১৭ জুন ২০২৪
`

অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র প্রকাশ করবে বিএনপি

‘তিন কারণে দেশের আর্থিক খাত আজ তলানিতে’
-


আর্থিক খাতে চলমান সঙ্কট ও বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতির চিত্র দেশবাসীর কাছে প্রকাশ করবে বিএনপি। মাঠের এই প্রধান বিরোধী দল মনে করছে, সরকারের লাগামহীন লুটপাট, অযোগ্যতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সঙ্কটাপন্ন। আগামী দিনগুলোতে এই সঙ্কটের মূল ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ হবে বলেও আশঙ্কা করছে দলটি।
জানা গেছে, ব্যাংকসহ দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা এবং বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির প্রকৃত চিত্রের বিস্তারিত বিবরণ শিগগিরই প্রকাশ করবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলের উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এ নিয়ে দ্রুত প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। বিএনপির মিডিয়া সেলও এ কাজে কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করছে। এ ছাড়া প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে বিএনপির আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টরে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞদেরও মতামত নিচ্ছে দলটি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে সংবাদ সম্মেলন কিংবা অন্য মাধ্যমে প্রকৃত অর্থনৈতিক চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হবে বলে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনে দুর্নীতিসহ দেশের বর্তমান সঙ্কট যেমন তুলে ধরা হবে, তেমনি সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় নিয়েও কিছু সুপারিশ থাকবে। বিএনপির এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলটি যেমন একাধিকবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, তেমনি ছিল বিরোধী দলেও। তাই দেশের যেকোনো সঙ্কটে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের দায়িত্ব রয়েছে, সেই সঙ্কট তুলে ধরা এবং সেখান থেকে কিভাবে বের হওয়া যায়, সে ব্যাপারেও পরামর্শ দেয়া।
দেশের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি বলেছেন, দেশে চলছে এক অর্থনৈতিক নৈরাজ্য। ব্যাংকগুলো টাকার জন্য হাহাকার করছে, ব্যাংক ঋণ বিতরণ করছে আমানতকারীদের অর্থ থেকে, আবার ওই ঋণের অর্থ ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লুটেরারা ফেরত দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, আবার চরম ডলার সঙ্কটে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে ভয়াবহ পর্যায়ে। খাদের কিনারায় গেছে, পড়ে যাবে হয়তো।
বিএনপি নেতারা বলছেন, প্রধানত তিনটি কারণে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেগুলো হলো- লাগামহীন লুটপাট, অব্যবস্থাপনা এবং অযোগ্যতা। আর দেশে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে, নানা সময় সরকারের বিভিন্ন মহলের নানামুখী বক্তব্যে সেটা উঠে এসেছে। দলটির দাবি, সরকারের সেবাখাতসহ প্রায় প্রতিটি সেক্টর দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। পাশাপাশি চলছে লুটপাট ও টাকা পাচার। এর সাথে ক্ষমতাঘনিষ্ঠ লোকেরা জড়িত। সে কারণে এদের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ দুটি বৈঠকে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দলটির ধারণা, বিদ্যমান অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠা না গেলে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের অর্থনীতি ধ্বসে পড়তে পারে। এর ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। এগুলো সরকারের জবাবদিহিহীনতা ও চরম ব্যর্থতার প্রমাণ।
গত সোমবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিম্নগতি, ব্যাংকে ডলার ও তারল্য সঙ্কট এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির গুঞ্জন নিয়ে আলোচনা হয়। বিএনপি নেতারা এসব ঘটনাকে দেশের আর্থিক খাতের জন্য ‘অশনি সঙ্কেত’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নেতাদের মূল্যায়ন, বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ঠিক কত- সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। কখনো বলা হচ্ছে, প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলার। আবার কখনো ১৮ বিলিয়ন ডলার বলা হচ্ছে। অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও কম হতে পারে। দলটির নেতারা মনে করেন, মূল্যস্ফীতির কারণে এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বেশি। তার ওপর ক্রমাগত রিজার্ভ কমতে থাকায় আমদানি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে জনগণের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

বিএনপির আরো মূল্যায়ন, দেশে বর্তমানে ব্যাপক ডলার সঙ্কট চলছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে পর্যাপ্ত ডলার নেই। তাদেরকে বাধ্য হয়ে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনতে হচ্ছে। এতে আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে। এতে প্রমাণিত হয়, দেশের অর্থনীতিতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দলটির শঙ্কা, সামনে এই সঙ্কট আরো বাড়তে পারে। বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের ধারণা বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে যে কী হচ্ছে, রিজার্ভের প্রকৃত অবস্থা কী- সে ব্যাপারে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সিদ্ধান্তের জন্য ব্যবসায়ী ডাকে, রাজনীতিবিদ ডাকে। সকালে সিদ্ধান্ত নেয়, বিকেলে পরিবর্তন করে। অবস্থা এমন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন একটি সমবায় সমিতিতে পরিণত হয়েছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি মনে করছে, আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতাসীন হলেও রিজার্ভ, ডলার সঙ্কটসহ অর্থনীতির দুরবস্থায় দারুণ চাপে রয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীনদের আরো চাপে ফেলতে প্রতিবেদনের তথ্য সভা-সেমিনারসহ নানা প্রক্রিয়ায় মানুষের কাছে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরবে দলটি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কোরবানির পশুর চামড়া যেমন দামে বেচাকেনা চলছে খালেদা জিয়ার সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ফিরোজায় বিএনপির শীর্ষ নেতারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ‘সুপার এইটে’ বাংলাদেশ ম্যাচের সময়সূচি গাজায় ইসরাইলি হামলায় অসংখ্য পরিবার নির্বংশ হয়ে গেছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিশ্বরেকর্ড তানজিমের সেন্টমার্টিন উপকূলে টহল দিচ্ছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ, গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ঈদের দিন সমুদ্রে গোসলে নেমে কিশোর নিখোঁজ রাজধানীতে কোরবানি দিতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে আহত ১৪০ সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল : সুরমার পানি বিপদসীমার অনেক উপরে প্রবাহিত কচুখেতে মিলল কীটনাশক ব্যবসায়ীর গলাকাটা লাশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দানকারী দেশগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করার ঘোষণা ইসরাইলের

সকল