে মহারাষ্ট্রে সাতটি আসন পেয়েছে একনাথ শিন্ডের শিবসেনা। তারাও একজন পূর্ণ ও একজন প্রতিমন্ত্রীর দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিত্ব পেতে মুখিয়ে রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের আরএলডি দলের জয়ন্ত চৌধুরী, আপনা দলের অনুপ্রিয়া পাটেল, জেডিএসের এইচ ডি কুমারস্বামীরাও। আগে মোদি সরকারের যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল, এসব ছোট দলকে গুরুত্ব দিতেই দেখা যায়নি বিজেপিকে। পরিস্থিতির ফেরে এখন ছোট দলের দাবি মানা ছাড়া উপায় নেই বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দাবি না মানা হলে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর ভয় রয়েছে। যদিও বিজেপির এক নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, যদি নীতিশ বা নাইডুর একজনও বেরিয়ে যান, তা হলে সরকার পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে দু’জন যদি এনডিএ পরিত্যাগ করেন, তখন সমস্যা তৈরি হবে।
নির্বাচনে জয়ী কারাবন্দী ২ প্রার্থীর শপথ নিয়ে প্রশ্ন : এনডিটিভি জানায়, ভারতের লোকসভা নির্বাচনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত দুই প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। নবনির্বাচিত এই কারাবন্দী সংসদ সদস্যদের শপথ নিতে দেয়া হবে কি না এখন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আইন তাদের নতুন সংসদের কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধা দেবে; কিন্তু ভারতীয় সংবিধান তাদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার অধিকার দিয়েছে।
পাঞ্জাবের খাদুর সাহেব আসন থেকে জয়ী হয়েছেন শিখ প্রচারক অমৃতপাল সিং এবং জম্মু ও কাশ্মিরের বারামুল্লা আসন থেকে জয়ী হয়েছেন শেখ আবদুর রশিদ, যিনি ইঞ্জিনিয়ার রশিদ নামে সুপরিচিত। ইঞ্জিনিয়ার রশিদ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ৯ আগস্ট, ২০১৯ থেকে তিহার জেলে বন্দী আছেন। আর ২০২৩ সালের এপ্রিলে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেফতারের পর অমৃতপাল সিংকে অসামের ডিব্রগড় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। স্ব^তন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশীদ কারাগারে বন্দী অবস্থায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারিয়েছেন কাশ্মিরের হেভিওয়েট প্রার্থী ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহকে। দুই লাখের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আইনভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে।
অন্য দিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীর তকমা লাগা অমৃতপাল সিং খাদুর সাহেব কেন্দ্র থেকে এক লাখ ৯৭ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। কারাবন্দি দুই প্রার্থীই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন, এটি স্পষ্ট। এখন প্রশ্ন উঠছে, কারাবন্দী নবনির্বাচিত এই দুই সংসদ সদস্যকে শপথ নিতে দেয়া হবে কি না; উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে কিভাবে তারা শপথ নেবেন।
এই বিষয়টির সাথে জড়িত আইনি বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং লোকসভার সাবেক মহাসচিব পিডিটি আচারি এ ধরনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধানগুলো অনুসরণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়া সাংবিধানিক অধিকার।
কিন্তু যেহেতু তারা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, তাই ইঞ্জিনিয়ার রশিদ এবং অমৃতপাল সিংকে অবশ্যই শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সংসদে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাইতে হবে। আর শপথ নেয়ার পর তাদের আবারো কারাগারে ফিরতে হবে। আইনি জটিলতা আরো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আচারি সংবিধানের ১০১(৪) অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দেন, যেখানে সভাপতির পূর্বানুমোদন ছাড়া পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে অনুপস্থিতির কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, শপথ নেয়ার পর তারা স্পিকারকে চিঠি লিখে পার্লামেন্টে উপস্থিত হতে না পারার কথা জানাবেন। এরপরে স্পিকার তাদের অনুরোধগুলো সদস্যদের অনুপস্থিতি সম্পর্কিত হাউজ কমিটির কাছে প্রেরণ করবেন। ওই সদস্যকে পার্লামেন্টের কার্যক্রমে অনুপস্থিত থাকতে দেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কমিটি সুপারিশ করবে। এরপরে সুপারিশটি স্পিকারের মাধ্যমে হাউজে ভোটের জন্য রাখা হবে।
যদি ইঞ্জিনিয়ার রশিদ বা অমৃতপাল সিংকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ন্যূনতম দু’বছরের জন্য কারাদণ্ড দেয়া হয়, তবে ২০১৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে তারা অবিলম্বে লোকসভায় তাদের আসন হারাবেন; যেখানে বলা হয়েছে যে এই জাতীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সংসদ সদস্য এবং বিধায়কদের অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্তের ফলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৪) ধারা বাতিল হয়ে যায়, যা এর আগে দোষী সাব্যস্ত সাংসদ ও বিধায়কদের দণ্ডাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য তিন মাস সময় বরাদ্দ করেছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা