ভোটারের খরা উপজেলায়ও
ভোটার না এলে আমরা কী করব : নির্বাচনী কর্তারা- হামিদ সরকার গাইবান্ধা থেকে
- ২২ মে ২০২৪, ০০:০৫
নির্বাচনের প্রতি দেশের সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের চরম অনীহা এবং আস্থাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। যার কারণে ষষ্ঠ দেখা উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে যা-ও ভোটার ছিল, গতকাল অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপে এসে ভোটারের খরা বা আকাল দিয়েছে। প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ করেও ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে পারেনি। প্রথম দুই ঘণ্টায় গড়ে গড়ে সাত-আটটা করে ভোট পড়ে। ফলে অলস সময় কাটান নির্বাচনী কর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে কোনো নির্বাচনে উৎসাহ ও আমেজ কোনোটাই নেই। ইসির প্রত্যাশা ছিল দ্বিতীয় পর্বের ভোটে উপস্থিতি বাড়বে কিন্তু সে প্রত্যাশা গুড়েবালি হয়েছে।
৬৫ বছরের আবদুস সাত্তার বলেন, এই নির্বাচনে কারো আগ্রহ নেই। কোনো রাজনৈতিক দল নেই। শুধু সরকারি দলের প্রার্থী। আওয়ামী লীগের ভোটাররাই ভোট দিতে আসছে না।
এদিকে ভোট শুরুর প্রথম ৪ ঘণ্টা পর নির্বাচন কমিশন সচিব মো: জাহাংগীর আলম জানান, সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। ১৩ হাজার ১৫৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০ হাজার কেন্দ্রের ভোটের হার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৭ শতাংশ। বড় কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে গোবিন্দগঞ্জের বালুভরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত গড়ে ৯টা করে ভোট পড়েছে। কোনো কোনো বুথে ৪টা আবার কোনো বুথে ২২টা। পারগয়ড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম ঘণ্টায় সর্বনিম্নœ চারটা এবং সর্বোচ্চ ৯ টা ভোট পড়ে।
গুমানিগঞ্জের বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে চাঁদপুর আরেফিয়া স্কুল, পারগয়ড়া সরকারি প্রাথমিক স্কুল কেন্দ্রের এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। যেহেতু তারা নির্বাচনে নেই তাই দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা ভোট দিতে আসছে না। ওই দুই কেন্দ্র প্রায় পৌনে তিন হাজার ভোটার।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যশোরের ঝিকরগাছা, শার্শা ও চৌগাছা-তিনটি উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন বেলা ১১টায় চৌগাছা উপজেলার শহীদ মসিয়ুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে প্রতি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে একজন, দুইজন করে ভোটার আসেন এবং ভোট দিয়ে ফিরে যান। ভোটারের চাপ না থাকায় অলস সময় পার করেন কেন্দ্রের দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার সদস্যসহ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। একটি কেন্দ্রে তিন হাজার ৩৫১ ভোটার থেকে তিন ঘণ্টায় ভোট পড়ে মাত্র ৩৫১টি। অর্থাৎ ৪ দশমিক ২৩ শতাংশ।
কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আগের মতো ভোটার আসে না। মানুষের ভোটের প্রতি আগ্রহ নেই। অলস সময় কাটছে।
আর বিভিন্ন কেন্দ্রের নির্বাচনী অফিসারদের সাথে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে আলাপকালে তারা জানান, মানুষের আগ্রহ নেই। আগেও নির্বাচন দেখেছি, দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এমন পরিস্থিতি কখনো দেখিনি।
ভোটারের উপস্থিতি কম কেন এমন প্রশ্নে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের জবাব, মানুষ যদি ভোট দিতে না আসে তাহলে কিছু করার থাকে না। কী কারণে ভোটার উপস্থিতি কম সেটি বলতে পারছি না। তবে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে।
ইসির দেয়া তথ্যানুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে মোট এক হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী তিন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ৬৯৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৮ জন। এই ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৭, ভাইস চেয়ারম্যান পদে আটজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন অর্থাৎ মোট ২২ জন প্রার্থী ইতোমধ্যে বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। রাউজান ও কুমিল্লা আদর্শ সদর এই দু’টি উপজেলার সব পদের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। অর্থাৎ এই দুই উপজেলায় কোনো পদেই ভোটের দরকার হয়নি। দ্বিতীয় ধাপে ১৩ হাজার ১৬ ভোট কেন্দ্রে ৯১ হাজার ৫৮৯ ভোট কক্ষে তিন কোটি ৫২ লাখ চার হাজার ৭৪৮ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা থাকলেও প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ করেও তাদের কেন্দ্রে আনতে পারেনি। এবার পুরুষ এক কোটি ৭৯ লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৪ জন, নারী এক কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭ জন এবং ২৩৭ জন হিজড়া ভোটার। এখানে আট হাজার ৮৪১টি অস্থায়ী ভোট কক্ষ রাখা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা