সোনালীতে বিলীন বিডিবিএল
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৩ মে ২০২৪, ০১:০১
পদ্মার পর নিজেকে স্বেচ্ছায় বিলীন করতে এবার সোনালী ব্যাংকের সাথে সমঝোতাচুক্তি করল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই চুক্তি সই হয়। ব্যাংক দু’টির শতভাগ মালিকানায় সরকার হলেও সমঝোতাচুক্তিতে সরকারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তবে, চুক্তির সময় সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএলের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিকে সোনালী ব্যাংকের সাথে একীভূত হওয়ার চুক্তি হলেও আতঙ্কে আছেন বিডিবিএলের কর্মকর্তারা। জনৈক কর্মকর্তা বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে নীতিমালা দেয়া হয়েছে, তাতে তিন বছর পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। কিন্তু তিন বছর পর কী হবে তা নীতিমালায় বলা হয়নি। ফলে তিন বছর পর উদ্বৃত্ত হিসেবে চাকরি থেকে বিদায় করে দিলে কারো কিছু করার থাকবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী একীভূত হওয়ার তিন বছর পর দুর্বল ব্যাংকের কর্মীদের কর্মদক্ষতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে অধিগ্রহণকারী ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছিল এক ডজনেরও বেশি দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করা হবে। প্রথমে তাদেরকে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। এ জন্য আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচক উন্নতি না হলে আগামী বছরের মার্চের পর বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করা হবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি নীতিমালাও দেয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময় না আসতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংককে ইউনাইটেড কামার্স ব্যাংকের (ইউসিবিএল) সাথে, শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের সাথে বেসরকারি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংকের একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু বেসিক ব্যাংক ও এনবিএলের তীব্র বিরোধিতার মুখে একীভূত করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেসিক ব্যাংকের পর্ষদ সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, বেসিক ব্যাংক শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক। সুতরাং ব্যাংকটি একীভূত করলে সরকারি কোনো ব্যাংকের সাথেই একীভূত করতে হবে। তারা এ জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অপর দিকে এনবিএল সাবেক পর্ষদও সাফ জানিয়ে দেয়, তারা কোনো ব্যাংকের সাথে একীভূত হবে না। তারা নিজেরাই ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এনবিএলের সাবেক এক পর্ষদ সদস্য গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পর্ষদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতার কারণেই তাদেরকে এনবিএল থেকে ছেড়ে যেতে হয়েছে। রাতারাতি এনএবিএলে পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ বসানো হয়েছে। যে পর্ষদে সদস্যদের মধ্যে বেশির ভাগই একটি বড় ব্যাবসায়ী গ্রুপের প্রতিনিধি বলে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিডিবিএলে শতভাগ মালিকানা সরকার। তাই বিডিবিএলকে স্বেচ্ছায় একীভূত করতে বাধার কেউ নেই। আর এ কারণেই সোনালী ব্যাংকের সাথে গতকাল স্বেচ্ছায় একীভূত করতে গতকাল বিডিবিএল সমঝোতাচুক্তি করেছে। এই চুক্তি সইয়ের পর এখন ব্যাংক দু’টির সম্পদ ও দায় পর্যালোচনা করা হবে। এরপরই নানা প্রক্রিয়া শেষে একীভূত হবে ব্যাংক দু’টি।
বিডিবিএলের কর্মীরা একীভূত না হতে ইতোমধ্যে খোলাচিঠি দিয়েছেন। চুক্তি স্বাক্ষরের পর বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস বলেন, বিডিবিএলের চারটি সূচকের মধ্যে শুধু একটি দুর্বল অবস্থায় আছে। সেটি খেলাপি ঋণ, যা আগে ছিল ৪১ শতাংশ। এক বছরে তা কমিয়ে আমি ৩৪ শতাংশে নিয়ে এসেছি। ছয় মাসে আবার খেলাপি ঋণের হার ৩৪ থেকে ৫-১০ বা ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়।
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, অনেক চিন্তাভাবনা করেই আমরা বিডিবিএলকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা কোনো চাপের মুখে না, নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের দুই ব্যাংকের দুই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম জানান, এই মুহূর্তে তার ব্যাংকের আমানত এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। অপর দিকে বিডিবিএলের আছে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা প্রায় ৫০ ভাগের এক ভাগ। একই অবস্থা ঋণের ক্ষেত্রেও। কাজেই এটার খুব বেশি প্রভাব সোনালী ব্যাংকের ওপর পড়বে না। আফজাল করিম আরো বলেন, বিডিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শঙ্কিত বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের প্রায় আট হাজার কর্মী আছেন। তারপরও অনেক লোকবল প্রয়োজন। বিডিবিএলের ছয় শ’র মতো কর্মী আছেন। এ জন্য তাদের শঙ্কার কিছু নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা