১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তাপমাত্রায় নতুন রেকর্ড

তাপদাহেও থেমে নেই জীবন : সারা দেশে চলছে ধান কাটা। ছবিটি সাভারের আশুলিয়া থেকে তুলেছেন আমাদের প্রধান আলোকচিত্রী নাসিম সিকদার -

তাপপ্রবাহের এক মাস

- চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা
- উত্তাপ বাড়তে পারে কয়েক দিন
- মে’র মাঝামাঝি ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা

তাপপ্রবাহের আরো একটি রেকর্ড গড়লো চুয়াডাঙ্গা। সেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে দেশে এত বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড আর কোথাও হয়নি। অন্য দিকে দেশে চলমান তাপপ্রবাহের এক মাস পূর্ণ হচ্ছে আজ ৩০ এপ্রিল।
বিশিষ্ট আবহাওয়া গবেষক আমেরিকান জুলি এ্যান রিগলি গ্লোবাল ফিউচার ল্যাবরেটরির সিনিয়র গ্লোবাল সায়েন্টিস্ট ড. রাশেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বর্তমানে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনু থেকে লা নিনার একটি পরিবর্তনের পর্যায় চলছে। এই পরিবর্তনের প্রবণতায় বাংলাদেশে একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে এবং এটা হতে পারে মে’র মাঝামাঝিতে।
গনগনে এই তীব্রতাপে বাইরে বেরুলে অনেকের গায়ের ত্বকে লাল র‌্যাশ উঠে যাচ্ছে, কারো কারো ত্বকে ফোস্কা পড়ে গেছে। যেসব গাছে পানি দেয়া সম্ভব হয় না সেগুলোর পাতা শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ ধানগাছের পাতা মরে যাচ্ছে। আমের ছোট ছোট মুকুল শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। নয়া দিগন্তের রাজশাহী প্রতিনিধি আমচাষিদের সাথে কথা বলে জানিয়েছেন, চাষিরা বলছেন, সময় মতো কাক্সিক্ষত বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। যারা গাছের গোড়ায় পানি দিতে পারছেন তারা হয়তো ভালো ফলন পেতে পারেন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসারে, আজ মঙ্গলবারও সারা দেশেই উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করতে পারে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলো ছাড়া। এর আগে আবহাওয়া বিভাগ আজ মঙ্গলবারের জন্য পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, আজ সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পাবে। কিন্তু নতুন করে আবার বলছে, আজ মঙ্গলবার দেশে মৃদু থেকে তীব্র এবং কোনো কোনো জেলায় অতি তীব্রতাপমাত্রা বিরাজ করবে পারে। আজ মঙ্গলবার অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলায়। এই চার জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি উঠে যেতে পারে। যেহেতু অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে এই চার জেলায়, সে কারণে এই জেলাগুলো অথবা এর আশপাশের সব জেলার বাসিন্দাকে নিজেদের সুস্থ রাখার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন মেডিসিনের চিকিৎসকরা। ঠাণ্ডার মধ্যে নিজেকে রাখতে হবে, দুপুরের গনগনে সময়টায় ঘরে বিশ্রাম করে বিকেলের দিকে অথবা সন্ধ্যার পরে করতে পারলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

এত এত সাবধানবাণী উচ্চারণের পরও সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ এই দুপুরের রোদে কাজে বেরিয়েছেন। সাথে যথেষ্ট পরিমাণে পানি নেয়া এবং পেট ভরে পানি পানের পরও অনেকে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে কর্মস্থলে পড়ে গেছেন এমন খরব পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুও হচ্ছে অতি তীব্র গরমের তাপপ্রবাহ সহ্য করতে না পেরে।
তীব্র এই গরমের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর অধিকাংশে। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠলেও গতকাল যশোরে উঠেছে ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহীতে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঈশ্বরদীতে ৪২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খুলনা বিভাগের অন্য জেলাগুলোতে ৪১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা উঠেছে। গতকাল ঢাকা বিভাগের তাপমাত্রাও বেশি ছিল। এ বিভাগের মধ্যে ফরিদপুরে উঠেছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গোপালগঞ্জে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, টাঙ্গাইলে ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সবচেয়ে স্বস্তিতে ছিলেন সিলেট বিভাগের অধিবাসীরা। সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবশ্য সিলেটে গতকাল সকালের দিকে এবং মৌলভীবাজারে মোটামোটি ধরনের বৃষ্টি হয়ে পরিবেশ বেশ সিক্ত রেখেছে। এ দিকে গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির জন্য ইসতিস্কার নামাজ হয়েছে। কড়া রোদে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জন্য মহান আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি করেছেন মুসল্লিরা।

আগামী পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষ দিকে সারা দেশে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। অন্য দিকে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই তাপপ্রবাহ শেষ পর্যন্ত মে মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং মে মাসের মাঝামাঝিতে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড়ের উদ্ভব হতে পারে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্রতাপ প্রবাহ ছাড়াও খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ এসব অঞ্চলে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে ময়মনসিংহ জেলাসহ বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে জনমনে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে ২৬ এপ্রিল বিকেলে ছিল ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৭ এপ্রিল ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২৮ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ছিল ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সব রেকর্ড ভঙ্গ চুয়াডাঙ্গায় : চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় ১৮ দিন ধরে বিরাজ করছে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। গতকাল চলতি মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ উঠেছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বাতাসে যেন বইছে আগুনের হল্কা। গতকাল বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৩ শতাংশ। বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে বলে জানান চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ।
এই তাপদাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দিনমজুর খেটে খাওয়া লোকজন। এদিকে তীব্র তাপদাহে গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় চুয়াডাঙ্গার গ্রামাঞ্চলে টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। আবার পানি দিয়েও রক্ষা করা যাচ্ছে না মাঠের আবাদ।
চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের শুরু থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়ে আসছে এই জেলায়। একটানা ১৮ দিন তীব্র তাপদাহে হাসপাতালে বেড়েই চলেছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জারহমান জানান, গত ১৮ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। গতকাল সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি। দুপুর ১২টায় ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি। বেলা ৩টায় চলতি মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলায় হিট এলার্ট জারি আছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই মাইকিং করা হচ্ছে।

যশোরে ৪২.৮ ডিগ্রির রেকর্ড
যশোর অফিস জানায়, স্মরণকালের মধ্যে তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে যশোর। যশোরের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া দফতর বেলা পৌঁনে ৩টায় জানিয়েছে, গতকাল ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটিই ছিল গতকাল দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বেলা ৩টায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এর আগে গত বছরের ১৭ এপ্রিল রাজশাহীতে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল। রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতি আরো কয়েক দিন চলবে। এছাড়া আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
এদিকে টানা তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। প্রচণ্ড রোদে পুড়ছে পথঘাট। অনেক গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। তীব্র খরার কবলে পড়ে দ্রুতই নেমে যাচ্ছে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। অসহনীয় কষ্টে দিন-রাত পার করছেন খেটে খাওয়া মানুষ। পশু-পাখিও গরমে হাঁসফাঁস করছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বৃষ্টির জন্য চারিদিকে হাহাকার। প্রচণ্ড রোদ-গরমে নগরীর প্রধান সড়কগুলোতে লোকজনের চলাচল অনেকটা কমে গেছে।
এদিকে এই তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি চেয়ে রাজশাহীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সোমবার সকালে নগরীর শিরোইল কলোনি স্কুল মাঠ ও ফুদকিপাড়া মন্নুজান স্কুল মাঠে মুসল্লিরা এই নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে কান্নাজড়িতকণ্ঠে বৃষ্টির জন্য দোয়া করা হয়।

পাবনায় বছরের সর্বোচ্চ
পাবনা প্রতিনিধি ও ঈশ্বরদী সংবাদদাতা জানান, অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ পাবনার জনজীবন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র থেকে অতি তীব্র মাত্রার তাপপ্রবাহ। দুই দিনের ব্যবধানে গতকাল ছাড়িয়ে গেছে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। গতকাল জেলার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আর বাতাসের আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ শতাংশ। এর আগে গত শুক্রবার ঈশ্বরদীতে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছিল। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, তাপমাত্রা আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দিনমজুরদের অবস্থা শোচনীয়। এ ছাড়াও আম, লিচু, ধানসহ কৃষিেেতও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুদের রোগ বাড়ছে। এদিকে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে নাকাল স্থানীয়রা।

খুলনায় ২৫ বছরের রেকর্ড
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় ২৫ বছরের মধ্যে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া মানুষকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো: আমিরুল আজাদ বলেন, গত ২৫ বছরের মধ্যে গতকাল সর্বোচ্চ ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গত ২৫ এপ্রিল খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি। গত বছর এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি রেকর্ড হয়েছিল।
এদিকে ১৩ এপ্রিল থেকে টানা ১৮ দিন তাপপ্রবাহ চলছে। খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলে হওয়ায় লবণাক্ততা বেড়েছে। ফলে গরমের মাত্রা বেশি অনুভূত হচ্ছে। অসহ্য গরমে বিপাকে পড়েছে মানুষ ও প্রাণীকূল। নাভিশ্বাস নেমে এসেছে শ্রমজীবী মানুষের। এ ছাড়া খরায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক স্থানে নলকূপ ও পাম্পে ঠিকমতো পানি উঠছে না।

কেন্দুয়ায় ২ জনের মৃত্যু
কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় হিটস্ট্রোকে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে উপজেলার দুল্লি গ্রামের হারুনুর রশিদ (৫০) ও মনকান্দা গ্রামের হাবিবুর রহমান ভূইয়া (৬২) নামে এই দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

পেকুয়ায় দিনমজুরের মৃত্যু
পেকুয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, পেকুয়ায় হিটস্ট্রোকে এক দিনমজুর মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তির নাম মো: কালু (৫০)। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের উত্তর মেহেরনামা তেলিয়াকাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কালু ওই এলাকার মৃত নাগু মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মো: কালু সকালে প্রতিবেশী গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে খড়ের স্তূপ তৈরির কাজ করছিলেন। এ সময় গরমে অসুস্থ হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা তাকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মুজিবুর রহমান বলেন, দিনমজুর কালুকে হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তার স্বজনদের বক্তব্য শুনে এটা হিটস্ট্রোকে মৃত্যু বলে মনে হচ্ছে।

নড়াইলে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ
নড়াইল প্রতিনিধি ও লোহাগড়া সংবাদদাতা জানান, প্রচণ্ড তাপদাহের কারণে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা স্কুল ও কলেজের ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন জ্ঞান হারায়। বিদ্যালয় খোলার দ্বিতীয় দিন গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিন্দ্য কুমার সরকার। অসুস্থরা ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সাহারা, রেজোয়ান, সোহাগ, বায়োজিদ, শিহাব ও অনামিকা নামের শিক্ষার্থীরা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনার সময় বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ ছিল না। অসুস্থদের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা শেষে পরিবারের কাছে পাঠানো হয়।

গলাচিপায় ৬ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ
গলাচিপা (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, গরমে গলাচিপার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্তত ছয়জন উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ ছাড়া হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৪৫ জন চিকিৎসা নিয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণপূর্ব গোলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জলিল আহম্মেদ স্কুল চলাকালীন সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। রোববার বিদ্যালয় খোলার ১ম দিনে চরবিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী মোস্তফা কামাল (৫৬) অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গোলখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদ আলম জানান, সপ্তম শ্রেণীর চারজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বরিশালে ৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালে তীব্র তাপদাহে জগদীশ সারস্বত গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ক্লাস চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ ছিল না। অসুস্থ হওয়া শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অসুস্থ শিক্ষার্থী তাসনিন জানায়, প্রথম ক্লাস থেকে পেটে ব্যথা, মাথা ব্যথা ও বমি বমি ভাব হচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে গরমের কারণে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সহকারী শিক্ষক কাওসার হোসেন জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচণ্ড গরমের ফলে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এদিকে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক বশির আহাম্মেদ জানান, সোমবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ৩৮ দশমিক ০৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

বেতাগীতে ৪ শিক্ষার্থী অসুস্থ
বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বেতাগীতে প্রচণ্ড গরমে গতকাল শ্রেণীকক্ষে ৪ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুটিয়াখালী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীর দুজন এবং কাইয়ালঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর দুজন শ্রেণীকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুপুরে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসের মেঝেতে পড়ে জ্ঞান হারায়। গুরুতর অসুস্থ ৭ম শ্রেণীর রহমাতুল্লাহকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

ভালুকায় অসুস্থ দুই শিক্ষার্থী
ভালুকা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ভালুকায় পরপর দুই দিনে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে অসুস্থ হয়ে পড়ে দুই শিক্ষার্থী। গতকাল সকালে ভালুকা ফাযিল মাদরাসায় এবং আগের দিন সকালে ভরাডোবা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অসুস্থতার ঘটনা ঘটে। এই দিন শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার ঘটনার পরপরই মাদরাসাটি ছুটি দেয়া হয়।

কাঁঠালিয়ায় মাদ্রাসা ছাত্র অসুস্থ
কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা জানান, কাঁঠালিয়া উপজেলার উত্তর চেঁচরী দাখিল মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো: নুর সাইদ (১১) তীব্র গরমে ক্লাস চলাকালে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় এ ঘটনা ঘটে। নুর সাইদ উপজেলার উত্তর চেঁচরী গ্রামের মো: মিজানুর রহমানের ছেলে। মিজানুর রহমান জানান, আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে ক্লাস রুমে বমি করে। খবর পেয়ে স্থানীয় কৈখালী বাজারে এনে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানোর পর এখন অনেকটা সুস্থ।

পিরোজপুরে হাসপাতালে গাদাগাদি
পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরে তীব্র তাপদাহে জনজীবন অস্থির হয়ে উঠছে। দুই সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪২ সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। এ কারণে জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ। হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সঙ্কট। পিরোজপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে শতাধিক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের ওয়ার্ড ঘুরে রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ দেখা গেছে। জায়গা না পেয়ে অনেকে ফ্লোরে ও বারান্দায় আছেন। এ দিকে সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও রোগীরা স্যালাইন, ওষুধসহ সব সেবা পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন জেলার সিভিল সার্জন মো: মিজানুর রহমান।
এ দিকে রোববার প্রচণ্ড তাপদাহে স্কুল-মাদরাসা খোলার প্রথম দিন এক শিক্ষক ও দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার নয়াখালী মাটিভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম প্রচণ্ড গরমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ সময় ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো: রাসেল অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দু’জনকেই স্থানীয় চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ দিকে ভাণ্ডারিয়া সদরে শাহাবুদ্দিন কামিল মাদরাসার অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মারিয়া (১৪) অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ছুটি দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তীব্র তাপদাহে সাধারণ পথচারীদের স্বস্তি দিতে পিরোজপুরের বিভিন্ন সড়কে ঠাণ্ডা পানি ও স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।

চুনারুঘাটে হাসপাতালে রোগীর চাপ
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সারা দেশের মতো তাপপ্রবাহে দিশেহারা চুনারুঘাটের জনজীবন। গরমের কারণে এরইমধ্যে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায়। যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। গত শনিবার পর্যন্ত চুনারুঘাট হাসপাতালে রেকর্ড পরিমাণ রোগী ভর্তি হয়েছেন। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে শয্যা সঙ্কটের কারণে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন হাসপাতালের মেঝেতে। আবার অনেক রোগীর ঠাঁই মিলেছে হাসপাতালের বারান্দায়। হাসপাতালের নার্স লাকি আক্তার জানান, গত এক সপ্তাহে এ পর্যন্ত ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ জনই শিশু। গরমে রোগীর চাপ বাড়ছেই। রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement