তেল আবিবে হামাসের রকেট হামলা, সেনা আটক
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৭ মে ২০২৪, ০০:০২
ইসরাইলের বাণিজ্যিক নগরী তেল আবিবসহ মধ্যাঞ্চলের বেশ কয়েকটি অঞ্চল লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গতকাল রোববার হামাসের ছোড়া রকেটের শব্দে কেঁপে ওঠে তেল আবিবসহ আশপাশের অঞ্চল। অন্য দিকে হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেডস গাজার জাবালিয়া থেকে ইসরাইলি সেনা আটকের কথা জানিয়েছে। জেরুসালেম পোস্ট, আলজাজিরা ও রয়টার্স।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, গত ছয় মাসের মধ্যে আজই (রোববার) প্রথমবারের মতো মধ্যাঞ্চলে রকেট ছুড়েছে হামাস। অপর সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, এসব রকেট ছোড়া হয়েছে গাজার দক্ষিণের অঞ্চল রাফা থেকে। হামাস রকেট ছোড়ার পর তেল আবিব, পেটাহ তিকবা, হার্জলিয়া এবং রামাত হাসারোনে বিকট শব্দ শোনা গেছে বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
তেলআবিবসহ অন্যান্য জায়গায় রকেট ছোড়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে হামাস। ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে দেয়া এক পোস্টে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডস বলেছে, ‘আমাদের জনগণের ওপর ইহুদিবাদীদের গণহত্যার প্রতিবাদে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।’ ইসরাইলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তেল আবিবে অন্তত ১৫টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরাইলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, রাফার যে স্থান থেকে রকেটগুলো ছোড়া হয়েছে সেখান থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে অবস্থান করছে ইসরাইলি সেনারা। আর তাদের ফাঁকি দিয়েই সেখান থেকে হামলা চালাতে সমর্থ হয়েছে হামাসের যোদ্ধারা। সংবাদমাধ্যম জেরুসালেম পোস্ট জানিয়েছে, তেল আবিবে কয়েকটি রকেট আঘাত হানার তথ্য জানা গেছে। এসব রকেটের আঘাতে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না সেটি দেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত হওয়ার খবর জানা যায়নি বলে জানিয়েছে ইসরাইলি পুলিশ।
ইসরাইলি সেনা আটক : হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেডস জানিয়েছে, তারা গাজার জাবালিয়া থেকে ইসরাইলি সেনা আটক করেছে। হামাসের মুখপাত্র আবু উবাইদা এক অডিও বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন। তার বার্তাটি প্রচার করেছে আলজাজিরা। এতে তিনি বলেছেন, “আমাদের যোদ্ধারা গত শনিবার ইহুদিবাদী সেনাদের একটি দলকে কৌশলে সুড়ঙ্গে নিয়ে আসে এবং তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। যোদ্ধারা ইসরাইলি সেনাদের ওই দলটির সবাইকে হত্যা, আহত এবং আটক করে সেখান থেকে চলে আসে।”
তবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গতকাল রোববার হামাসের এই দাবি অস্বীকার করেছে। তারা এক বিবৃতিতে বলেছে, সেনাদের আটক করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কতজন সেনাকে হামাসের যোদ্ধারা আটক করেছেন সে বিষয়টি স্পষ্ট করে জানাননি আবু উবাইদা। তবে হামাস একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর পোশাক পরা এবং রাইফেলসহ একটি ব্যক্তিকে সুড়ঙ্গের ভেতর টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তার শরীর রক্তে ভেজা।
রয়টার্স জানিয়েছে, তারা এ ভিডিওটির সত্যতা এবং ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে (সেনা) দেখা যাচ্ছে তার পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। গত শনিবার খবর বের হয় হামাস ও দখলদার ইসরাইলের মধ্যে আবারো বন্দী চুক্তির আলোচনা শুরু হবে। এর কয়েক ঘণ্টা পরই এই অডিও বার্তা প্রকাশ করেন আবু উবাইদা। তবে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এরইমধ্যে একটি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। ফলে তারা নতুন করে আর কোনো আলোচনা চায় না।
আলোচনা প্রত্যাখ্যান হামাসের : যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের সাথে নতুন করে আলোচনায় বসতে চেয়েছে ইসরাইল। তবে ববরদের সাথে আলোচনায় বসতে চায় না বলে জানিয়েছেন হামাসের সিনিয়র নেতা ওসামা হামদান। আলজাজিরার এক খবরে বলা হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরুর খবর ইসরাইলি মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। এ সময় ইসরাইলের সাথে এমন যুদ্ধবিরতির আলোচনার দরকার নেই বলে মন্তব্য করেন ওসামা হামদান।
