১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ডান-বাম কেন এক হয়েছে

-

- দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরাতে দেশপ্রেমিক দলগুলো একসাথে : ড. মঈন খান
- বাম-ডান এক হয়েছে বর্তমান সরকারের কল্যাণে : সাইফুল হক

দুই মেরুর হয়েও ডান ও বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে এক হয়েছে, সম্প্রতি এ প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই প্রশ্নের উত্তরে এই দুই ঘরানার রাজনৈতিক নেতারা বলেছেন, অতি ডান ও অতি বাম এক হওয়ার পেছনে ক্ষমতাসীন সরকার ও তাদের দলের অবদানই সবচেয়ে বেশি। নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনের পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার কারণে ডান, বাম, প্রগতিশীল, ইসলামী ঘরানার দল ও অসাম্প্রদায়িক দেশপ্রেমিক মূল ধারার দলগুলো আজ এক কাতারে শামিল হয়েছে।

নেতারা এও বলছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ে ডান ও বামের আন্দোলন চলমান থাকবে। তবে ২০১৪, ২০১৮ সালের মতো এবং বাম-ডান রাজনৈতিক মতপরিসর হলো সর্বাধিক গৃহীত রাজনৈতিক মতপরিসরগুলোর একটি।
সাধারণভাবে প্রগতিশীল মতবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসীদের বামপন্থী বলে। অপরপক্ষে গণতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা এবং ধর্মের প্রতি বিশ্বাসীদের ডানপন্থী বলে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বামপন্থী দলগুলো সরকারগঠনে প্রভাববিস্তারকারী দল না হলেও রাজনীতিতে এদের প্রভাব রয়েছে। গত ১৫-২০ বছর ধরে মতাদর্শগত ভিন্নতা দূরে সরিয়ে বাম রাজতৈনিক দলগুলোকে ডানপন্থী দলগুলোর সাথে একধরনের ঘনিষ্ঠ হতে দেখা যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জোট গঠন করে এদের কাউকে কাউকে আন্দোলনে করতে দেখা গেছে, আবার ক্ষমতার ভাগীদারও হয়েছেন কেউ কেউ। ডান কিংবা মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সাথে বৃহৎ জোট গঠন করে বেশ কিছু বাম রাজনৈতিক দল গত প্রায় ১০ বছর ধরে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ডান-বাম মিলিয়ে গঠন করা হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সর্বশেষ ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে বেশ কিছু বামদলকে সাথে নিয়ে বিএনপি গঠন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। এই মঞ্চের বাইরেও আরো কয়েকটি বামদলকে সরকারের পদত্যাগের একই দাবি নিয়ে মাঠে নামতে দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর বিস্ময় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সূচনা বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশের কিছু লোক, যারা একেবারে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া এদের কিছু বক্তব্য আর আমাদের দেশের কিছু আছে বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাইছে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এ দেশের অতি বাম, অতি ডান সবই এখন এক হয়ে গেছে, এটা কিভাবে হলো, আমি জানি না। এই দুই মেরু এক হয়েও সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?’

কেন এক হয়েছে : জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অতি বাম ও অতি ডান এক হওয়ার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর সরকার ও তার দলেরই অবদান সবচেয়ে বেশি। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুটো অকার্যকর ও তামাশার নির্বাচন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তারা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ন্যূনতম বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গা থেকে গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাটাকে নষ্ট করে ফেলেছে। ক্ষমতাসীনরা এর মধ্য দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ পথে সরকার পরিবর্তনের পথ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে সব বিরোধী দল অর্থাৎ বাম, প্রগতিশীল, ইসলামী ঘরানার দল, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক মূল ধারার রাজনৈতিক দল রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে শামিল হয়েছে।

আন্দোলন কি সরকার উৎখাতের জন্য এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী কিংবা তার সরকার উৎখাতের জন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলনের লক্ষ্য, মানুষের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য প্রয়োজন বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে একটা নিরপেক্ষ-বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। এ দাবিতে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। গণদাবির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর যদি সম্মান থাকে, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে আওয়ামী লীগ একটা গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার কিভাবে কোন ফরম্যাটে গঠিত হবে, সেটা আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলো আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করবে।

এই রাজনীতিক বলেন, বাংলাদেশটা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। আমরা চাই, এখানে একটা অবাধ-বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে জয়লাভ করবে, তারাই সরকার গঠন করবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও তার জোট যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পান, তারা সরকার গঠন করবেন। তখন সেই নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণ করতে আমাদের এবং জনগণের কোনো আপত্তি থাকবে না। আর জনগণ যদি বিরোধী দলকে ভোট দেয়, তাহলে বিরোধী দল ঠিক করবে তাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন- কার নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে। সুতরাং আমরা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিতে চাই না।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে কোনো ব্যক্তি একেবারে অপরিহার্য নন। তবে পৃথিবীর সকল ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে তার প্রধানরা মনে করেন, তাদের কোনো বিকল্প নেই।

যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী লক্ষ্য প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, গোটা আন্দোলনটাকে তারা পুনর্গঠন করতে চান। এটা করতে গিয়ে তারা বিগত আন্দোলনের একটা পর্যালোচনার ভেতরে রয়েছেন। কারণ নতুন করে আন্দোলন গড়ে তুলতে গেলে অতীতের নিরপেক্ষ পর্যালোচনাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এত সম্ভাবনাময় একটা আন্দোলন কোন দুর্বলতা বা ভুল সিদ্ধান্তের জন্য সফল হয়নি সেই পর্যালোচনাটা জরুরি। তাদের প্রত্যাশা, আগামী দু-এক মাসের মধ্যে পর্যালোচনা শেষে আলাপ-আলোচনা করে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনকে নতুন প্রেক্ষিত, নতুন বাস্তবতায় পুনর্গঠন করতে পারবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান একই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বর্তমান একদলীয় সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অপশাসন, মামলা-হামলা, জুলুম-নির্যাতন, দুর্নীতি-লুটপাট, আর্থিক অব্যবস্থাপনা ও বিদেশে টাকা পাচারের মাধ্যমে দেশকে নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া করে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। এ রকম একটি দুর্বিষহ অবস্থা থেকে দেশকে পুনরায় গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতেই দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো একসাথে রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশকে বাকশালী সরকার গভীর অমানিশার অন্ধকারে নিমজ্জিত করে দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনা এবং সেই উদ্দেশ্যেই সব বিরোধী দল এক হয়েছে। আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল এ দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসতে পারে। মঈন খান বলেন, আজকের আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়, কোনো ব্যক্তির জন্য নয়, বরঞ্চ এ দেশের সব মানুষের মৌলিক ভোটের অধিকার তথা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। এই সংগ্রাম অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলতেই থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement
নারায়ণগঞ্জে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে কলেজেছাত্র আহত মামলা শেষ হলে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান : মির্জা ফখরুল কালিয়াকৈরে ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ে র‍্যাবের ১৬ সদস্য আটক : ডিজি মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর থেকে শত শত সৈন্যসহ জেনারেল আটক শনিবার থেকে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে’ পাওনা টাকা চাওয়ায় চা দোকানির হাত ঝলসে দেয়ার অভিযোগ হাসিনার বিবৃতিকে ভারত সমর্থন করে না : বিক্রম মিশ্রি ডুয়েটে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রতিভা অন্বেষণে সেমিনার ও প্রদর্শনী মেলা শুক্রবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

সকল