তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে চায় ভারত। ইতোপূর্বে চীন এই প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এই প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরুর কথাও জানিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশের সাথে ভারতের তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদনের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটেই এই মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটিতে চীনের অন্তর্ভুক্তিকে নিজেদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছে ভারত। আর তাই এ পরিকল্পনায় পাল্টা বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিবেশী দেশটি।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কুমার কোয়েত্রার সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তিস্তায় একটা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়। আমি বলেছি, তিস্তায় যে প্রকল্পটি হবে, সেটি আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। আমাদের প্রয়োজন যেন পূরণ হয়। তিস্তা প্রকল্পে চীনও অর্থায়ন করতে চাচ্ছে- এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ভারত যে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে চাইছে, সে বিষয় নিয়েই আজকে আলোচনা হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব দুই দিনের সফরে গত বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা এসে পৌঁছান। গতকাল সকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ শেষে তিনি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পররাষ্ট্র সচিবের দেয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন। প্রসঙ্গত, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মহাপরিকল্পনায় পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর, নদী খনন ও শাসন, ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা, আধুনিক কৃষি সেচব্যবস্থা, মাছ চাষ প্রকল্প ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। চীনা কোম্পানিটি ইতোমধ্যে তিস্তা পাড়ে নির্মিতব্য প্রকল্প বাস্তবায়নে নকশা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করেছে। তিস্তা নদী পাড়ের জেলাগুলো নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধায় চীনের তিনটি প্রতিনিধি দল কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২ আগস্ট রংপুরের জনসভায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিনয় কোয়েত্রার সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহার করার ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করেছি। কোয়েত্রা জানিয়েছেন, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়টি পর্যবেক্ষণও করা হচ্ছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকারি ও রাজনৈতিক পর্যায়ে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।
কাছাকাছি সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত ও চীন সফরের কথা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কোন সফরটি আগে হবে, জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, দিল্লি তো কাছে, বেইজিং একটু দূরে। অনেক আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের কথা রয়েছে। ভারতে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কখন সফরটি হবে, সেটি নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্বাচনের পর ভারতে সরকার গঠন হবে। তার পর প্রধানমন্ত্রীর সফর কখন হবে, সেটি ঠিক হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় ভিসা সহজ করার বিষয়ে বিনয় কোয়েত্রার সাথে আলোচনা হয়েছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের ১৬ লাখ থেকে ১৭ লাখ মানুষের জন্য ভিসা ইস্যু করে ভারত। বিশ্বে সর্বোচ্চসংখ্যক ভিসা ভারত ইস্যু করে বাংলাদেশে। তার পরও অনেক সময় ভিসা পেতে অপেক্ষা করতে হয়। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসাকেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আরো লোকবল নিয়োগ করা হচ্ছে। ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুততর করার কাজটায় কোনো উদ্ভাবনী পদ্ধতি কাজে লাগানো যায় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হাছান মাহমুদ জানান, আমি অনলাইনে আবেদনের কথা বলেছি, যাতে মানুষ সহজে ভিসা পায়। ভারত এ ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা উপ-আঞ্চলিক ফিজিক্যাল কানেকটিভিটি নিয়ে আলোচনা করেছি। সেটা অনেক দূর এগিয়েছে। বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানকে ট্রানজিট দেয়া এবং এ দুই দেশ থেকে বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে আলাপ হয়েছে। ইতোমধ্যে নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি করার ক্ষেত্রে সব কিছু চূড়ান্ত হয়েছে। ট্যারিফ নিয়ে আলোচনাও অনেক দূর এগিয়েছে। এটা আমাদের ক্রয় কমিটিতে যাবে। ভারতের ওপর দিয়ে আমরা নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারব।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক ও চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, এই সম্পর্ক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
দুই দেশের কানেকটিভিটি নিয়ে বিনয় কোয়েত্রার সাথে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা