১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঢাকাবাসীকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে কাজ করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে প্রকল্পের চাবি তুলে দিচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস : বাসস -


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীনে চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে বলেন, ঢাকাবাসী যাতে সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে সেজন্য তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, চারটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এই এলাকার বিশেষ করে পুরান ঢাকার মানুষ উপকৃত হবে এবং তারা সুন্দর জীবন যাপন করতে পারবে। এই প্রকল্পগুলো নতুনভাবে বাঁচার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বঙ্গবাজারে ‘বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতান’, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত আট সারির বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি সরণি, ধানমন্ডি লেকে ‘নজরুল সরোবর’ এবং শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান’ আধুনিকীকরণ শীর্ষক ৪টি উন্নয়ন প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ধিত ঢাকার জনগণ যেন যথাযথ সেবা পেতে পারে সেজন্য নগরীকে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই দু’টি অংশে ভাগ করেন। যেগুলো ইউনিয়ন ছিল সেগুলোকেও সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে এসে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকানাবিহীন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে তার সরকার আবাসিক ফ্ল্যাট ও সম্মানজনক পদবির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরের পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তাই ছিল না। তার সরকার সেসব রাস্তা, ওভারপাস, মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, বাঁধের ওপর রাস্তা, বুড়িগঙ্গা বেড়িবাঁধ করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে। তিনি বলেন, আন্তঃজেলা যোগাযোগ সহজ করতে আমরা ঢাকায় একটি রিং রোড নির্মাণ করতে চাই। শেখ হাসিনা বঙ্গবাজার পুনর্নিমাণের পর ব্যবসা চালু রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, এর আগে তিনি মোবাইল লেনদেনের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজার বাজারের ব্যবসায়ীদের অনুদান দিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের পর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।

বঙ্গবাজার পাইকারি বিপণিবিতান ও তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ১০তলা বিশিষ্ট বঙ্গবাজার পাইকারি বিপণিবিতানসহ চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন।
অপর তিনটি প্রকল্প হচ্ছে : পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়ের বাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত আট লেনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি সরণি, ধানমন্ডি লেকে ‘নজরুল সরোবর’ এবং শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান’ আধুনিকীকরণ। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতানের স্থানে ১০তলা বিশিষ্ট আধুনিক বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতান নির্মাণকাজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।

২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ঈদের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ভয়াবহ আগুনে রাজধানীর বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সের ২ হাজার ৯৩১টি কাপড়ের দোকান পুড়ে ভস্মীভূত হলে কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর জীবিকা ধ্বংস হয়ে যায়।
১০৬.২৮ কাঠা জমির ওপর নির্মিতব্য ১০তলা বিশিষ্ট বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতানে চারটি ব্লকে পাঁচটি সাধারণ সিঁড়ি ও ছয়টি অগ্নি প্রস্থান সিঁড়িসহ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিপণিবিতানের প্রতিটি ব্লকের জন্য আলাদা বাহির ও প্রবেশদ্বার থাকবে। ভবনে বৈদ্যুতিক যান্ত্রিক কক্ষ এবং প্রতিটি ব্লকের প্রতি তলায় চারটি করে শৌচাগার থাকবে। এ ছাড়া ভবনের বেজমেন্টে ১৬৯টি গাড়ি ও ১০৯টি মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার ৯৬১ জনের সবাইকে বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতানে পুনর্বাসন করা হবে। পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়ের বাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে আট লেনের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি সরণি।

৯৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের আওতায় ১০ কিলোমিটার নর্দমা, ১০ কিলোমিটার পথচারী হাঁটার ফুটপাথ, ৩টি উড়াল সেতু, ৩টি পথচারী পারাপার সেতু, দুই কিলোমিটার সংরক্ষণকারী দেয়াল, তিনটি মসজিদ, ছয়টি যানবাহন বিরতির স্থান ও ছয়টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হবে। এতে ঢাকা শহরের ভেতরে বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমার পাশাপাশি বহুলাংশে যানজট নিরসন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ধানমন্ডি লেকের ৫০.৯৬৭ কাঠা এলাকা জুড়ে নজরুল সরোবর নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে ‘নজরুল সরোবর’ নামের উন্মুক্ত বিনোদন মঞ্চে একটি ঘাটলা, উন্মুক্ত মিলনায়তন, পথচারীদের হাঁটার পথ, গণপরিসর, রেস্তোরাঁ, বসার স্থান, দৃষ্টিনন্দন বাতি, পর্যাপ্ত সবুজায়ন ও শব্দযন্ত্র স্থাপনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নজরুল ইসলামের স্মৃতিময় মুহূর্ত ও সাহিত্যকর্ম সংবলিত ফলক স্থাপন করা হবে।

শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যানের আধুনিকীকরণ প্রকল্পের মাধ্যম প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই শিশু উদ্যানের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ১৯৭৯ সালে স্থাপিত এই পার্কে আগে ১১টি রাইড ছিল। আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেখানে মেগা ডিস্কও, সুপার এয়ার রেস, ফ্লাইং ক্যারোস্যাল, গ্যালিয়ন, ১২ডি থিয়েটার, মাইন কোস্টার, ক্লাইম্বিং কার, সুপার হ্যাপী সুইং, ওয়াটার ম্যানিয়াসহ অত্যাধুনিক নতুন ১৫ ধরনের রাইডস বসানো হবে। এ ছাড়াও আগত দর্শনার্থীদের জন্য শৌচাগার, চত্বর, রেস্তোরাঁ, বিশ্রামাগার, প্রশস্ত হাঁটার পথ, বসার স্থান, বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্য বর্ধন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সংযোজন করা হয়েছে।
ডিএসসিসির মতে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে মার্কেটের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। এলজিআরডি ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম, ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা-৮ আসনের এমপি আ ফ ম বাহাঊদ্দিন নাছিম এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement