১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি শুরু

হামাসের অভিযানে ১২ ইসরাইলি সেনা নিহত

রাফায় ইসরাইলি বর্বরতা থামাতে গতকাল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয় : আল জাজিরা -

গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কাছে ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্সকে (আইডিএফ) লক্ষ্য করে অভিযান চালিয়েছে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা। এতে ১২ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
বুধবার হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের কাছে ইসরাইলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে অভিযান চালায় হামাসের আল-কাসসাম ব্রিগেডের যোদ্ধারা। তারা ইয়াসিন-১০৫ নামের একটি শেল দিয়ে ইসরাইলের ডি-৯ সামরিক বুলডোজারকে লক্ষ্যবস্তু করে। এতে দুই ইসরাইলি সেনা নিহত হয়। পরে একটি বাড়িতে লুকিয়ে থাকা একটি ইসরাইলি ফোর্সকে লক্ষ্য করে গোলা নিক্ষেপ করে হামাস, সেখানেও একজন ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে বলে জানায় হামাস।
জাবালিয়ায় ইসরাইল বিমান হামলা চালানোর পর বুধবার এই অভিযান চালায় হামাসের যোদ্ধারা। এ সময় ইসরাইলি মারকাভা ট্যাংক লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করে সেটিকে ধ্বংস করেছে হামাসের যোদ্ধারা। হামাসের এই অভিযানে সেখানে ১২ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে বলে জানায় হামাস। বেশ কয়েকদিন ধরেই জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে গত কয়েক দিনে সেখানে বেশ কয়েকটি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া গত সাত মাসে গাজাজুড়ে ইসরাইলি নৃশংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহতের সংখ্যা ৭৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
ভুল করে নিজ সেনাদের ওপর ইসরাইলের ট্যাংক হামলা, নিহত ৫ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার জাবালিয়ায় ট্যাংক হামলায় প্রাণ হারিছেন পাঁচ ইসরাইলি সেনা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো সাতজন। যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বুধবার এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল। সংবাদমাধ্যমটি গতকাল বৃহস্পতিবার জানায়, নিহত সেনাদের সবাই প্যারাট্রুপার্স ব্রিগেডের ২০২ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। তাদের ওপর ভুল করে ট্যাংক হামলা চালানো হয়। ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফ) প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্যারাট্রুপারদের সাথে জাবালিয়ায় হামলা চালাতে গিয়েছিল ট্যাংক বাহিনী। এ দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে একটি ভবনকে লক্ষ্য করে ট্যাংক থেকে দু’টি গোলা ছোড়া হয়। ট্যাংক সেনারা ভেবেছিল ভবনের ভেতর ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা আছে। কিন্তু আসলে ছিল ইসরাইলি সেনারাই। ট্যাংক সেনারা সেখানে ট্যাংক নিয়ে ভোরের দিকে গিয়েছিল। আর প্যারাট্রুপাররা এর দুই ঘণ্টা পর সেখানে পৌঁছেছিল। সেখানে গিয়ে প্যারাট্রুপাররা ওই ভবনে অবস্থান নিয়েছিল। এরপর সন্ধ্যার দিকে ওই এলাকায় প্যারাট্রুপারদের আরেকটি দল যায়। ওই সময় তারা ট্যাংক সেনাদের জানিয়েছিল, তারা ভবনটিতে প্রবেশ করছে।
এর কিছুক্ষণ পর ট্যাংক সেনারা ভবনটির একটি জানালা থেকে বন্দুকের নল দেখতে পায়। তারা ভেবেছিল এতে হামাসের যোদ্ধারা রয়েছে। ওই ভাবনা থেকে ভবনটিতে দু’টি গোলা ছোড়া হয়। এতেই এত বড় হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা আরো তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনী।
আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি শুরু : এ দিকে এপি জানায়, ফিলিস্তিনের গাজার অতি ঘনবসতিপূর্ণ রাফায় সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরাইলকে চাপ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকার করা এক আবেদনের ওপর আজ বৃহস্পতিবার দুই দিনের শুনানি শুরু করেছেন জাতিসঙ্ঘের শীর্ষ আদালত। গত শুক্রবার এ আবেদন করা হয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি বাহিনী নির্বিচার হামলা শুরু করার পর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি পালিয়ে সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন। এখন উপত্যকাটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর আবাস এ শহরেও ইসরাইলি বাহিনী অভিযান শুরু করেছে। এ অবস্থায় আবার রাফাহ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন লোকজন।
গাজায় ইসরাইলের সাম্প্রতিকতম আগ্রাসন নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার পর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) জরুরি পদক্ষেপ চেয়ে আবেদন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। আবেদনে বলা হয়, গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল যে সামরিক পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে, সেটি গণহত্যার শামিল। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার পর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো আইসিজেতে জরুরি পদক্ষেপ চেয়ে আবেদন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির অভিযোগ, গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল যে সামরিক পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে, সেটি গণহত্যার শামিল। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ আবেদনে বলা হয়েছে, হেগভিত্তিক এ আদালতের এর আগে দেয়া প্রাথমিক নির্দেশ ‘গাজার মানুষের অবশিষ্ট একমাত্র আশ্রয়স্থলটিতে ইসরাইলের নৃশংস সামরিক হামলা’ প্রতিরোধে যথেষ্ট নয়।
রাফাহকে হামাস যোদ্ধাদের শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসেবে তুলে ধরছে ইসরাইল। দেশটির ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যরা সতর্ক করে বলে আসছে, রাফায় বড় ধরনের যেকোনো সামরিক অভিযান বেসামরিক লোকজনের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। তবে এই সতর্কতা গায়ে লাগাচ্ছে না ইসরাইল। দক্ষিণ আফ্রিকা তার আবেদনে রাফাহ থেকে ইসরাইলকে সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া গাজায় জাতিসঙ্ঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কর্মী ও সাংবাদিকদের নির্বিঘœ প্রবেশের পদক্ষেপ নিতে এবং এসব দাবি কিভাবে পূরণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে আদালতের কাছে আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাফায় ইসরাইলি অভিযান মানবিক সহায়তা ও মৌলিক পরিষেবা, ফিলিস্তিনি চিকিৎসাব্যবস্থা টিকে থাকা ও ফিলিস্তিনিদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে চরম ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। আবেদনে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা কনভেশন ক্রমাগত লঙ্ঘন করার অভিযোগও করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের শুরুতে ইসরাইলের ‘গণহত্যা’র ওপর আইসিজেতে শুনানি চলাকালে দেশটি এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে নাকচ করে দেয়। দেশটির দাবি, গাজার বেসামরিক লোকজনদের রক্ষায় তারা সম্ভব সবকিছু করছে এবং একমাত্র হামাস যোদ্ধাদের নিশানা করছে। আর গণহত্যার অভিযোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা যে বিচার চেয়েছে, তার নিন্দা জানিয়েছে ইসরাইল।
গত জানুয়ারিতে আদালতের বিচারকরা গাজায় হত্যাকাণ্ড, ধ্বংসযজ্ঞ ও যেকোনো ধরনের গণহত্যামূলক কাজ প্রতিরোধে ইসরাইলকে সবকিছু করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু উপত্যকাটিতে হামলা বন্ধ করা নিয়ে কোনো আদেশ দেননি। ইসরাইলি বাহিনীর নারকীয় হামলায় ইতোমধ্যে গাজার বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। মার্চে দ্বিতীয় আরেক আদেশে আদালত বলেছিলেন যে গাজায় মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ইসরাইলকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সেখানে খাবার, পানি, জ্বালানি ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরো স্থলসীমান্ত খুলে দেয়ার বিষয়টি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে ভূমিকা রাখেন জাতিসংঘের এ আদালত। এর আদেশ মানতে বাধ্য হলেও তা প্রয়োগের কোনো কার্যকর উপায় আদালতের হাতে নেই। এ আদালতের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে আদেশ দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement