১৭ জুন ২০২৪
`

উপকূলে রেমালের আঘাত

২ জনের মৃত্যু : দুর্গত এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে পায়রা বন্দর এলাকায় জলোচ্ছ্বাস : রবিন আহম্মেদ -

ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূল অতিক্রম করেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর থেকে উপকূল অতিক্রম শুরু করে। আজ সোমবার সারা দিনে ঘূর্ণিঝড়ের শেষ অংশটুকু সাগর থেকে উপকূলে উঠে যেতে পারে। এটি ছিল একটি প্রবল শক্তিসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই তীব্র হাওয়ার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের পানি উঠতে শুরু করে। ঘূর্ণিঝড়টির মূল অংশ স্থলভাগে উঠার সময় উপকূলীয় এলাকা ও এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসও হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ক্ষতির কথা আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন। তবে ঝড়টির প্রভাব শেষ হয়ে গেলে ক্ষতির সম্পূর্ণ চিত্র ফুটে উঠবে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত জারি করে আবহাওয়া অফিস। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সাবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। তবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার উঠে যাওয়ার আশঙ্কা নির্দেশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়ার মডেল পূর্বাভাস বলে জানিয়েছেন কানাডাপ্রবাসী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ। কিন্তু বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর বলেছে, দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। মোস্তফা কামাল জানান, ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের পেছনের অর্ধেক অংশ গতকাল রোববার রাত ১২টার পর থেকে উপকূল অতিক্রম করা শুরু করে এবং আজ সোমবার সকাল ৬টার মধ্যে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম শেষ করতে পারে।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস রেমালের ১৪ নম্বর বুলেটিনে জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমদ্র বন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১৪৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে বৃষ্টিসহ দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত ছিল। এটি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে গতকালই সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় মংলাবন্দরের নিকটবর্তী পশ্চিমবঙ্গের সাগর আইল্যান্ড (সাগর দ্বীপ) থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করেছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র অতিক্রমের পর নিম্নভাগ অতিক্রম করতে থাকে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের গতি গতকাল রোববার সকাল ৯টার পর থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সামনে এগিয়ে যাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার এবং এটা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। এটি হওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, গভীর সমুদ্র থেকে উপকূলের যত কাছে এসেছে পানির তাপমাত্রা তত বেশি বেড়েছে। পানির তাপমাত্রা কিছুটা বেশি পাওয়ায় গতকাল রোববার সকাল ৯টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড়টির গতি কিছুটা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি যখন সাগর থেকে উপকূলে উঠার আগ পর্যন্ত খুলনা এলাকার নদীগুলোতে জোয়ার থাকায় কারণেও রেমালের গতি আরো কিছুটা বেড়েছিল বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।
মোস্তফা কামাল বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির ৪০ থেকে ৬০ ভাগের বেশি অংশ বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। বাকি অংশটা পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর জেলার ওপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরগুনা জেলার ওপর দিয়ে স্থলভাগে উঠেছিল। তবে খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরগুনা জেলার ওপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ১৪ নম্বর বুলেটিনে জানিয়েছে, পায়রা, মংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং এদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকেও ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহকেও ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার নদীবন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ মহাবিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলেছে।
এ ছাড়া প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও এদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
২ জনের মৃত্যু : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গতকাল দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান রোববার রাত সাড়ে ৯টায় আবহাওয়া অধিদফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এর মধ্যে একজন মারা গেছেন পটুয়াখালীতে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে মো: শরীফুল ইসলাম (২৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া শরীফুল কলাপাড়া উপজেলার অনন্তপাড়া গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে।
এছাড়া সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। নিহত শওকাত মোড়ল (৬৫) ওই ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে। তার পুত্রবধূ আছমা খাতুন জানান, রোববার সন্ধ্যার দিকে শ্বশুর শওকাত মোড়ল স্ত্রীকে নিয়ে নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে রাস্তায় পড়ে গিয়ে মারা গেছেন।
দুর্গত এলাকায় আজ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ : ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে দুর্গত এলাকায় আজ সোমবার সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।
গতকাল আবহাওয়া অধিদফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সোমবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করা হয়েছে। তবে, কর্মচারী যারা আছেন তাদের সার্বক্ষণিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে করে আশ্রয়ের জন্য কোনো লোক এলে তারা যেন সহযোগিতা পায়। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস আজ বন্ধ থাকবে।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে জোয়ারে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন। রোববার বিকেলে সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলায় হড্ডা গ্রামের কয়রা নদীতে ভেসে এসেছে একটি হরিণ শাবক। পরে বনরক্ষীরা হরিণ শাবকটিকে নিয়ে বনের মধ্যে টহল ফাঁড়ির পুকুরের উঁচু পাড়ে ছেড়ে আসেন। জোয়ারের পানিতে বন বিভাগের স্থাপনার তেমন কোনো ক্ষতি না হলেও বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত জানাতে পারেননি বন কর্মকর্তারা।
ঘূর্ণিঝড়কে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় : ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হলে তখন তাকে কেবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলে। গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে গেলে তখন তাকে প্রবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তখন তাকে ‘সুপার সাইক্লোন’ বলে স্জ্ঞংায়িত করা হয়।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গতকাল রোববার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের জেটিগুলো জাহাজশূন্য করার পাশাপাশি জাহাজে পণ্য ওঠানামাসহ সব ধরনের অপারেশনাল কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা হয়। জারি করা হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা এলার্ট-ফোর। বন্দরের জেটি থেকে ১৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ এবং বহির্নোঙর হতে ৪৯টি মাদার ভেসেল গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে কয়েক শ’ লাইটার জাহাজসহ ফিশিং ট্রলার ও মাছ ধরার নৌকাগুলো। পাশাপাশি বিমান ওঠানামা (ফ্লাইট অপারেশন) বন্ধ রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। শিডিউল বাতিল হয়েছে ১৩টি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের গতকাল বেলা ১টা নাগাদ জেটি ও বহির্নোঙর হতে সব বাণিজ্যিক জাহাজ গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌযানগুলোকে (লাইটার জাহাজ) কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট হতে শাহ আমানত সেতুর উজানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গতকাল বঙ্গোপসাগর ছিল উত্তাল। মাঝারি আকারের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল বিস্তীর্ণ উপকূলজুড়ে। সাথে বাতাসের তীব্রতাও বাড়ছিল। সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব দেখা না গেলেও দুপুরের পর আবহাওয়া কিছুটা গুমোট হয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরাতে থাকে।
কক্সবাজার অফিস জানায়, গতকাল সকালে সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই তিন ফুট বৃদ্ধি পায়। দুপুরে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কক্সবাজারের বেশ কিছু নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। বিশেষ করে কক্সবাজার সদরের কুতুবদিয়া পাড়া সমিতি পাড়াসহ জেলার ১০টি গ্রামে সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সন্ধ্যায় উপকূল এলাকায় ৫ থেকে ৬ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাসের কথা বলেছে আবহাওয়া অফিস। দ্বীপের বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এক ব্রিফিংয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় কক্সবাজারে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন। এ জন্য কক্সবাজার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে এক জরুরি সভা করেছে।
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়া জেলার ১৫টি উপজেলায় ১০৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়। প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ শিশুর নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া এসব উপজেলায় ২২১টি মেডিক্যাল টিমের মধ্যে ১২৮টি মেডিক্যাল টিম খোলা হয়েছে।
হাতিয়া (নোয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, হাতিয়ার সাথে সব ধরনের নৌযোগাযোগ বন্ধ করা হয়। এতে হাতিয়ার দুই-অংশে নলচিরা-চেয়ারম্যানঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার নলচিরা ঘাটে গিয়ে দেখা যায় শত শত যাত্রী নদী পারাপারের অপেক্ষায় বসে থাকবেন।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ। অর্থাৎ ছয় ভাগের অগ্রগামী অংশের আঘাতে উপকূল প্লাবিত হয়েছে। প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ছে বেড়িবাঁধের ওপর। বাঁধের কিছু অংশ ধসে পানি ঢুকেছে আশপাশের গ্রামগুলোতে। জেলা শহরে হালকা বৃষ্টি হলেও শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।
সুন্দরবনসংলগ্ন চুনা, খোলপেটুয়া, মাংলঞ্চ, যমুনা নদী ও কপোতাক্ষ নদে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী, দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা, পদ্মপুকুর, আটুলিয়া, কৈখালী, রমজাননগর, মুন্সিগঞ্জ উপকূলীয় এলাকায় পানি প্রবেশ করে। গাবুরার ডুমুরিয়া এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, বিকেল ৫টার দিকে বাঁধ ধসে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। চাঁদনীমুখা এলাকায় নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ধসে আশপাশের গ্রামে ঢুকছে। গাবুরার ৯ নম্বর সোরা, হরিষখালী এবং ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বরিশাল থেকে নৌ ও আকাশ পথে যান চলাচল বন্ধ করা হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে গতকাল রোববার সকাল থেকে এই দুইপথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বরিশাল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রোববার বরিশাল থেকে একটি ফ্লাইট ছিল। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সেটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দরে সব বিমান ওঠানামাও স্থগিত করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় ফ্লাইট চালু করা হবে।
বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত : ঘূর্ণিঝড় রেমলের প্রভাবে বরিশাল নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে পানিবন্দী অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে নগরীর অসংখ্য মানুষ। তাছাড়া নগরীর বেশ কিছু প্রধান সড়কে নদীর পানি উঠে যাওয়ায় পথচারীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরের রূপতলীর জিয়ানগর, খ্রিষ্টানপাড়া, পলাশপুর, বেলতলা, মোহাম্মদপুর, রসুলপুর, দক্ষিণ রূপাতলী, ভাটিখানা, কাউনিয়া, প্যারারা রোড, সদর রোড, কেডিসি, ত্রিশ গোডাউন, দপদপিয়া, কালিজিরা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় তারা ঘরবন্দী রয়েছে। এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সড়ক চলে গেছে পানির নিচে।
আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলীর নিম্নাঞ্চল এবং আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া এলাকার নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে তিন গ্রাম তলিয়ে গেছে। এতে মানুষের ঘরবাড়ি ও পুকুর তলিয়ে বেশ ক্ষতি হয়েছে।
জানা গেছে, বঙ্গোপসারগর তৎসংলগ্ন পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া এলাকার ৪০ মিটার নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ভেতরে পানি প্রবেশ করে ঘোপখালী, উত্তর ঘোপখালী ও পশুরবুনিয়া গ্রাম তলিয়ে গেছে। ওই তিন গ্রামের মানুষ পানিতে ভাসছে। ঘরবাড়ি ও পুকুর পানিয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আফরাফুল আলম বলেন, পানি বৃদ্ধি পেয়ে আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙ্গা এলাকা পরিদর্শন করেছি। সব মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে কাজ করছি।
খুলনা ব্যুরো জানায়, গতকাল রোববার দুপুরের পর থেকেই উপকূলীয় এলাকার মানুষেরা সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়া শুরু করেন। সন্ধ্যা নাগাদ কেন্দ্রগুলো পূর্ণ হয়ে যায়।
অপরদিকে গতকাল সকাল থেকেই দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করা হয়। খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে বিভাগীয় মনিটরিং সেল। কয়রায় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়ে যায়। নদী উত্তাল ছিল। মেঘলা বাতাসের সাথে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি হয়।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের-২ (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, কয়রা, পাইকাছা ও দাকোপ উপজেলার ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে। খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, গতকাল বেলা ১১টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় এলাকার ৪৭ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়।
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর প্রভাবে পিরোজপুর জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। জেলার কঁচা, বলেশ^র, কালিগঙ্গাসহ বিভিন্ন নদীর পানি জোয়ারে এক থেকে দেড় ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বাড়ছে উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরের নদীপাড়ের পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর ক্ষতি এড়াতে শনিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কাউখালী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, কাউখালী উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝড়োবাতাস বয়ে যাচ্ছে ও নদ নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন/ চার ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের তীব্রতা বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে ধেয়ে আসায় বিকেল থেকে কাউখালী উপজেলার পাঁচটি নদী তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার দুর্গত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে।
গতকাল বিকেল পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক পাঁচ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নেয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে ও নদ নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় পিরোজপুর-স্বরূপকাঠির সড়কের কাউখালীর আমরাজুড়ী ফেরির গ্যাংওয়ে ডুবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া পানি উঠে কাউখালীর সোনাকুর ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট আসে পাশে সড়কে হাঁটু সমান পানি উঠে গেছে। ইতোমধ্যে কাউখালী নৌবন্দরে বহু জাহাজ এসে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নোঙর করেছে।
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) সংবাদদাতা জানান, পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতের আগেই নদীর ঢেউয়ের প্রবল তোড়ে উপকূলীয় রক্ষা বাঁধে (ভেড়িবাঁধে) ভাঙন দেখা দিয়েছে। উত্তাল কচা নদীর সাঈদখালী এলাকার সাঈদখালী বাজারের পূর্বপাশের বেড়িবাঁধে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। সম্পূর্ণ বাঁধ ভেঙে গেলে বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়ে এলাকাবাসী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বেড়িবাঁধ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে আতঙ্কের ছাপ দেখা গেছে। গতকাল বিকেলে সরেজমিন সাঈদখালী বেড়িবাঁধে গিয়ে দেখা গেছে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধ এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
রফিকুল ইসলাম, রাঙ্গাবালী পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ফুঁসে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। উপকূলের চরাঞ্চলে আছড়ে পড়ছে বড় বড় ঢেউ। ঢেউয়ের তান্ডবে ভেঙে যাচ্ছে আশপাশের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি আর তীব্র ঢেউয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙে রাঙ্গাবালী উপজেলার চরআন্ডা, মোল্লা গ্রাম, হিন্দু গ্রাম ও চালিতাবুনিয়ার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও বেড়িবাঁধের বাইরের গ্রাম কাউখালী চরের মানুষ জোয়ারের পানিতে ডুবে আছে। এসব এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। ঘর থেকে বের হতে পারছেন না অনেকে। এ দিকে কলাপাড়ায় কাউয়ারচর এলাকায় ফুফু ও বোনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে যাওয়ার সময় জোয়ারের পানিতে ডুবে মোঃ শরিফ নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভোর থেকে দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে দমকা হাওয়ার পাশাপাশি গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। এ ছাড়া নদীতে পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মহেশখালীর ৪টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। মহেশখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সিকদারপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। এ ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণকারী মূল বাঁধের বেশ কিছু এলাকা ঝুকিঁপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পাড়ের মানুষ। এ অবস্থায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ঝুকিঁপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে এক টানা মেরামতের কাজ করছেন শ্রমিকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মকসুদ মিয়া। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীকি চাকমা বলেন, বেড়িবাঁধের অনেক জায়গা ভেঙে গেছে। পানি কমলে তা মেরামত করা হবে।
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভায় হালদা নদীর তীরবর্তী বুড়িশ্চর, দক্ষিণ মাদার্শা ইউনিয়ন ও ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ত্রিপুরাপল্লীকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম মশিউজ্জামান।
নোয়াখালী অফিস জানায়, নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সাথে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ঘাটে আসা যাত্রীরা। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার বিরাজ করায় হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত শনিবার বিকেল থেকে এ রিপোর্ট লেখা নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ মোকাবেলায় ৪৬৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি উপকূলে দুর্যোগকবলিতদের সহযোগিতার জন্য রেড ক্রিসেন্ট ও সিপিপির আট হাজার ৯১০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশীষ চাকমা বলেন, হাতিয়ার বিভিন্ন নৌ রুটে সি-ট্রাক, ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীদের জানমাল ও নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত হাতিয়ার সাথে সব চলাচল বন্ধ থাকবে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে পুনরায় চলাচল করবে।
পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর নদনদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে ৪ থেকে ৫ ফুট। এর ফলে কোথাও ভাঙা বাঁধ ভেঙে, কোথাও বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। প্লাবিত হয়েছে নিচু এলাকাগুলোও। নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি এলাকার বেড়িবাঁধ। জানা গেছে, সকাল দশটা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত নদ-নদীতে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়। এই সময় ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা, চিনাবুনিয়া ও গরুভাঙা গ্রাম প্লাবিত হয়। অন্যদিকে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা গ্রামেও অনেক আগ থেকেই ভেঙে থাকা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়।
এছাড়া চরমোন্তাজ ইউনিয়নের বউবাজার, দক্ষিণ চরমোন্তাজ, হিন্দু গ্রাম, মিটার বাজার ও নয়ারচর এলাকার কোথাও বাঁধ ভেঙে এবং কোথাও বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে ওইসব গ্রামে। শুধু তা-ই নয়, উপজেলার বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা এবং বেড়িবাঁধের বাহিরের এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হয়ে যায়। এ দিকে মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
রামগতির চরআবদুল্লাহ, বয়ারচর, তেলিরচর, চরগজারিয়া, বড়খেরী,কমলনগর উপজেলার লুধুয়া, মাতাব্বরহাট, নাছিরগঞ্জ, রায়পুর উপজেলার চরকাচিয়া ও চরখাসিয়া এবং সদর উপজেলার চরমেঘাসহ ১৫টি এলাকা।


আরো সংবাদ



premium cement
৬ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য শতভাগ অপসারণ হয়েছে, দাবি ডিএনসিসি’র ৫০ হাজার টাকার খাসির চামড়া দাম ১৫ টাকা উপকূলের জনজীবনে কষ্টের ছাপ তবুও মুখে হাসি মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসি কি আরব বসন্তের ‘ট্র্যাজিক হিরো’? কোরবানির পশুর চামড়া যেমন দামে বেচাকেনা চলছে খালেদা জিয়ার সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ফিরোজায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘সুপার এইটে’ বাংলাদেশ ম্যাচের সময়সূচি গাজায় ইসরাইলি হামলায় অসংখ্য পরিবার নির্বংশ হয়ে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিশ্বরেকর্ড তানজিমের সেন্টমার্টিন উপকূলে টহল দিচ্ছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ, গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ঈদের দিন সমুদ্রে গোসলে নেমে কিশোর নিখোঁজ

সকল