১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সংবাদ সম্মেলনে সুজন

আস্থাহীনতায় নির্বাচন এখন নির্বাসনে গেছে

-

- আমি বলব নির্বাচনই নাই : ড. শাহদীন মালিক
- প্রার্থীদের ৬৭.৬৬ শতাংশ ব্যবসায়ী, ১১.২৬ শতাংশ কৃষিজীবী

চলমান উপজেলা নির্বাচনটি হলো নাই-এর নির্বাচন, ভোটার নাই, বিরোধী দল নাই এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাও নাই। নির্বাচন যে নির্বাসনে চলে গেছে এটা তারই প্রতিফলন। এর মূল কারণ হলো আস্থাহীনতা বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতার ফলে মানুষ নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আর ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, নির্বাচন শুধু নির্বাসনেই যায়নি, আমি বলব নির্বাচন-ই নাই। নির্বাচন অনুষ্ঠানের কিছু লোকদেখানো অনুশীলন হচ্ছে। সুজনের তথ্য বলছে, সার্বিকভাবে এক হাজার ৮৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে এক হাজার ২৬৮ জন বা ৬৭.৬৬ শতাংশ ব্যবসায়ী, ২১১ জন বা ১১.২৬ শতাংশ কৃষিজীবী, ৫২ জন বা ১২.১৯ শতাংশ চাকরিজীবী এবং ১১২ জন ৫.৯৮ শতাংশ আইনজীবী।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের হলফনামার বিভিন্ন তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরে গতকাল নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেনের সভাপতিত্বে ও সুজন স¤পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সুজন কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ প্রমুখ। লিখিত প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজনের প্রধান কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
উপস্থাপনায় দিলীপ কুমার সরকার বলেন, আইন অনুযায়ী রাজনৈতিক দলভিত্তিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনেকটা নির্দলীয় অবয়ব পেয়েছে। কেননা ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না। দলীয় কৌশলের কারণে দলটির নেতৃবৃন্দ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। প্রশ্ন হলো কেন দলটি দলীয় প্রতীক ছাড়া এই নির্বাচন করছে?

তিনি বলেন, ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আগে থেকেই ভেবেছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ তাদের সমমনা দলগুলো এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে না। সেক্ষেত্রে ভোট পড়ার হার কম হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই অধিকসংখ্যক প্রার্থী যেন নির্বাচনে অংশ নেয়; প্রার্থী বেশি থাকার কারণে ভোট যেন বেশি পড়ে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ তার কোনো কিছুই এ নির্বাচনে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই ধাপে ধাপে সংবাদ সম্মেলন না করে শেষ ধাপের পর একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে।
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ভোটের যে হার দেখানো হচ্ছে মানুষ তাও বিশ্বাস করছে না। আমরা সামরিক শাসকের অনেক সমালোচনা করি, কিন্তু সামরিক শাসকরা যে স্থানীয় নির্বাচনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে গেছে তা এখনো আঁকড়ে ধরে আছি। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যই এই ব্যবস্থা এখনো চালু রাখা হয়েছে। জমিদারি ব্যবস্থার প্রতি আমাদের যে বাসনা নির্বাচনের মাধ্যমে সে বাসনাই চরিতার্থ করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।
৪৫৯টি উপজেলার ১,৮৭৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর তথ্য তুলে ধরে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সর্বমোট এক হাজার ৮৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৬১ জনের বা ৮.৫৯ শতাংশ প্রার্থীর বার্ষিক আয় ৫০ লাখের বেশি টাকা। বছরে কোটি টাকার অধিক আয় করেন ৭৬ জন প্রার্থী বা ৪.০৬ শতাংশ। ৮৩৭ জনের বা ৪৪.৬৬ শতাংশ প্রার্থীর বার্ষিক আয় পাঁচ লাখ টাকার কম। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সর্বমোট এক হাজার ৮৭৪ জন প্রার্থীর মধ্যে ৫২৬ জন ২৮.০৭ শতাংশ ঋণগ্রহীতা।

 


আরো সংবাদ



premium cement