শনিবার আলজাজিরা আরবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামদান বলেন, গাজা থেকে যত দ্রুত সম্ভব ইসরাইলের সেনাদের প্রত্যাহার এবং সব ধরনের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। তিনি জানান, চলতি মাসের প্রথম দিকে হামাস যুদ্ধবিরতির জন্য কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের দেয়া একটি প্রস্তাবে রাজি হয়। কিন্তু ইসরাইল এই প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করে। তিনি বলেন, ’ইসরাইলের সাথে আমাদের নতুন করে আলোচনার দরকার নেই। কারণ হামাস আগেই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল; যা ইসরাইল প্রত্যাখ্যান করেছে। তাই এই আলোচনার অর্থ হলো গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে রাখার জন্য ইসরাইলকে আরো সময় দেয়া।’
উল্লেখ্য, ইসরাইল হামাসকে যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ নেই। বরং বলা হয়েছে, গাজায় কয়েক মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইল আবার যুদ্ধ শুরু করতে পারবে। ইসরাইল হামাসকে ধ্বংস করার আগ পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছে।
হামাসের ‘ফাইটিং কম্পাউন্ডে’ বিপাকে ইসরাইলি বাহিনী : গাজার ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া উদ্বাস্তু শিবিরে ‘ফাইটিং কম্পাউন্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছে। এর ফলে তারা ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিভিন্ন ভবনের মধ্য দিয়ে দ্রুত এবং নিরাপদে চলাচল করতে পারছে। এতে করে আগের মতো তাদেরকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। আর রাস্তায় তাদের দেখামাত্র ইসরাইলি হামলার যে শিকার হতো, তা থেকেও রক্ষা পাচ্ছে। যুদ্ধ পর্যবেক্ষকেরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইসরাইলি বাহিনী ১১ মে থেকে জাবালিয়ায় যুদ্ধ করছে। তারা জানিয়েছে, এই এলাকার ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা গাজার অন্যান্য অংশের চেয়ে অনেক বেশি ‘সাহসী’ আর তারা এখন পর্যন্ত যুদ্ধে সবচেয়ে সহিংসভাবে লড়াই করছে। ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) এবং ক্রিটিক্যাল থ্রেটস প্রজেক্ট (সিটিপি) তাদের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিরক্ষা থিংক ট্যাংক জানিয়েছে, জাবালিয়া দখল করার জন্য দুই সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধে দেখা যাচ্ছে যে হামাস ‘সেখানে পরিকল্পিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে’ এবং ইসরাইলি বাহিনীর ওপর তাদের ‘অস্বাভাবিক উচ্চ মাত্রার আক্রমণ’ প্রমাণ করেছ যে হামাস এখনো তাদের ‘যুদ্ধ ক্ষমতা কার্যকর’ রাখতে পেরেছে। এমনকি অক্টোবরে তাদের জাবালিয়া কমান্ডার নিহত হওয়া সত্ত্বেও তারা দুর্বল হয়নি। আইএসডব্লিউ/সিটিপি জানায়, “হামাস তার সামরিক শাখাকে প্রচলিত সামরিক বাহিনীর মতো সঙ্ঘবদ্ধ করেছে এবং তা পরিচালনার জন্য অভিজ্ঞ সামরিক কমান্ডারদের ব্যাপক বিকল্প তৈরি করেছে।” তারা জানায়, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর তীব্র চাপ সত্ত্বেও অব্যাহতভাবে যুদ্ধ করার জন্য হামাস এই প্রচলিত সামরিক কাঠামো ব্যবহার করছে।
৩৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত : চলমান গাজা যুদ্ধে ইসরাইলি হামলায় গাজায় প্রায় ৩৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গতকাল রোববার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৫ হাজার ৯৮৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আরো ৮০ হাজার ৬৪৩ জন আহত হয়েছে। নানা ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছেন আরো অনেকে। হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরো ২২৩ জন আহত হয়েছে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইল গণহত্যা করছে বলে অভিযোগ এনে দক্ষিণ আফ্রিকা গত বছর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি মামলা করেছিল। হেগভিত্তিক ট্রাইব্যুনাল তেল আবিবকে নির্দেশ দিয়েছে যেন তার বাহিনী আর গাজায় গণহত্যা না চালায়। একইসাথে নির্দেশ দেয়া হয়, যেন দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে সামরিক অভিযান বন্ধ করে এবং অবরুদ্ধ উপত্যকার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিকসহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা