১৬ জুন ২০২৪
`

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান বিরোধীদলীয় নেতার

-

- বন্দী মুক্তির আলোচনা আবার শুরু করতে চায় ইসরাইল
- মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাওয়ার হুমকি মিসরের
- জেনিন থেকে ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহার

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে টানা সাত মাসেরও বেশি ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। জবাবে ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ অন্দোলন হামাসও। এমন অবস্থায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। নির্দিষ্ট কিছু ‘শর্তের অধীনে’ এ পদক্ষেপ নিতে বলেছেন তিনি। হামাসের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তির জন্য নতুন করে আলোচনা শুরুর জন্য আলোচকদের নতুন নির্দেশিকা অনুমোদন করেছে ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা। তবে মধ্যস্থতার সরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে মিসর। আনাদোলু, আলজাজিরা, রয়টার্স ও টাইমস অব ইসরাইল।
বেশ কিছু শর্ত ও গ্যারান্টির বিনিময়ে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য বুধবার প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসরাইলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে তিন ইউরোপীয় দেশ- স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার পর লাপিদ এই আহ্বান জানালেন। ইউরোপীয় এই দেশগুলো বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
লাপিদ অবশ্য নেতানিয়াহুকে এ ধরনের অবস্থান গ্রহণ করতে বাধা দেয়ার জন্য ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরকে দায়ী করেছেন বলে স্থানীয় ইয়েদিওথ আহরনোথ পত্রিকা জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘নেতানিয়াহুর ঘোষণা করা উচিত, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যোগদানসহ কিছু শর্ত এবং নির্দিষ্ট গ্যারান্টির অধীনে তিনি একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র মেনে নিতে ইচ্ছুক।’ তবে এই শর্তাবলি ও গ্যারান্টি বা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতার প্রকৃতি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিতভাবে কিছু বলেননি লাপিদ।

চরমপন্থী বেন-গভিরের সমালোচনা করে ইসরাইলের বিরোধীদলীয় এই নেতা বলেছেন, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তুতি সম্পর্কে ঘোষণা করার ‘অনুমতি তিনি নেতানিয়াহুকে দেবেন না’। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘পাগলামিতে বাস করা’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এই সরকার পারবে না। আমাদের এটিকে (নেতানিয়াহু সরকার) বাড়িতে পাঠাতে হবে এবং একটি কার্যকরী সরকার গঠন করতে হবে।’
আনাদোলু বলছে, ২০২২ সাল থেকে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ইসরাইলে অতি-কট্টরপন্থী জোট সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। উগ্র ডানপন্থী এই সরকার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণার তীব্র বিরোধিতা করে থাকে। এ দিকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে এমন এক সময়ে ঘোষণা করল যখন গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিন ইতোমধ্যে আটটি ইউরোপীয় দেশের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে : বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, সুইডেন ও গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসন।

আলোচনা শুরু করতে চায় ইসরাইল : হামাসের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তির জন্য নতুন করে আলোচনা শুরুর জন্য আলোচকদের নতুন নির্দেশিকা অনুমোদন করেছে ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা। বুধবার রাতে উচ্চপর্যায়ের ফোরামটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ইসরাইলের ওয়ালা নিউজ সাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে।
ওই খবরে অবশ্য এসব নির্দেশিকার বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর অফিস কেবল জানিয়েছে যে যুদ্ধ মন্ত্রিসভা ‘পণবন্দীদের ফেরত আনার জন্য আলোচনা অব্যাহত রাখতে’ আলোচক দলকে নির্দেশ দিয়েছে। পণবন্দীদের পরিবারগুলো পাঁচ নারী সৈন্যের ৭ অক্টোবর অপহরণের ভিডিও প্রকাশ করার প্রেক্ষাপটে যুদ্ধ মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্ত নিলো। হামাসের সদস্যরা নাহাল ওজ থেকে এসব নারী সৈন্যকে বন্দী করে।
কয়েকজনের মা-বাবা বলেন, তারা এই ভিডিও এ কারণে প্রকাশ করেছেন যাতে ইসরাইলের মধ্যে, বিশেষ করে নেতৃত্বের মধ্যে, জাগরণের সৃষ্টি হয়। তারা যাতে বন্দীদের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য আরো জরুরিভিত্তিতে কাজ করে।
সরে যাওয়ার হুমকি মিসরের : হামাস ও ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে প্রায় শুরু থেকে মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র- তিন দেশ; কিন্তু অতিসম্প্রতি মিসর এই ভূমিকা থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে প্রকাশিত এক সংবাদের প্রতিবাদে এই হুমকি দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এই দেশটি। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছিল, গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার জন্য মিসরের গোয়েন্দা বিভাগ যুদ্ধবিরতির চুক্তির শর্তে ইচ্ছাকৃত পরিবর্তন এনে চুক্তির বিকৃতি ঘটিয়েছে।
এ দাবির প্রতি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক বার্তায় মিসরের সরকারি তথ্য পরিষেবা বিভাগের প্রধান দিয়া রাশওয়ান বলেন, ‘মিসরের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টায় সংশয় করা কিংবা একে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হলে তা গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে তো বটেই, উপরন্তু (এমন করা হলে) মিসর পুরো সংকট থেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।’

গত মঙ্গলবার একটি খবর প্রকাশ করে সিএনএন। হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সংলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে সেই খবরে দাবি করা হয়েছে হয়েছে, সম্প্রতি হামাস যে যুদ্ধবিরতির খসড়া চুক্তিটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে- সেটি মূল চুক্তি নয়; অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে যেসব শর্ত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটির বিকৃতি ঘটিয়েছেন মিসরীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা, তার পর সেটি হামাসের কাছে পাঠানো হয়েছিল।
এই খবর ‘ফাঁস’ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের কমকর্তারা মিসরের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, দোষারোপ করেছিলেন এবং গোটা শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সিএনএনের খবরে। এ ব্যাপারে মন্তব্য চেয়ে মার্কিন শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিচালক উইলিয়াম বার্নসের সাথে যোগাযোগ করেছিল সিএনএন। কিন্তু তিনি কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি। শুক্রবারের বার্তায় দিয়া রাশওয়ান বলেন, ‘কিছু মহল মিসরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছে। যারা এসব করছে, তারা জানে না যে মিসর কিন্তু এই যুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে, নিজের ইচ্ছেয় নয়।’

জেনিন থেকে ইসরাইলের সেনা প্রত্যাহার
আলজাজিরা জানায়, অধিকৃত পশ্চিমতীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে কয়েক দিন ধরেই অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল। গতকাল বৃহস্পতিবার সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। আলজাজিরা এই খবর জানিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া অভিযানে মোট ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত চার শিশু, এক চিকিৎসক ও এক শিক্ষক রয়েছেন। শহরটিতে একটি ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান পরিচালনা করার দাবি করেছিল ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরাইলি বাহিনী রাস্তায় নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে। অভিযানের ভিডিও ক্লিপগুলোতে এক ইসরাইলি সেনাকে বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দীদের একজনকে লাথি মারতে দেখা গেছে। তাদের অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায় রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা হয়েছিল। জেনিনে আলজাজিরার প্রতিনিধিদের ওপরও গুলি চালিয়েছিল ইসরাইল। খবরটিতে বলা হয়েছে, লাইভে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার সময় তাদের এক সংবাদদাতা হামলার শিকার হন। এ সময় কাছাকাছি একটি হোটেলে এক কর্মী আহত হন।

 


আরো সংবাদ



premium cement