গুরুতর আঞ্চলিক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ২০ মে ২০২৪, ০০:০০
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট গুরুতর আঞ্চলিক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সঙ্কট আরো ঘনীভূত হতে পারে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা জরুরি। এটিই একমাত্র স্থায়ী সমাধান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ভারত ও চীনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের যদি আমরা এই ইস্যুতে আরো বেশি করে যুক্ত করতে পারি, তা হলে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওভারসিস করেসপন্ডেন্টস বাংলাদেশ (ওকাব) আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট : ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ বিষয়ক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করছে। একই সাথে আমরা রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে গাম্বিয়াকে সহযোগিতা করেছি। আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশ আমাদের পক্ষেই রয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত এই মামলার ইতিবাচক ফলাফল আসবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি উগান্ডায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমার বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়ানোর জন্য হলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। কিন্তু মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে এখন যে পরিস্থিতি, সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনী পালিয়ে এসে আমাদের এখানে আশ্রয় নিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা রোহিঙ্গাদের সেখানে ঠেলে দিতে পারি না।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জীবিকার সুযোগ দিতে বলেছে। ক্যাম্পে তারা কিছু কাজ করছে। কিন্তু তাদের পূর্ণাঙ্গ জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তা আমরা কিভাবে দেবো? আর রোহিঙ্গাদের জীবিকার ব্যবস্থা করা সমস্যার সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান হচ্ছে সব অধিকারসহ তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত বছর রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল অনেক কমে গিয়েছিল। আগে মাথাপিছু ১২ ডলার ছিল; যা গত বছর ৮ ডলারে নেমে আসে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের আক্রমণে মানবিক সঙ্কটের কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল কমে গিয়েছিল। এ বছর আমাদের চেষ্টায় তহবিল বেড়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ মাথাপিছু ১০ ডলারের ওপরে যাবে।
রোহিঙ্গাদের মানবিক দিকের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর সমাধানে আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে একযোগে উদ্যোগী হতে হবে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওকাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অবস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গারা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, সন্ত্রাসী তৎপরতা, মানবপাচারের মতো অপরাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে। অনেকে মানবপাচারকারীদের শিকার হয়ে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে অবৈধভাবে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা এমনকি বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েছে।
ওকাবের সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ ও বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতির (ডিকাব) সভাপতি নূরুল ইসলাম হাসিব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা