১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে আরো অবনতি বাংলাদেশের

-


বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ২৭ দশমিক ৬৪ পেয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। গত বছর অবস্থান ছিল ১৬৩তম। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের ২০২৪ সংস্করণ প্রকাশ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স।
প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের পেছনে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক দিয়ে এবার শীর্ষস্থান দখল করেছে নেপাল; ৬০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ৭৪তম অবস্থান দখল করেছে। এর পরের অবস্থানে আছে মালদ্বীপ। ৫২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১০৬তম অবস্থানে। এবারের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম অবস্থান থেকে ছিটকে তৃতীয় স্থান পেয়েছে ভুটান। ৩৭ দশমিক ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দেশটি ১৪৭তম অবস্থানে রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত। এই তিন দেশের বৈশ্বিক অবস্থান যথাক্রমে ১৫০, ১৫২ ও ১৫৯তম। গত বছরের ১৬১ থেকে দুই ধাপ এগিয়ে এবার ১৫৯তম অবস্থান পেয়েছে ভারত।
আফগানিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বশেষ স্থান পেয়েছে। ২৬ ধাপ পিছিয়ে দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান ১৭৮তম, পয়েন্ট মাত্র ১৯ দশমিক ০৯।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জের দিক দিয়ে গোটা বিশ্বে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক কর্মস্থল হিসেবে মিয়ানমার, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও আফগানিস্তানের নাম। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাংবাদিকরা কতটুকু স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন, তা যাচাই করা হয়।
এই সূচকে পাঁচটি বিষয় আমলে নেয়া হয়। এগুলো হলো- রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও নিরাপত্তা। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের মুক্ত গণমাধ্যম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে, যাতে রাজনৈতিক সূচকের উল্লেখযোগ্য হ্রাস থেকে নিশ্চিত হয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বৈশ্বিক সূচকে শীর্ষস্থান অটুট রেখেছে নরওয়ে। তাদের পয়েন্ট ৯১ দশমিক ৮৯। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হলো ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি। এ বছর এই সূচকের বৈশ্বিক গড় সাত দশমিক ছয় শতাংশ কমেছে।
২০২৩ সালে প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৩তম। আরএসএফের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, ২০০২ সালে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৮তম। ২০০৩ সালে তা অবনতি হয়ে দাঁড়ায় ১৪৩তম। ২০০৪ ও ২০০৫ সালে এই অবস্থান ছিল ১৫১তম এবং ২০০৮ সালে সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৬তম। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচক তৈরিতে আরএসএফ মূলত পাঁচটি বিষয় বিবেচনায় নেয়। সেগুলো হলো, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইনি অবকাঠামো, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট ও নিরাপত্তা।
২১ বছরের ইতিহাসে গত বছর বাংলাদেশ সবচেয়ে কম স্কোর পেয়ে ১৬২তম অবস্থানে পৌঁছে। এ বছর আরো অবনতি হয়ে পৌঁছেছে ১৬৩তম অবস্থানে। ২০০৯ সালের পর থেকে ২০১৬ সাল ছাড়া বাংলাদেশ কখনোই গণমাধ্যম সূচকে উন্নতি করতে পারেনি। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ২০১৫ সালের তুলনায় ২ ধাপ উন্নতি করে ১৪৪তম অবস্থানে ছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে আবার ২ ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান হয় ১৪৬তম। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০তম। পরের বছর এটি ১৫১তম হয়, ২০২১ সালে ১৫২তম এবং ২০২২ সালে ১০ ধাপ পিছিয়ে হয় ১৬২তম।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সূচক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে কখনো তাদের উন্নতি হয়েছে, আবার কখনো অবনতি। একমাত্র বাংলাদেশেরই ২০১৬ সাল ছাড়া এই সূচকে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছরই অবনতি হয়েছে।
১৪ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নেপাল ২০০৯ সালের ১১৮তম অবস্থান থেকে ২০২৩ সালে ৯৫তম অবস্থানে পৌঁছেছে। শ্রীলঙ্কা ১৬২ থেকে ১৩৫তম অবস্থানে, পাকিস্তান ১৫৯তম অবস্থান থেকে ২০২৩ সালে ১৫০তম অবস্থানে আছে। ভুটানের সূচক অবনতি হয়ে ৭০তম অবস্থান থেকে ২০২৩ সালে ৯০তম অবস্থানে পৌঁছেছে। ২০০৯ সালে মালদ্বীপের অবস্থান ছিল ৫১তম। ২০২২ সালে তা ৩৬ ধাপ পিছিয়ে হয়েছে ৮৭তম। এ বছর দেশটির অবস্থান ১০০তম।
২০০৯ সালে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে আফগানিস্তানের অবস্থান ছিল ১৪৯তম। ২৭ ধাপ উন্নতি করে ২০২১ সাল দেশটি ১২২তম অবস্থানে আসে। কিন্তু ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালেবান আবার ক্ষমতা দখলের পর ২০২২ সালে আফগানিস্তান ১৫৬তম অবস্থানে পৌঁছে। এ বছর দেশটির অবস্থান ১৫২তম। এই ১৪ বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে সবচেয়ে অবনতি হয়েছে প্রতিবেশী ভারতের। ২০০৯ সালে দেশটির অবস্থান ছিল ১০৫তম। ২০২২ সালে দেশটির অবস্থান ছিল ১৫০তম। এ বছর দেশটির অবস্থান ১৬১তম।

 


আরো সংবাদ



premium cement