১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলকে মূল্যায়নের চিন্তা আ’লীগের

স্বজনরা মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে ব্যবস্থা
-

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলীয়ভাবে তৃণমূলকে মূল্যায়নের চিন্তা রয়েছে আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তৃণমূল আওয়ামী লীগের ত্যাগী, বঞ্চিত ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের দেখতে চায় দলটির হাইকমান্ড। তারই অংশ হিসেবে এসব পদে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার বিষয়ে দলের তরফ থেকে কঠোর বার্তা দেয়া হচ্ছে। যদিও কেন্দ্রের এসব কঠোর বার্তা কেউ কেউ পাত্তাও দিচ্ছেন না, মানছেন না কোনো নির্দেশনা। কেন্দ্রের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অন্তত ৩০ উপজেলায় মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়স্বজন ও সমর্থিতরা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন পেরিয়ে গেলেও প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার দৃঢ় মনোভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকার গঠনের টানা চার মেয়াদ চলছে আওয়ামী লীগের। গত টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে দীর্ঘ এই সময়ে জেলা পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা বঞ্চিত রয়েছে। কোথাও কোথাও ত্যাগী নেতাদের দলীয় মনোনয়ন কিংবা সমর্থন দেয়া হলেও মন্ত্রী-এমপিদের পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় ওই প্রার্থীর কপাল পুড়েছে। নৌকার বিরোধিতা করেও আজ অবধি কিছু মন্ত্রী-এমপি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক আধিপত্য ধরে রেখেছেন, রয়েছেন বহাল তবিয়তে। সূত্র আরো বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের একটা বড় প্রভাব থাকে। তাদের পছন্দের প্রার্থী না হলে নির্বাচনে জয়ী হওয়াটাও অনেকটা কঠিন হয়ে যায় অন্য প্রার্থীদের জন্য। তবে এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের আধিপত্য কমানোর পাশাপাশি দলের ত্যাগী, বঞ্চিত ও পোড় খাওয়া নেতাদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য কেন্দ্রের তরফ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, গত ১৫ বছরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজন দল না করে, দলের কোনো কর্মী না হয়েও নৌকার টিকিট নিয়ে, দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। এতে দলের ত্যাগী ও পোড় খাওয়া নেতারা অনেকাংশে বঞ্চিত রয়ে গেছেন। এতে একদিকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের দেখভাল না করার অভিযোগও উঠেছে। এসব কারণে তাদের মধ্যে এক প্রকার ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছে। অন্য দিকে এমপি বলয় তৈরি হয়ে তৃণমূল সংগঠন দ্বিধাবিভক্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এসব ক্ষোভ ও হতাশা দূর করিয়ে তৃণমূলকে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে এবার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের গুরুত্বসহকারে মূল্যায়নের চিন্তা করেছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ জন্য মন্ত্রী-এমপিদের কঠোর বার্তা ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। অনেকেই দলীয় নির্দেশনা মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আবার কেউ কেউ এখনো নির্বাচনে রয়ে গেছেন। যারা রয়ে গেছেন, তাদের বিষয়ে দলের তরফ থেকে কঠোর বার্তা রয়েছে। সঠিক সময়ে সেটা কাজে লাগানো হবে বলে শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে প্রথম পর্যায়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ করেননি। আমাদের দলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের বিষয়টি আছে। দল যার যার কর্মকাণ্ড বিবেচনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিয়ে থাকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে যারা প্রত্যাহার করবে না এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্ত সময়মতো নেয়া হবে। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের নিকটাত্মীয় এবং স্বজনদের প্রার্থী না হতে দলীয় যে নির্দেশনা রয়েছে তা না মানলে সময়মতো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আওয়ামী লীগ তৃণমূল নির্ভর একটি সংগঠন বলে মনে করেন দলটির অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে থাকে। এ জন্য আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার চিন্তাভাবনা নিয়েই ইতোমধ্যে মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়স্বজনদের নির্বাচন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী-এমপি তার ভাই, ছেলে, আত্মীয়স্বজন কোনোদিন দল করে নাই; কিন্তু হঠাৎ দলের টিকিট নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হন। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যারা দীর্ঘ দিন ধরে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে রাজনীতি করে আসছে, তারা যাবে কোথায়? তারা কি মূল্যায়ন পাওয়ার অধিকার রাখে না? তারা কি এসব পদে যাওয়ার অধিকার রাখে না? তৃণমূল নেতাকর্মীরা যাতে যথাযথভাবে মূল্যায়িত হন সে জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা দলের নির্দেশনা মানবেন না, সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে, সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement