১৬ জুন ২০২৪
`
অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ

বাজেটে রেমিট্যান্স প্রণোদনা ৩ শতাংশে উন্নীত করা হতে পারে

-

অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রণোদনা ৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবকে খতিয়ে দেখছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে এই প্রণোদনা আড়াই শতাংশ রয়েছে। এটি বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে এই স্থায়ী কমিটি। কমিটি বলেছে, হুন্ডি ঠেকানো এবং দেশের রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য প্রণোদনার হার বৃদ্ধি করার কোনো বিকল্প নেই।

শুধু তাই নয়, আর্থিক প্রণোদনা বৃদ্ধির পাশাপাশি অ-আর্থিক প্রণোদনা প্রদানে ১২ দফা সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল সংসদ ভবনে এই কমিটির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপিত্বে বৈঠকে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ চৌধুরী, অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। জানা গেছে, প্রণোদনা নিয়ে এর আগে কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ নিয়ে কথা হয়। প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে গতি বাড়াতে ইতঃপূর্বে অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বৈঠকে সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর পরামর্শ এবং দেশের রিজার্ভ বাড়াতে সরকার প্রবাসীদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে আনার জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রেমিট্যান্স প্রণোদনা ৩ শতাংশ প্রস্তাবের বিষয়ে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখানে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হলে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে তা খতিয়ে দেখে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা থাকতে পারে।
এর আগে স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করে তাদের স্মার্টকার্ড প্রদান করা রেমিটারদের ফ্ল্যাট আকারে প্রণোদনা না দিয়ে প্রেরিত রেমিট্যান্সের তথ্য প্রস্তাবিত কার্ডে সংরক্ষণ করে রেমিট্যান্সের পরিমাণের ওপর পয়েন্ট প্রদান করা। এক কোটি টাকার বেশি বন্ড ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা পরিহার করা। প্রবাসে ১০ হাজার বা এর অধিক পরিমাণ ডলার বিনিয়োগকারী প্রবাসী বাঙালির তথ্য বাংলাদেশ সরকারকে অবহিত করার বিধান প্রণয়ন করা।

বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে চলমান আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি অ-আর্থিক প্রণোদনাগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা। প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের যথাযথভাবে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা। রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ও তাদের পরিবারের জন্য বিশেষ স্মার্টকার্ড প্রদান করা- যার মাধ্যমে বিভিন্ন নাগরিকসুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার প্রদান করা। স্মার্ট কার্ডধারীদের পিতা-মাতা ও স্ত্রী-সন্তানদের জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত সব পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে বিশেষ প্রাধিকার প্রদান। স্মার্টকার্ডধারী অভিবাসী শ্রমিক স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এলে তার জন্য স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট সব সেবা প্রদানকারী সরকারি অফিসে প্রাধিকার প্রদান। স্মার্টকার্ডধারীদের জন্য বাংলাদেশের সব বিমানবন্দরে এক্সপ্রেসওয়ে/সার্ভিস পদ্ধতিতে হয়রানি ছাড়া ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস্ ক্লিয়ারেন্সের সুবিধা প্রদান।

এ ছাড়াও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগ্রহী করার জন্য প্রবাসীদের মধ্যে প্রচারণা কার্যক্রম জোরদার করতে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক ঘোষিত সুযোগ-সুবিধাগুলো প্রবাসীদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রচার করাও সুপারিশের মধ্যে রয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রবাস আয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গত প্রায় তিন দশক ধরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমান সরকারের ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সময়ে গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি হয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে গড়ে প্রতি বছর প্রবাস আয় এসেছে ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি বছর গড় আমদানি মূল্যের ৩৪.৩ শতাংশের সমপরিমাণ অংশই প্রবাসী আয় দিয়ে মেটানো হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement