চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোনো সমস্যার সমাধান দেবে না : সিপিডি
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০৫
বর্তমান চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, দুঃখজনক হলো, অপ্রদর্শিত বা কালো টাকার ওপর যে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সেই টাকাকে সাদা করা যাবে সেই প্রস্তাবনা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য না। এটা নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। সামাজিক ন্যায়ের দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য নয়। এটা থেকে সরকার যে খুব একটা কর আহরণ করতে পারে সেটিও নয়।
জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশের পর গতকাল রাজধানীর সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত বাজেট পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন।
সিপিডির নির্বাহী ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমাদের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ বাজেট এটি। বর্তমানে আমাদের চলমান যে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে সেটি মোকাবেলা করার জন্য বাজেট একটি হাতিয়ার। বাজেটের মাধ্যমে সম্পদের বণ্টন করা হয়। বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙা করা হয়। তিনি বলেন, গত দুই অর্থবছর ধরে দেশের অর্থনীতি যেহেতু একটা চাপের মধ্যে রয়েছে, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ভঙ্গুর, সেই জন্য আমরা সবাই তাকিয়ে ছিলাম আগামী অর্থবছরের বাজেটটা কেমন হয়।
সিপিডি নির্বাহী বলছেন, প্রথমে আমাদের দৃষ্টি ছিল মূল্যস্ফীতি কমানো এবং সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়া। আমরা করের ধাপে কিছু পরিবর্তন আনতে আমাদের প্রস্তাবে বলেছিলাম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড একটা বিন্যাস করেছে। সাড়ে ৩ লাখ টাকা যে করমুক্ত সেটা ঠিক অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে এক লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, তার পরের এক লাখ টাকার ওপর ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, করের ধাপ ও কর হারের পরিবর্তনগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।
ড. ফাহমিদা আরো বলেন, মূল্যস্ফীতির হার কমানোর জন্য সরকার বেশ কিছু পণ্যের ওপর কর ছাড়ের প্রস্তাব করেছে। এটাও ইতিবাচক। দেখা যায় কর কমানোর পরেও সেটা বাজারে কমে না। সেই হারে জিনিসপত্রের দামও কমে না। করের দোহাই দিয়ে উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রি চলতে থাকে। দরিদ্র যারা এবং নিম্ন আয়ের মানুষ প্রচণ্ডভাবে কষ্টে আছে জিনিসপত্রে দামের কারণে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর হার বাজেটের আকার ও জিডিপির অনুপাতে সামান্য একটু বেড়েছে। তবে বাজেটের দিকে দেখলে চলতি অর্থবছর ছিল ১৭ শতাংশ। এ বছর সেটা হয়েছে ১৭.০১ শতাংশ। জিডিপির অংশ হিসেবে গত বছর ২.৪ শতাংশ থেকে এবার ২.৪৩ শতাংশ হয়েছে। তবে এখানে অনেক কিছু যুক্ত করাতে এটি বেড়েছে। পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ও কৃষি ভর্তুকি বাদ দেয়া হলে তাহলে এটা ৯ শতাংশের বেশি হবে।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজস্ব বাজেটে এনবিআরকে যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় তা কখনোই পরিপালন হয় না। কারণ তাদের ওপর এটি চাপিয়ে দেয়া হয়। চলতি অর্থবছরের যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে এটার তুলনায় আগামী অর্থবছরের ২৭ শতাংশ বেশি। বর্তমানে যেভাবে আদায় হচ্ছে এভাবে চললে আগামী কয়েক মাসে পূরণ করা সম্ভব হবে না। লক্ষ্যমাত্রাটা বাস্তব সম্মতভাবে করা উচিত। এমন কিছু কিছু জায়গায় ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে যা বাস্তবপক্ষে ভোক্তার ওপর পড়বে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির চাপে, তারপর বাড়তি ফি।
বাজেটে বিভিন্ন সূচকে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবসম্মত কি না? এমন প্রশ্ন তুলে ফাহমিদা বলেন, জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা, বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা এ রকম সবগুলো ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, এগুলোর সাথে বাস্তবতার ছোঁয়া নেই। মনে হচ্ছে অনেকটাই আইএমএফ যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দিয়েছে, সেটার কাছাকাছি নেয়ার একটা চেষ্টা। এখানে যৌক্তিক কোনো চিন্তাভাবনা করা হয়েছে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশ কিছু পণ্যের ওপর সরকার কিছু কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা ভালো প্রস্তাব। তবে দেখার বিষয় হলো এটা কিভাবে বাস্তবায়ন হয়। কারণ দেখা যায় কর কমালেও সেটার বাজারে প্রভাব পড়ে না। এজন্য বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিংটা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক নিরাপত্তাখাতের বরাদ্দে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এর মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের অর্থ, কৃষিখাতের ভর্তুকি এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে এটাকে বড় বরাদ্দ দেখা যায়। এগুলো বাদ দিলে দেখা যায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা