বোরোর ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ বেশি
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
হতাশ কৃষক
- উপকরণের দাম বেশি
- বিঘায় দেড় হাজার টাকা লোকসান
- প্রকৃত কৃষক গুদামে ধান দিতে পারছেন না
সারা দেশে এ বছর বোরো ধানের ফলন বাম্পার হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রতি হেক্টর জমিতে সাড়ে ৭ টন পর্যন্ত ফলন হয়েছে। তবে ধান উৎপাদন খরচ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হতে পারছেন না। ফলে বিঘাপ্রতি ধানের ফলন ভালো হওয়ার পরও হতাশা কাটছে না কৃষকদের। কৃষকরা জানিয়েছেন ধান চাষে ব্যবহৃত কৃষি উপকরণের দাম অত্যধিক বেড়ে গেছে। জমিতে কাজ করা শ্রমিকের মজুরি বেশি হয়ে গেছে। ফলে প্রতি বিঘায় দেড় হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ দিকে প্রকৃত কৃষকরা সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ করতে না পারায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আবদুল গফুর, নীলফামারী থেকে জানান, নীলফামারীতে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। হাইব্রিড জাতের ধান এখনো পুরো দমে কাটা শুরু না হলেও ২৮ জাতের চিকন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ জেলার কৃষকরা। তবে বর্তমান ধানের বাজার মূল্যে প্রতি বিঘায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। একে তো ধানের দাম নেই, তার ওপর শ্রমিক সঙ্কটে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে বোরো আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন এ জেলার কৃষকরা বলে জানা গেছে।
নীলফামারী সদর উপজেলার টুপামারী ইউনিয়নের হাফেজপাড়া গ্রামের কৃষক লোকমান হোসেন আপেক্ষ করে বলেন, সব জিনিসের দাম বাড়ে আর খালি কমে শুধু ধানের দাম। তিনি এবার দেড় বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। দেড় বিঘায় উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ মণ ধান হতে পারে। বর্তমান বাজার দর ৯০০ টাকা মণ ধরলেও ১৫ মণ ধানে আসবে ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। নগদে লোকসান এক হাজার ৫০০ টাকা।
একই ইউনিয়নের বাজার মৌজা রেলস্টেশন পাড়ার কৃষক সাগর আহমেদ জানান এক বিঘা জমিতে সেচ খরচ তিন হাজার, ধান কর্তন ও মাড়ানি খরচ তিন হাজার ৫০০, জমি চাষ, বীজ, সার, কীটনাশক, নিড়ানিসহ ১০ হাজারেরও বেশি উৎপাদন খরচ হয়। অথচ ধান বিক্রী করে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচ উঠছে না।
সাগর বলেন, ‘সামনের বছর থেকে ধান আবাদ করব না। ভুট্টা আবাদ করব। এতে ভালো লাভ আসবে।’ সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী শালমারা বাজারের ধান ব্যবসায়ী মজনু বলেন, বতর্মানে নতুন চিকন ধান প্রতি মণ ৯০০ আর মোটা ধান ৮৫০ টাকা দরে ক্রয় করছি।
এ দিকে নীলফামারীতে ধান কাটার শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রায় এক মাস আগে ধান কাটা শুরু হওয়ায় এখানকার শ্রমিকরা দলবেঁধে সেখানে যাওয়ায় এ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের নীলফামারী উপপরিচালক এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান জেলায় এবার ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে এ বছর ৩২ টাকা কেজি ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা যদি ধান শুকিয়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যান, তাহলে লাভবান হবেন।
আবুল কালাম, বগুড়া অফিস থেকে জানান, গত মৌসুমের চেয়ে এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে ধান চাষে খরচ উঠছেন না চাষির। সরকার অভ্যন্তরীণ খাদ্য সংগ্রহ কর্মসূচির আওতায় কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা শুরু করলেও অনেক গুদামে এখনো তা শুরু হয়নি। আবার অসাধু খাদ্য কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে প্রকৃত কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী না হয়ে হাটবাজারে দাম কিছুটা কম হলেও বিক্রি করতে বাধ্য হন। ফলে সরকারের সেই সুবিধা পাচ্ছেন সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মী ও ফড়িয়ারা।
জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার বোরো মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলায় কৃষকের কাছ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৫ টাকা কেজি দরে চাল ক্রয় শুরু করেছে সরকার। তবে কয়েকটি উপজেলায় এখনো শুরু হয়নি।
ধুনট থেকে রাকিবুল ইসলাম জানান, ধুনটে কৃষি শ্রমিকের মজুরির থেকে ধানের দাম নেই বললেই চলে। চলতি মৌসুমে যে ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকা প্রতি মণ, গত বছর তার মূল্য ছিল ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা। দামে কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও মজুরি বেশি হওয়ায় ধান বিক্রি করে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না প্রান্তিক চাষিরা।
