১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দুদকের মামলায় জামিন পেলেন ড. ইউনূস

অভিযোগ গঠনে শুনানি ২ জুন
-


শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনকে জামিন দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ২ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে এ তারিখ ধার্য করেন।
এ দিন আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন জামিনের আবেদন করেন এবং এ মামলা থেকে ড. ইউনূসের অব্যাহতি আবেদন করার জন্য এবং মামলার প্রস্তুতির জন্য সময় চান। এ ছাড়া অন্যান্য আসামির পক্ষেও জামিন ও সময়ের আবেদন করা হয়।
অপর দিকে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, এ মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য রয়েছে। আমরা শুনানির জন্য প্রস্তুত। আমাদের শুনানির সুযোগ দেবেন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের জামিন মঞ্জুর করেন এবং এ মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির জন্য ২ জুন দিন ধার্য করেন।

দুদকের মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন থাকায় এ দিন বেলা সোয়া ১১টায় আদালতে আসেন ড. ইউনূস। আদেশের পর দুপুর ১২টার দিকে আদালত থেকে বের হয়ে তিনি দেশবাসীকে সালাম জানিয়ে বলেন, অর্থ পাচার করেছি, অর্থ আত্মসাৎ করেছি এমন ভয়াবহ অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে আমি সুদখোর। বহুবার বলা হয়েছে। আপনারা সেটা গ্রহণ করেননি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি, আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আনা হয়েছে অর্থ পাচারের অভিযোগ। আপনারা আমাকে বহুদিন থেকে চিনছেন। এই অপরাধগুলো আমার গায়ে লাগানোর মতো অপরাধ কি না, সেটা আপনারা বিবেচনা করবেন। আগে যে রকম বিবেচনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাকে যখন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেয়া হলো, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের ৯৭ শতাংশ সদস্য ছিলেন এর মালিক। সুদ যদি গ্রহণ করে থাকেন, সেটি তারা করেছেন। আমি কর্মচারী মাত্র। আমি গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক ছিলাম না। কাজেই আপনারা সেটি গ্রহণ করেননি।

ড. ইউনূস আরো বলেন, আমাকে বলা হয়েছে গরিবের রক্তচোষা। আমি এক কোটি গরিব মানুষকে ব্যাংকের মালিক বানিয়েছি। তাদের মালিকানা দিয়েছি। এটা তো সত্য। বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু বানচাল করেছি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা বন্ধ করেছি। আপনারা সেটি গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, আজ যে অভিযোগ, সেই একই ধরনের অভিযোগ। আপনাদের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দিলাম।
শুনানির সময় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২ এপ্রিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত। একই সাথে ২ মে এ মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়। ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নেন। একই সাথে মামলাটি বিচারের জন্য বিশেষ জজ আদালত-৪-এ বদলির আদেশ দেন।
গত ৩ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ড. ইউনূসসহ সাতজনের জামিন মঞ্জুর করেন। একই সাথে এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা এই মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আছাদুজ্জামানের আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্য দিকে গত ২৯ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কমিশন বৈঠকে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয়া হয়।
চার্জশিটভুক্ত ১৪ আসামি হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো: শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো: কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দফতর সম্পাদক কামরুল হাসান ও প্রতিনিধি মো: মাইনুল ইসলাম।
দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদি হয়ে গত বছরের ৩০ মে মামলাটি করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।

 


আরো সংবাদ



premium cement