ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
- আশরাফুল ইসলাম
- ২২ মে ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ২২ মে ২০২৪, ০৫:২৪
ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঋণ তথ্য ব্যুরো বা সিআইবিতে আলাদা করা হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো ঋণগ্রহীতাদের যে তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে দাখিল করবে তাতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের নাম আলাদা করে দেখাতে হবে। অভিযুক্তদের বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা, ব্যবসা-বাণিজ্যে সঙ্কুচিত করতে ট্রেড লাইসেন্সে নিষেধাজ্ঞাসহ ডজনখানেকের বেশি শাস্তি কার্যকর করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে পরিপালনের জন্য নতুন এক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা আগামী ১ জুলাই থেকেই কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো: মেজবাউল হক এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আগে সিআইবিতে খেলাপি ও অখেলাপি দুই ধরনের গ্রাহকের তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকত। এতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তথ্য আলাদা করা হতো না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছিল। ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের যাতে সহজেই শনাক্ত করা যায় সেজন্য সিআইবিতে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তথ্য আলাদাভাবে ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ফলে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদেরকে সহজেই শনাক্ত করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সহজেই যেন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা পার পেয়ে না যান সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আওতায় যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে শনাক্ত হবেন তারা বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন না। ট্রেড লাইন্স ইস্যুতে থাকবে নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা থাকবে কোম্পানি গঠনে। গাড়ি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির নিবন্ধন করতে পারবেন না। এজন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের তালিকা পাঠানো হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
একই সাথে শর্তপূরণ করে ঋণ পরিশোধ করার পর ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরবর্তী পাঁচ বছর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন না। একই সাথে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকলে তা শূন্য ঘোষণা হবেন এবং নতুন কোনো পরিচালক হতে পারবেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এক ধরনের গ্রাহক ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন কিন্তু ওই ঋণের অর্থ দেশে বিনিয়োগ না করে পাচার করে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করছেন না। বছরের পর বছর এভাবে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ না করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। সমাজে এ ধরনের রাঘববোয়ালদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্যই এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) এর ধারা ৫(কককক), ধারা ২৭খ এর ক্ষমতা বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
ইতোমধ্যেই ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) আইনের ধারা ৫(কককক) এ ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ ধারায় বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা অর্থ এমন কোনো খেলাপি ঋণগ্রহিতা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কো¤পানি যিনি বা যারা নিজের, তার পরিবারের সদস্যের, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির অনুকূলে কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে নেয়া ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা বা এর অংশ বা এর ওপর আরোপিত সুদ বা মুনাফা তার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও পরিশোধ করে না। দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে জালিয়াতি, প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে নিজের, তার পরিবারের সদস্যের, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির নামে ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে। তৃতীয়ত, কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে যে উদ্দেশ্যে ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন সে উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ওই ঋণ, অগ্রিম, বিনিয়োগ বা আর্থিক সুবিধা বা এর অংশ ব্যবহার করেছে। চতুর্থ ঋণ বা অগ্রিমের বিপরীতে প্রদত্ত জামানত ঋণ বা অগ্রিম প্রদানকারী কোনো ব্যাংক-কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া হস্তান্তর বা স্থানান্তর করেছে।
কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কো¤পানি খেলাপি হওয়ার পর ওই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কো¤পানি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা কি না তা শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম স¤পাদনের জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত দুই ধাপ নিচের কর্মকর্তার অধীনে প্রধান কার্যালয়ে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ নামে একটি পৃথক ইউনিট গত ৯ এপ্রিলের মধ্যে গঠন করেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এ প্রদত্ত ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার সংজ্ঞা মোতাবেক তফসিলি ব্যাংক তাদের কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কো¤পানি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা কি না তা শনাক্ত করতে হবে। কোনো ঋণগ্রহীতা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার তৎপরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ওই ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি কি না তা নিরূপণের লক্ষ্যে বিবেচ্য বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট ইউনিট পর্যালোচনাপূর্বক শনাক্ত করতে হবে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব না হলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে আরো ৩০ দিন বৃদ্ধি করা যাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা