১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

রাসেলের হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন ফিকে

রাসেলের হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন ফিকে -


কুরআনে হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে রাসেলের (১১)। দিনমজুর বাবার স্বপ্ন ছিল তার ছেলে কুরআনে হাফেজ হবে। নিজে বাড়তি পরিশ্রম করে আসছিলেন শুধুই ছেলেকে হাফেজ হিসেবে দেখবেন বলে। পুরো পরিবারই তাকিয়ে ছিল রাসেলের ভবিষ্যতের দিকে। কিন্তু কিছু অবিবেচক মানুষের জন্য শিশু রাসেল এখন পঙ্গু। তার এক পা কেটে ফেলা হয়েছে, অন্য পা’টিও ঝুঁকির মধ্যে। ডাক্তার প্রাণান্ত চেষ্টা চালাচ্ছেন অন্য পা’টি অক্ষত রাখতে। এদিকে, যাদের কারণে শিশু রাসেল পা হারিয়েছে তারা নির্বিকার। রাসেলকে একবার চোখের দেখাও দেখতে যায়নি তারা। পুলিশও রহস্যজনক কারণে নির্বিকার।
রাজধানীর ডেমরার পাড়া ডগার নতুন পাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকার ওহাব মিয়ার বাড়ির ভাড়াটে দুলাল খানের ছেলে রাসেল খান। দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল। সে কোনাপাড়া শাহজালাল রোডের মাকাজুদ দারুস সালাম ইন্টারন্যাশনাল হিফজুল কুরআন বালক বালিকা মাদরাসার নাজেরা বিভাগের ছাত্র। গত ১১ মে ওই একই এলাকার ২৬৭/২ নম্বর টিনশেড বাড়িটি ভাঙার কাজ চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাড়িটি ভাঙার কাজ করার সময় সেখানে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না। পথচারীদের যাতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সে ব্যবস্থা না রেখেই চলছিল পুরাতন ভবন ভাঙার কাজ। ১১ মে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বেকু দিয়ে ভাঙার সময় ওই ভবনের দেয়াল আছড়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী রাস্তার ওপর। এতে দেয়ালে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আবু শাহরিয়ার (৫৫)। আর গুরুতর আহত হয় রাসেল খান। ঘটনাস্থল থেকে আবু শাহরিয়ারের লাশ নেয়া হয় মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আর রাসেল খানকে ঘটনার পর উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। এরই মধ্যে রাসেলের ডান পায়ে পচন ধরে যায়। গত ১৬ মে তার শরীর থেকে পা’টি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। বর্তমানে সে পঙ্গু হাসপাতালের ৩০১ নম্বর ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালের ডাক্তার বলেছেন, তার বা পা’টি সচল রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এদিকে, দিনমজুর বাবা ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে দিশেহারা। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাকি ছয়জনের সংসার চালাতে তাকে হিমশিম খেতে হয়। এরপর ছোট ছেলে এখন পঙ্গু। তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ধারদেনা করে চিকিৎসা ঠিকই চালাচ্ছেন বাবা। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা মনে উঠতেই ডুকরে কেঁদে ফেলেন। দুলাল খান বলেন, তার ছেলের এই করুণ দশার জন্য যারা দায়ী তারা এখন পর্যন্ত তার ছেলেকে দেখতে পর্যন্ত আসেনি। তিনি বলেন, তার ছেলের এই করুণ পরিণতির জন্য কেউ দায় এড়াতে পারে না। যারা ভবন ভাঙছিল তারা যেমন দায়ী, তেমনি তিনি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনসহ যারা এসব দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত তারা যদি তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন করতো তবে তার শিশুসন্তানকে পঙ্গু হতে হতো না। এদিকে, পুলিশ ওই ঘটনায় একটি মামলা নিয়েই ক্ষান্ত। সেই মামলাটিও করেছেন নিহত শাহরিয়ারের বোন মেহেরুন্নেসা। রাসেলের পরিবার থেকে মামলা করার কথা বললেও পুলিশ বলেছে একই ঘটনায় দুটো মামলা হয় না।
রাসেলের মা নাজমা বেগম বলেন, আমরা গরিব অসহায়। আমরা ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছি না। তিনি তার ছেলের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তিনি বলেন, তার ছেলের ভবিষ্যৎ বলতে আর তো কিছুই নেই। স্বপ্ন ছিল ছেলেটি কুরআনে হাফেজ হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে। এখন কিভাবে তার ভবিষ্যতের দিনগুলো কাটবে সেই চিন্তায় অস্থির তারা। তিনি বলেন, বারবার তারা বাড়িওয়ালার কাছে গিয়েছেন। কিন্তু বাড়িওয়ালা তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশের কাছে গিয়েও কোনো পাত্তা পাচ্ছেন না। এখন আর যাওয়ার জায়গা নেই তাদের।


আরো সংবাদ



premium cement