খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়াল
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৪ মে ২০২৪, ০১:৩৭
- গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই
- খাদ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ
- মূল্যস্ফীতি হারের নিচে মজুরি হার
দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পরিসংখ্যান বু্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে কমেছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার মার্চের ৯.৮১ শতাংশ থেকে কমে এখন ৯.৭৪ শতাংশ। অথচ মজুরি হার এখন ৭.৮৫ শতাংশ। কিন্তু খাদ্য খাতে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে চার মাস পর আবার ১০ শতাংশ অতিক্রম করে এপ্রিলে ১০.২২ শতাংশে ঠেকেছে। এই হার ১০.২৫ শতাংশ এবং শহরে ১০.১৯ শতাংশ বলে বিবিএসের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। গত বছর নভেম্বরে খাদ্য খাতে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০.৭৬ শতাংশ। একই বছর অক্টোবরে এই হার ছিল ১২ শতাংশের বেশি। বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্য নিয়ে সরকারের অপর সংস্থা বিআইডিএস দ্বিমত পোষণ করেছে। সম্প্রতি এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির হার যেভাবে বাড়ছে, মানুষের আয় সে হারে বাড়ছে না। ফলে মানুষ মূল্যস্ফীতির বিশেষ করে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে।
বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়েছে, শহর ও গ্রামে খাদ্য কিনতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম দুই জায়গাতেই ১০ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। ১০০ টাকার খাদ্যপণ্য এখন কিনতে হচ্ছে ১১০ টাকারও বেশি দামে। এপ্রিলে খাদ্য খাতে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ১০.২২ শতাংশ, যেটা মার্চে ছিল ৯.৮৭ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত খাতে এপ্রিলে ৯.৩৪ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ৯.৬৪ শতাংশ।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চ মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বিবিএসের তথ্য বলছে, মার্চ মাসে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় মূল্যস্ফীতিই বেড়েছে। মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ৪৪ এবং ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে বেড়েছে। মার্চে যেখানে ৯.৬৮ শতাংশ ছিল, সেটা এপ্রিলে এসে ৯.৯২ শতাংশ হয়েছে, যা ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই করছে। খাদ্য খাতে এই হার এপ্রিলে ১০.২৫ শতাংশে ঠেকেছে, যা মার্চে ছিল ৯.৮৬ শতাংশ। এ ছাড়া খাদ্যবহির্ভূত খাতেও মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে এপ্রিলে ৯.৬০ শতাংশ হয়েছে। যেখানে মার্চে ছিল ৯.৪১ শতাংশ।
শহরে সার্বিক ও খাদ বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও খাদ্য খাতে বেড়ে এখন ১০.১৯ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ৯.৯৮ শতাংশ। সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার এপ্রিলে কমে এখন ৯.৪৬ শতাংশ, যা মার্চে ছিল ৯.৯৪ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার এপ্রিলে ৯.০১ শতাংশ, যা গত মার্চে ছিল ৯.৭১ শতাংশ বলে বিবিএসের তথ্য থেকে জানা গেছে।
বিবিএস বলছে, যেখানে এপ্রিল মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সেখানে মজুরি সূচক বেড়ে মাত্র ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ হয়েছে। তার মানে সংসারের খরচ মেটাতে ধারদেনা করতে হচ্ছে। কৃষিতে ৮ দশমিক ২৫, শিল্প খাতে ৭ দশমিক ৩৬ ও সেবা খাতে মজুরি সূচক ৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। কোনো খাতেই ৯ শতাংশের ওপরে মজুরি নেই, অথচ সাধারণ মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্লেষকেরা বলেন, মূল্যস্ফীতি এক ধরনের কর, যা ধনী-গরিব-নির্বিশেষে সবার চাপ বাড়ায়। আয় বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশি বেড়ে গেলে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বাড়ে। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বেশ চড়া। তার সাথে চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন সম্প্রতি এক আলোচনায় বলেছেন, দেশে এখন খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশের কম নয়। মাছ ও পোলট্রি মুরগির কারণে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। শুধু সুদহার বাড়িয়ে এ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। শুল্ক কমানোসহ বেশ কিছু উদ্যোগ সমন্বিতভাবে নিতে হবে। তিনি বলেছেন, বাড়তি এ মূল্যস্ফীতির কারণে নি¤œ আয়ের মানুষ অসুবিধায় ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা