ফারাক্কা দিবসে আলোচনাসভা ও মানববন্ধন
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৭ মে ২০২৪, ০০:০৫
বাংলাদেশে উজানে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিবাদে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে লংমার্চের দিনটিকে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭৬ সালে ১৬ মে ওই লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দিবসটি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিবাদে লংমার্চ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, গঙ্গা-পদ্মার পানির নায্য হিস্যা আদায়ে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তারা বলেন, আজ থেকে ৪৮ বছর আগে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী যে উপলব্ধির প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন আজ তা বাস্তবে ঘটে চলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চের ৪৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে হেরিটেজ রাজশাহী’র উদ্যোগে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে ‘ফারাক্কা লংমার্চের ঐতিহাসিক পটভূমি ও মওলানা ভাসানী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ কথা বলেন।
সরদার আবদুর রহমান তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ‘মারণ বাঁধ ফারাক্কা’ অভিমুখে লাখো জনতার ঐতিহাসিক লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। যার রেশ উপমহাদেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পৌঁছে যায়। আজও এই দিনটি আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে দাবি আদায়ের পক্ষে প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, মওলানা ভাসানী সেদিন গুরুতর অসুস্থতা নিয়েই এই লংমার্চের নেতৃত্ব দেন জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে। ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ আজও দেশপ্রেমিক জনতার জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে আছে। সভায় অতিথিবৃন্দ এ উপলক্ষে প্রকাশিত একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এর প্রফেসর ড. সলিমুল্লাহ খান। হেরিটেজ রাজশাহী’র সভাপতি গবেষক ও লেখক মাহবুব সিদ্দিকী এতে সভাপতিত্ব করেন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও লেখক সরদার আবদুর রহমান। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক যুগ্মসচিব ও জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কাসেম, ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা: ওয়াসিম হোসেন, প্রফেসর ড. কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, প্রফেসর ড. তারেক ফজল, রাজশাহী বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ টি. জাহেদী, মাওলানা ভাসানীর পরিবারের সদস্য আজাদ খান ভাসানী প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন হেরিটেজ রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুর রহমান লাভলু।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, ভারতের কাছ থেকে পদ্মা ও তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে উদ্যোগ গ্রহণের দাবিতে বরিশালে প্রতিবাদী মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়েছে। ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে গতকাল দুপুরে নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এ কর্মসূচি হয়। বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি বরিশাল জেলা কমিটির উদ্যোগে আয়োজনে প্রতিবাদী কর্মসূচি হয়েছে। মানববন্ধন শেষে নেতাকর্মীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে।
সংগঠনের বরিশাল জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নৃপেন্দ্র নাথ বাড়ৈ-এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আব্দুস ছত্তার। আরো বক্তৃতা দেন, বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য উপাধ্যক্ষ হারুন অর রসিদ, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক আমিনুর রহমান খোকন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারত আমাদের স্বাধীনতার বন্ধু হিসেবে সহযোগিতা করেছে ঠিক। কিন্তু আজ তারা চারদিকে পানি নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের পানি শূন্য করে তিলে তিলে হত্যা করছে। এমন আচরণ কোনো বন্ধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে কামনা করা যায় না।
অপর দিকে বর্তমান সরকার ভারতের আশীর্বাদ নিয়ে ২০০৮ ক্ষমতায় এসেছে। ফলে নতজানু পররাষ্ট্রনীতি ও বিনা ভোটে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বলছে না।
মুসলিম লীগ : বাংলাদেশের জন্য ফারাক্কা এক ভয়াবহ অভিশাপের নাম যার প্রভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের ছয় কোটি মানুষ পানির অভাবে ধুঁকছে, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ অঞ্চল সেচের পানির অভাবে মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। এই অভিশাপের প্রাকৃতিক, ভৌগোলিক ও সামাজিক নানাবিধ ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণই বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা। পরীক্ষামূলকভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু করার ভাঁওতাবাজিতে স্বাধীনতাকালীন বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রবল কর্তৃত্বপরায়ণ ও আগ্রাসনবাদী হয়ে ওঠার স্বরূপ দেশের জনগণের কাছে উন্মোচিত হয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালের বুনিয়াদি স্বাধীনতা তথা আজাদি আন্দোলনের অন্যতম সদস্য তৎকালীন আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি, দূরদর্শী মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ফারাক্কা অভিশাপের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। বিভ্রান্ত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় গোটা জাতিকে তিনি ১৯৭৬ সনের ১৬ মে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চের ডাক দিয়ে বাংলাদেশী জাতিসত্তায় বলীয়ান হয়ে মাথা উঁচু করে নিজের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে গতকাল বাংলাদেশ মুসলিম লীগের উদ্যোগে পল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আজিজ হাওলাদারের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ এ মন্তব্য করেন। আরো বক্তব্য রাখেন দলীয় মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, স্থায়ী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন আবুড়ী, সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আফতাব হোসেন মোল্লা, সৈয়দ আব্দুল হান্নান নূর, অতিরিক্ত মহাসচিব কাজী এ এ কাফী, কেন্দ্রীয় নেতা খান আসাদ, খোন্দকার জিল্লুর রহমান, শেখ এ সবুর প্রমুখ।
রাশেদ প্রধান : জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেছেন, একতরফা ভারতীয় পানি আগ্রাসনের কারণে ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলকে মরুভূমি বানাচ্ছে।
তিনি গতকাল আসাদগেট জিইউপি মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা আয়োজিত ‘ফারাক্কা বাঁধ ভেঙ্গে দাও’ ধুঁকছে স্বদেশ-কাঁদছে কৃষক এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনপথে শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
রাশেদ প্রধান বলেন, বিশ্বের মানচিত্র ঘিরে বাংলাদেশ ছিল একটি নদীমাতৃক দেশ। উজান ভাটির এ দেশে চারদিক মুখরিত ছিল সবুজ শ্যামল ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে। আজ আফসোস হয় ভারতীয় পানি আগ্রাসন আমাদের দেশের প্রকৃতির তাজা প্রাণ হত্যার চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, দেশের উত্তরাঞ্চলে প্রমত্ত পদ্মা আজ একটি খালে পরিণত হয়েছে। পানির অভাবে কৃষক হারাচ্ছে তার উৎপাদিত ফসলি জমি এবং প্রকৃতি হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। পানির অভাবে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশকে মহাবিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও জাগপার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মওলানা ভাসানী সেই সময় উপলব্ধি করেছিলেন ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করবে এবং ভারতীয় আগ্রাসন আমাদের তিলে তিলে মারবে। একইভাবে আরেকজন ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী জননেতা শফিউল আলম প্রধান উপলব্ধি করেছিলেন ভারতীয় আগ্রাসন আমাদের ভাতে-পানিতে ও গুলিতে মারবে। আজকে ভারত বাংলাদেশের জনগণের ওপর সেই জুলুম-নিপীড়ন চালাচ্ছে।
এ সময় বক্তব্য রাখেন জাগপার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান খান, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, জাগপা ঢাকা মহানগর যুগ্ম আহ্বায়ক মনোয়ার হোসেন, যুব জাগপা ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুব জাগপার যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক জনি নন্দী প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি।
খন্দকার লুৎফর রহমান : ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস উপলক্ষে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এক আলোচনা সভা নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাগপা’র সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান বলেন, ওরা আমাদের পানিতে ও ভাতে মারতে চায়। ওরা আমাদেরকে এখন সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মারছে। তাদের এই আগ্রাসন প্রতিহত করতে আমাদেরকে মওলানা ভাসানীর ফারাক্কা লংমার্চের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মো: হোসেন মোবারকের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন জাগপা’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: আওলাদ হোসেন শিল্পী, সাইফুল আলম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল হোসেন, মহানগর জাগপা’র সাধারণ সম্পাদক এম এ শাহিন, যুব জাগপা’র সভাপতি আমির হোসেন আমু, যুবনেতা শেখ আকবর হোসেন, ওসমান শেঠ প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা