১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শ্রমজীবীদের ৪৩.৮৯ শতাংশই কৃষি কাজে

-

দেশের ১০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী কাজে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত ৫৭.৪১ শতাংশ। মোট কাজে নিয়োজিত এই জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ৪৩.৮৯ শতাংশই কৃষি খাতে কর্মরত রয়েছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। আর্থ-সামাজিক ও জনমিতি জরিপ ২০২৩ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনগোষ্ঠীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭.০৪ শতাংশ সেবা খাতে নিয়োজিত। পুরুষ সর্বোচ্চ ৪৩.০৭ শতাংশ কর্মরত সেবা খাতে এবং ৫৯.৩৬ শতাংশ কৃষি খাতে কর্মরত। এ ছাড়া জরিপে উঠে এসেছে জাতীয় পর্যায়ে ৩৩.১৫ শতাংশ ব্যক্তির নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানে মৌখিক হিসাব রাখা হয়।

বিবিএসের সদ্য প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা গেছে, শ্রমশক্তি হিসেবে তারা বলছে, একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার যে অংশ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত বা নিয়োগ পেতে ইচ্ছুক ওই অংশটিই সংশ্লিষ্ট দেশের শ্রমশক্তি। সামগ্রিকভাবে বলা যায়, কর্মে নিয়োজিত ও বেকার উভয় জনগোষ্ঠীর সমষ্টিই শ্রমশক্তি। উল্লেখ্য, এখানে ১০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী সব নাগরিককে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার হলো, শ্রমশক্তির পরিমাপকে শতকরা হিসাবে প্রকাশই শ্রমশক্তির হার। একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়ার জন্য শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ হার দ্বারা কাজ করার উপযুক্ত বয়সের ব্যক্তির সাপেক্ষে পণ্য বা সেবার উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমের সরবরাহ পরিমাপ করা হয়।

এখানে জরিপের তথ্য বলছে, শ্রমশক্তিতে নিয়োজিতদের মধ্যে পুরুষ হলো ৭৩.৭৫ শতাংশ এবং মহিলা ৪১.৪১ শতাংশ। শ্রমশক্তির সর্বোচ্চ হার হলো রাজশাহীতে ৬১.১১ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সিলেট বিভাগে ৫১.৩৭ শতাংশ। তবে দেশে কর্মসংস্থানের হার হলো ৯৬.৭০ শতাংশ। যেখানে পুরুষ ৯৬.৪১ শতাংশ এবং নারী ৯৭.২১ শতাংশ। খাত ভিত্তিক কর্মজীবী জনগোষ্ঠীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭.০৪ শতাংশ সেবা খাতে নিয়োজিত। এ হার পল্লীতে ২৮.৬৫ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৫৫.৫৭ শতাংশ। জনগোষ্ঠীর ১৯.০৭ শতাংশ শিল্পখাতে কর্মরত, যা পল্লী এলাকায় ১৪.৫৯ শতাংশ ও শহরে ২৮.৯৬ শতাংশ। বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, কাজে নিয়োজিত মোট পুরুষ জনসংখ্যার সর্বোচ্চ ৪৩.০৭ শতাংশ সেবা খাতে কর্মরত। এ ছাড়া ৩৪.৯৭ শতাংশ কৃষি খাতে এবং ২১.৯৫ শতাংশ শিল্প খাতে নিয়োজিত। অপর দিকে কাজে নিয়োজিত মোট নারীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৯.৩৬ শতাংশ কৃষি খাতে কর্মরত, পাশাপাশি ২৬.৫৯ শতাংশ সেবা খাতে এবং ১৪.০৬ শতাংশ শিল্প খাতে নিয়োজিত।

দেশের ১০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী কাজে নিয়োজিত মোট জনসংখ্যার মধ্যে সর্বোচ্চ ২৩.১৯ শতাংশ নিজস্ব ব্যবসা কার্যক্রমে (নিয়মিত কর্মচারী ব্যতীত নিজস্ব ব্যবসায়/কৃষি কার্যক্রম) নিয়োজিত, যা পল্লীতে ২৩.৪৯ শতাংশ ও শহরে ২২.৫২ শতাংশ। এ ছাড়া মোট কাজে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২৯.৬১ শতাংশ কর্মচারী হিসেবে, ১০.৫২ শতাংশ অকৃষি দিনমজুর হিসেবে, ২৫ শতাংশ পারিবারিক কৃষি কাজে বিনা বেতনে সাহায্যকারী হিসেবে এবং ৭.৩৯ শতাংশ কৃষি দিনমজুর হিসেবে কর্মরত রয়েছে।

জনমিতি জরিপে বলা হয়েছে, দেশের ১০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী কাজে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ ৩৭.৫৪ শতাংশ পেশায় কৃষিজ, বনজ ও মৎস্যখাতে দক্ষ কর্মী হিসেবে কর্মরত। এ হার পুরুষের ক্ষেত্রে ২৫.৬০ শতাংশ এবং নারীর ক্ষেত্রে ৫৮.২৩ শতাংশ। এ ছাড়া মোট কর্মরত জনবলের ১৭.৪৫ শতাংশ দক্ষতা-নির্ভর পেশা ও এ সম্পর্কিত পেশাকর্মী, ১৬.১৫ শতাংশ সেবা ও বিক্রয় কর্মী এবং ৯.৭৪ শতাংশ প্রাথমিক পেশার কর্মী। বিবিএস বলছে, সাধারণ অর্থে পেশা বলতে প্রধান দায়িত্ব ও কাজকে বোঝানো হয়েছে।

বিবিএসের তথ্য বলছে, কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি এবং বেতন/ মজুরি/ মুনাফা/ আয় গ্রহণের মাধ্যম নানা রকম। দেখা যায়, সর্বোচ্চ ৩৬.৮৭ শতাংশ ব্যক্তির কর্মরত প্রতিষ্ঠানে লিখিত হিসাব রাখা হয়, যা পল্লীতে ২৬.৩৭ শতাংশ ও শহরে ৫৬.৫৯ শতাংশ। অন্য দিকে জাতীয় পর্যায়ে ৩৩.১৫ শতাংশ ব্যক্তির কর্মরত প্রতিষ্ঠানে মৌখিক হিসাব রাখা হয়। আর ২৯.২৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের হিসাব সংরক্ষণ করা হয় না। এ ছাড়া কাজে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭২.১৬ শতাংশ বেতন/ মজুরি/ মুনাফা/ আয় নগদ টাকায় গ্রহণ করে, যা পল্লী ৭৯.৭৬ শতাংশ ও ৬১.৭৬ শহরে। আর দেশের ২১.৫১ শতাংশ কর্মরত ব্যক্তি ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ৫.৬৭ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন/ মজুরি/ মুনাফা/আয় গ্রহণ করে।


আরো সংবাদ



premium cement