উপজেলর নিমগাছী ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের কৃষক সামসুল হক জানান, আমি সুফল লতা জাতের আধা শুকনা ধান হাটে নিয়ে বিক্রি করেছি। কিন্তু গত বছরের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি পেলেও কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় খুব একটা লাভবান হচ্ছি না। চাপড়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম জানান, কাটারী জাতের ধান এক হাজার ২০০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হলেও পোষাতে পারছি না শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে। তবে এবার হিরা জাতের ধানের চাহিদা অনেকটাই কম। ওজনে বৃদ্ধি হলেও দানা মোটা হওয়ায় পাইকারদের চাহিদা নেই বললেই চলে বলে মন্তব্য করেন নান্দিয়ারপাড়া গ্রামের চাষি সিহাবুল ইসলাম। রবিউল হাসান নামের পাইকারি ধান ব্যবসায়ী জানান, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে ধানের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর যে ধান প্রতি মল এক হাজার ১৫০ টাকা ছিল, চলতি বছরে সেই ধান এক হাজার ২০০ টাকা । এ দিকে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হলেও ধুনটে শুরু হয়নি।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, মাঠপর্যায়ে কৃষদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের প্রস্তুতি চলছে। যারা ধান বিক্রি করতে ইচ্ছুক তাদের অনলাইনে আবেদন চলছে। চলতি মৌসুমে এক হাজার ৪০ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই ধান ক্রয়ের শুভ উদ্বোধন হবে।
সোনাতলা থেকে মিনাজুল ইসলাম জানান, বগুড়ার সোনাতলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। গত বছরের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি হলেও এবার দান ধাষে খরচ বেশি হয়েছে। একই সাথে সবাই ধান কাটা শুরু করায় শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তাই অনেক এলাকায় নারী শ্রমিকদেরকে মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে। এ পর্যন্ত ৪৮ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।
দিগদাইড় গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বুলু বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, ২ বিঘা জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান চাষ করেছিলাম। আশানুরূপ ফলন হয়নি। হালকা বাতাসে ধানের গাছ জমিতে পড়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় বোরো ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। ফলনও আশানুরূপ হয়েছে।
কাহালু থেকে এম এ কাদের জানান, চলতি রোরো মৌসুমে কাহালু খাদ্য গুদামে ৩২ টাকা কেজি দরে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে এক হাজার ১৩২ মেট্রিক টন ধান ও মিলারদের কাছ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে তিন হাজার ২০৬ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্য নিয়ে গত সোমবার (১৩ মে) কাহালু খাদ্যগুদাম চত্বরে ঘটা করে ধান ও চাল ক্রয়ের উদ্বোধন করা হলেও সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের কথা কৃষকরা জানে না। প্রচারণা ছাড়া প্রতি বছর ধান ক্রয়ের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপজেলার মিল মালিক, জনপ্রতিনিধি, সরকারি দফতরের কর্মকর্তা, অফিসার ও স্থানীয় সুধীজন আমন্ত্রণ পেলেও আমন্ত্রণ জানানো হয় না কৃষকদের। ফলে মৌসুম শেষে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কখনই সম্ভব হয় না; যে কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। সরকার কৃষকদের উৎপদিত ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির বিষয়টি মাথা রেখে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে মৌসুমের শুরু থেকেই সরাসরি ধান ক্রয়ের নির্দেশ প্রদান করলেও স্থানীয় খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে তা ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারিভাবে খাদ্য গুদামে ধান ক্রয়ের বিষয়টি জানেন না আখুন্জা গ্রামের কৃষক আবু জাফর, খাজলাল গ্রামের আবুল জোব্বার, লোকমান আলী, কচুয়া গ্রামের নাছির উদ্দিনসহ এলাকার প্রান্তিক কৃষক সমাজ।
এ ব্যাপারে খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, উদ্বোধনের আগে কৃষকদের জানানো হয়নি। তবে অচিরেই এলাকায় মাইকিং করে কৃষকদের ধান ক্রয়ে বিষয়টি জানানো হবে।
এম এ বাসেত তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) থেকে জানান, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বোরো-ইরি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বাজারে দাম কম হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি নেই।
পঞ্চগড় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপপরিচালকের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে জেলায় মোট ৩৩ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো-ইরি ধান চাষ হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ব্রি ধান ৯২, ১০০, ১০২ ও ১০৮ জাতের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই জাতের ধান প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৭ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়ার আশা রয়েছে। সাধারণত বড় মাপের বিঘা (১০০ শতক) জমিতে ৭০ থেকে ৭৫ মণ ফলন পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত ব্রি-৮৯, ২৮ ও ২৯ জাতের ধান পরীক্ষামূলকভাবে প্রদর্শনী আকারে চাষাবাদ করা হয়েছে। সম্প্রতি আগাম জাতের বোরো-ইরি ধান কাটা-মাড়াই চলছে। আগামী দুই সপ্তাহ পর পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে।
গত মঙ্গলবার সকালে বেরং নদী এলাকায় আগাম বোরো ক্ষেতের পাকা ধান কাটার সময় এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় চাষি আবুল হোসেনের সাথে। এই চাষি বলেন, দুই একর জমিতে ব্রি ২৯ জাতের বোরো-ইরি ধান চাষাবাদ করেছি, বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এ বছর দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে ধানের শীষ ছোট হয়েছে। এ ছাড়া ডিজেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে সঠিকভাবে জমিতে পানি সেচ দিতে পারিনি। তাই উৎপাদন ব্যয় বাদ দিলে খুব বেশি লাভ হবে না।
তেঁতুলিয়া সদরের বারঘুরিয়া গ্রামের বোরো চাষি মমিনুল বলেন, দুই বিঘা জমিতে বোরো-ইরি আবাদ করেছি। ২৮ ও ২৯ জাতের ধান আবাদ করেছি ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ৫০০ টাকা হাজিরায় দুই বেলা খাবার দিয়ে শ্রমিকের মজুরি ও সার এবং কীটনাশকের দাম হিসাব করলে তেমন লাভ হবে না।
মাগুরা গ্রামের বোরো ইরি চাষি আবদুল লতিফ জানান, এক বিঘা জমিতে ধান চাষাবাদ করেছি। ২৫ থেকে ৩০ মণ ফলন হবে। বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি মণ শুকনা ধান এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চারা রোপণ থেকে ধান কাটা-মাড়াই পর্যন্ত হিসাব করলে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবু নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য কৃষিকাজে চাষাবাদ করতে হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌস বলেন, তেঁতুলিয়া উপজেলায় চার হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বোরো-ইরি চাষ হয়েছে। দীর্ঘ দিন অনাবৃষ্টি থাকলেও বোরো-ইরির বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা বাজারে সঠিক দাম পেলে আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক, কৃষিবিদ মো: আবদুল মতিন বলেন, এ বছর সূর্যের আলো বেশি থাকার কারণে বোরো-ইরি চাষাবাদসহ সব ধরনের ফসল ভালো হয়েছে। জেলায় স্বল্প পরিসরে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা মাড়াই শুরু হবে। এ মৌসুমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিদ উচ্চ ফলনশীল ব্রি ৯২, ৮৯ ও ১০০ প্লাস জাত ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে জানান, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হওয়ায় এখানকার কৃষকরা খুশি। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সব পাকা ধান কাটা হতে পারে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় এক হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৮৫ হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭৪৪ টন ধান। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত হাজার ১৬৩ টন। সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয়েছে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়ন ও মিরসরাই সদর ইউনিয়নে। মহামায়া সেচ প্রকল্পের কারণে পানি সরবরাহ থাকায় এই দুই ইউনিয়নে বেশি ধান আবাদ হয়ে থাকে। এ ছাড়া করেরহাট, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, খৈয়াছড়া ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে আবাদ করা হয়েছে।
উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের বোরো চাষি মো: শামসুদ্দিন জানান, একসময় পানির অভাবে দুর্গাপুর ইউনিয়নে বোরো চাষ হতো না বললেই চলে। ২০১০ সালে মহামায়া সেচ প্রকল্প উদ্বোধনের পর উপজেলার সবচেয়ে বেশি বোরো চাষ হচ্ছে দুর্গাপুরে। এবার আমি দুই একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে।
উপজেলার বামনসুন্দর এলাকার কৃষক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, আমি প্রায় তিন একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। বেশির ধান পেকে গেছে। কিছু জমির ধান কাটা হয়েছে। পুরোপুরি ধান কাট শেষ হতে আরো ১০-১২ দিন লাগতে পারে। তবে ধান কাটা শ্রমিকের দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। সে হিসেবে ধানের দাম বাড়েনি।
মিরসরাই উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম জানান, চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের জন্য উপজেলার ২১০০ প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এক হাজার ২০০ কৃষককে দুই কেজি করে হাইব্রিড জাতের বীজ ও ৯০০ কৃষকের মাঝে পাঁচ কেজি করে উফশী জাতের বীজ ও ১০ কেজি করে সার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সব সময় মাঠে থেকে চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, চলতি মৌসুমে গত বছরের তুলনায় বোরো আবাদ বেশি হয়েছে। সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ও বীজ, সার দিয়ে চাষিদের উৎসাহিত ও সহযোগিতা করেছে। এতে কৃষকরা উৎসাহিত হয়ে আবাদ বাড়িয়েছে। আগামীতে আবাদ আরো বাড়তে পারে। এবার ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি উৎপাদানে ধান ও চালে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এক হাজার
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা