১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসরাইলকে ঘিরে সন্দেহ

-


প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। সবাইকে হতভম্ব করা এই দুর্ঘটনা ঘিরে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। উঠে আসছে ইসরাইলের জড়িত থাকা নিয়ে সন্দেহের বিষয়টি। তবে এরই মধ্যে এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করেছে ইসরাইল। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নানা বিশ্লেষণও প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৮৮ সালে বিপ্লব পরবর্তীতে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। তার নেতৃত্বেই ইরানের সামরিক বাহিনী কিছু দিন আগে আঞ্চলিক চিরবৈরী ইসরাইলের ভূখণ্ডে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে ইরানজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই ঘটনায় অনিশ্চয়তার কালো মেঘে ছেয়ে গেছে ইরান; যার প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাইসির মৃত্যু কেবল ইরানের অভ্যন্তরে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের সূত্রপাতই করবে না, বরং ওই অঞ্চলেও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। ক্রমবর্ধমান তীব্র উত্তেজনা আর সঙ্ঘাতের মাঝে রাইসির মতো শীর্ষ একজন রাজনৈতিক নেতার অনুপস্থিতি ইরানের ভেতরে এবং বাইরে ক্ষমতার ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
যদিও দেশটির সরকারি ব্যাখ্যায় এখন পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানানো হচ্ছে। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম বলছে, ভারী বৃষ্টিপাত আর ঘন কুয়াশার কারণে ফ্লাইটের দৃষ্টিসীমায় ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে এই দুর্ঘটনায় শত্রুপক্ষের জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা ছড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট রাইসির মেয়াদ এবং ইরানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় শত্রু, এমনকি ইসরাইলের মতো বহিরাগত ক্রীড়নকদের সম্ভাব্য জড়িত থাকার বিষয়েও কথা উঠেছে।

ব্রিটিশ প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান এবং ইসরাইলের ঐতিহাসিক বৈরী সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পেছনে ইসরাইল জড়িত থাকতে পারে বলে কিছু ইরানি সন্দেহ করছেন। দামেস্কে ইসরাইলের একজন ইরানি জেনারেলকে হত্যা ও পরবর্তীতে ইসরাইলে ইরানের শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ঘটনায় সৃষ্ট সাম্প্রতিক উত্তেজনা বিবেচনায় এই তত্ত্বটি অনেকের মনোযোগ কেড়েছে।
ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে চোরাগোপ্তা এবং নিখুঁত অভিযান চালানোর জন্য ইসরাইলের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ব্যাপক পরিচিতি আছে। যদিও ইসরাইলি এই গোয়েন্দা সংস্থা কখনোই কোনো রাষ্ট্রের প্রধানকে লক্ষ্যবস্তু বানায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় সন্দেহবাদীদের ইসরাইলি সংশ্লিষ্টতার তত্ত্ব নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে হত্যার ঘটনা সরাসরি যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাবে। এমনকি ইরানের পক্ষ থেকে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া আসবে। যদিও ঐতিহ্য বিবেচনায় ইসরাইলের কৌশলগত অবস্থান উচ্চ-পর্যায়ের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের পরিবর্তে সামরিক এবং পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতেই রয়েছে। ইকোনমিস্ট বলছে, রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইসরাইলের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করার জোরালো কারণ রয়েছে। ইসরাইল কখনো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করার মতো এতদূর অগ্রসর হয়নি। এর অর্থ হবে দ্ব্যর্থহীন যুদ্ধ; যা ইরানের তীব্র প্রতিক্রিয়া উসকে দেবে।

ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের এই ঘটনা এমন একসময় ঘটেছে; যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে তোলার মতো অনেক বিষয় রয়েছে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনজুড়ে ইরানের প্রক্সি নেটওয়ার্ক ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। বিশেষ করে ইসরাইল এবং হামাসের চলমান যুদ্ধের মাঝে আঞ্চলিক এই পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ এক প্রান্তে পৌঁছেছে। ইরানের নেতৃত্ব নিয়ে যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তা এসব গোষ্ঠীকে সম্ভাব্য বিস্তৃত সঙ্ঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
অস্বীকার ইসরাইলের : ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করেছে ইসরাইল। সোমবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ইসরাইলের সম্পৃক্ততা নিয়ে এরই মধ্যে সন্দেহ জাগছে অনেকের মধ্যে। ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ মধ্যপ্রাচ্য, ইরান বা অন্যান্য ইসরাইলবিরোধী রাষ্ট্রগুলোর উপর নজরদারি অব্যাহত রেখেছিল। রাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তিক সুরক্ষা প্রদান এবং সে অনুযায়ী সর্বত্র ব্যাঙের ছাতার মতো নজর বিছিয়ে রাখার মাধ্যমে ইসরাইলের স্বার্থরক্ষা করে মোসাদ। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যার সাথে সংস্থাটির আগের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

চিরশত্রু ইসরাইলসহ পশ্চিমাদের চক্ষুশূল ছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি। আমেরিকার কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরও কখনো মাথানত করেননি মধ্যপ্রাচ্যের এই নেতা, রাজি হননি আপসেও। তাই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবরেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন মার্কিন সিনেটর রিক স্কট। অন্য নেতারাও করেন স্বস্তির মন্তব্য। এই উচ্ছ্বাস শুধু মার্কিন সিনেটরেরই নয়, যেন ইসরাইল-আমেরিকার প্রতিচ্ছবি। তাই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন এটি নেহাত দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারণ গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরাইলের বুকে কাঁপন ধরানো একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। তাকে শেষ করতে পারলে এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইসরাইলের দিকে মিসাইল তাক করার মতো আর কেউ নেই তা ভালো করেই জানেন নেতানিয়াহু।
সন্দেহের আঙুল যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দিকেও। কারণ একমাত্র ইরানের কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে প্রভাব কমেছে ওয়াশিংটনের। সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে আমেরিকার চরম শত্রু চীন। এ ছাড়া কাশেম সোলাইমানির মতো প্রভাবশালী জাঁদরেল নেতাকে হত্যা করতে একটুও বুক কাঁপেনি আমেরিকার। এমনকি বার বার হুঁশিয়ারি দিয়েও ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে ফেরাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। ফলে রাইসিকে টার্গেট করতে পারে বাইডেন প্রশাসন সেই শঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে মা ও শিশুদের মৃত্যুকে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন বলে প্রচার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহ-লিটন দাস চেন্নাইয়ের হাসপাতালে আগুন, মৃত্যু শিশুসহ ৬ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে ৬ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু শহীদ দেলোয়ারের কবর ছুঁয়ে প্রতিদিনই আর্তবিলাপ করেন মা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি! টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা ওয়েস্ট ইন্ডিজের তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড রাশিয়ার চেচনিয়া অঞ্চলে ইউক্রেনের ড্রোন আঘাত : দাবি করছেন চেচনিয়ার নেতা এবার ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালাবে ইসরাইল! পাকিস্তান দলের দায়িত্ব ছাড়লেন গিলেস্পি

সকল