আইসিজের আদেশ সত্ত্বেও হামলার তীব্রতা ইসরাইলের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০
গাজার রাফায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ সত্ত্বেও হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবর অনুসারে, গতকাল শনিবার জাবালিয়ার একটি স্কুলে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শিশুসহ অন্তত ১০ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছে। খবরে বলা হয়, হামলার সময় স্কুল আঙিনায় শিশুরা খেলাধুলা করছিল। হতাহতদের আল-আহলি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিল।
এ দিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে আইসিজের রায়কে ‘ভুয়া, ভয়ানক এবং ন্যায়বিচার পরিপন্থী’ উল্লেখ করে বলা হয়, ‘প্রত্যেক দেশেরই আন্তর্জাতিক আইন ও মূল্যবোধ অনুসরণের ভিত্তিতে নিজেদের নাগরিক ও সীমানা রক্ষার অধিকার রয়েছে এবং ইসরাইল ঠিক তাই করছে।’ অন্য দিকে, আইসিজের আদেশ মানা বাধ্যতামূলক এবং সব পক্ষ অবশ্যই তা মেনে চলবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল রাফার খিরবেত আল-আদাস এলাকায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত একজন নিহত হয়েছে। রাফাতে ইসরাইলের আক্রমণের মুখে গত তিন সপ্তাহে ৯ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি অন্য স্থানে চলে গেছে। এর আগে ইসরাইলি সেনারা শহরের কুয়েতি হাসপাতালের দিকে অগ্রসর হয় এবং এর আশপাশের আবাসিক ভবনগুলোতে হামলা চালায়। বিবিসি জানায়, আইসিজের রায় ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই রাফা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত শাবউরা ক্যাম্পে দফায় দফায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলের জঙ্গিবিমান।
হামলাস্থলের কাছাকাছি কুয়েত হাসপাতালের একজন কর্মী বিবিসিকে বলেন, তুমুল বোমা হামলার কারণে উদ্ধারকর্মীরা অভিযানস্থলে পৌঁছতে পারছে না। দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার শুনানিতে শুক্রবার হেগভিত্তিক জাতিসঙ্ঘের শীর্ষ আদালত আইসিজে ইসরাইলকে রাফা হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে বলার পাশাপাশি রাফার মিসর সীমান্ত ক্রসিং মানবিক ত্রাণ প্রবেশের জন্য খুলে দেয়া, গাজায় তদন্তকারীদের প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে গাজায় ঢোকার অনুমতি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
কিন্তু ইসরাইলের এসব নির্দেশ মানার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং আইসিজের রায় ইসরাইল প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ইসরাইল বলছে,তাদের জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার অধিকার আছে তাদের। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরাইলের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। হামাসের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া এবং বন্দীদের মুক্ত করার অঙ্গীকার করেছে ইসরাইল। আর রাফায় অভিযান সম্পর্কে ইসরাইল বলছে, সেখানে অবস্থান করা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে বা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়- এমনভাবে সেখানে অভিযান চালানো হবে না।
আরব মন্ত্রীদের সাথে ম্যাক্রোঁর বৈঠক : গাজা যুদ্ধ এবং ইসরাইলের পাশাপাশি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উপায় নিয়ে শুক্রবার আরব মন্ত্রীদের সাথে আলোচনা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্টের দফতরের বরাতে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এই বৈঠকের আয়োজন করেন বলে জানা গেছে। জাতিসঙ্ঘের শীর্ষ আদালত ইসরাইলকে গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে তাদের অভিযান বন্ধ করার নির্দেশ দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি এই বৈঠক করেন।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সঙ্ঘাত ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা এবং গাজার জন্য মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পায়। এলিসি প্রাসাদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা গাজার সব ক্রসিং পয়েন্ট ফের কীভাবে সক্রিয় করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও জোরদার করা এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কার্যকর বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা করেন পাঁচটি দেশের প্রতিনিধিরা।
এ ছাড়া ইসরাইল রাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় কার্যকর করা এবং ফিলিস্তিনের বৈধ আকাক্সক্ষার প্রতি সাড়া দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এলিসি প্রাসাদ জানায়, এই বৈঠকে ম্যাক্রোঁ এবং ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন সেজানের সঙ্গে কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল-থানি এবং মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ সৌকরি, জর্ডানের আয়মান সাফাদি এবং সৌদি আরবের ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ যোগ দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। ফরাসি নেতা গাজা শহর রাফাহ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন বসতি স্থাপনে ইসরাইলের অভিযানের বিরুদ্ধে তার বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি গাজায় হামাসের হাতে থাকা সব বন্দী মুক্তির পাশাপাশি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি আলোচনা আগামী সপ্তাহে : গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী বিনিময় চুক্তির জন্য আলোচনার টেবিলে ফিরতে সম্মত হয়েছে ইসরাইল। দেশটির সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে ওয়ালা নিউজ সাইট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারের প্রধানমন্ত্রী, সিআইএ প্রধান এবং ইসরাইলের মোসাদ প্রধান প্যারিসে সম্মত একটি রূপরেখার উপর ভিত্তি করে আলোচনা পুনরায় শুরু হবে।
ওই বৈঠকের পরই যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় উপস্থিতিতে মধ্যস্থতাকারী, মিসর এবং কাতারের নেতৃত্বে আগামী সপ্তাহে নতুন প্রস্তাবের ভিত্তিতে আলোচনা শুরু হবে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। ইসরাইলের দাবি গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে ১২০ জনকে বন্দী করে হামাস। তাদেরকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অবশ্য যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অচলাবস্থার জন্য একে অপরকেও দায়ী করেছে উভয় পক্ষ।
গাজায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে : গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৫,৯০৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৮০,৪২০ জন আহত হয়েছে বলে উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় আরো ৪৬ জন নিহত এবং ১৩০ জন আহত হয়েছে।
ত্রাণ সরবরাহে সম্মত সিসি : বাইডেন
জাতিসঙ্ঘের সরবরাহকৃত ত্রাণ কারেম আবু সালেম সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে গাজায় নিতে একমত হয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল সিসি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই দুই নেতা ফোন কলে ঐকমত্য পোষণের কথা জানান। এতে বলা হয়েছে, কারেম আবু সালেম সীমান্ত দিয়ে জাতিসঙ্ঘের মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছানোর জন্য মিসরের প্রেসিডেন্ট উদ্যোগ গ্রহণ করায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাইডেন। ফিলিস্তিনের গুরুত্বপূর্ণ রাফাহ সীমান্তের ক্রসিং পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত গাজা, মিসর এবং ইসরাইলের সীমান্তে থাকা কারেম আবু সালেম ক্রসিং দিয়ে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট। মিসরের প্রেসিডেন্ট দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এর ফলে ফিলিস্তিনিদের গাজায় যে মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে তার কিছুটা লাঘব করা যাবে।
এ ছাড়া জ্বালানির অভাবে বন্ধ থাকা হাসাপাতাল ও বেকারিগুলোও চালু করা যাবে। ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম ওয়াফা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ওই পদক্ষেপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাফাহ সীমান্ত পুনরায় চালু করার জন্য বাইডেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা