১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সহযোগিতা জোরদারে কাতারের সাথে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা সই

মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান সঙ্ঘাতে উদ্বেগ প্রকাশ
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি : বাসস -


বাংলাদেশ ও কাতার পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। উভয় দেশ মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও সঙ্ঘাত নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং ফিলিস্তিন ইস্যুর টেকসই সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির উপস্থিতিতে সই হওয়া চুক্তিগুলো হলো, দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ, আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সমুদ্র পরিবহন, পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসায়িক পরিষদ প্রতিষ্ঠা।
সই হওয়া এমওইউগুলোর মধ্যে রয়েছে, জনশক্তি কর্মসংস্থানে (শ্রম) সহযোগিতা, এমব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সহযোগিতা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা।

এর আগে কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে টাইগার গেটে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। তারা প্রথমে একান্তে এবং পরবর্তী সময়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষ দুই দেশের দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। পরস্পরের সাথে যোগাযোগ বাড়ানো, জনগণের মধ্যে সম্পৃক্ততা এবং সরকারি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব পর্যায়ে সফর বিনিময় বাড়ানোর মাধ্যমে বিদ্যমান সম্পর্ক কিভাবে আরো এগিয়ে নেয়া যায়, তার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, জনশক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা আলোচনা করেন। উভয় পক্ষ গাজা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে মতবিনিময় করেন।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ও সঙ্ঘাত নিয়ে উভয় নেতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ফিলিস্তিন ইস্যুর টেকসই সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে উভয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ত্যাগের আগে কাতারের আমির টাইগার গেটে রক্ষিত দর্শণার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। এরপর তিনি বঙ্গভবনের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) কাতারের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন থেকে ব্যবহার পর্যন্ত- কৃষি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ, খাদ্য প্যাকেজিং, স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচার, সার উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে বাংলাদেশ।

উপসাগরীয় অঞ্চলে কাতারকে বাংলাদেশের একটি মূল্যবান উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমিরের সফর এবং দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত ১০টি চুক্তি ও এমওইউ আগামী দিনে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরো সম্প্রসারিত ও গভীরতর করবে। বাংলাদেশ সরকার বিদেশী বিনিয়োগের জন্য এক শ’টি অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল স্থাপন করেছে। কাতারের বিনিয়োগকারীরা পেট্রো- কেমিক্যাল, জ্বালানি, মেশিনারিজ, তথ্য-প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিকস, সিরামিক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রণোদনা পেতে পারে এবং সহায়তা করতে পারে। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন প্রায় তিন লাখ ৭৫ হাজার বাংলাদেশীকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়ার জন্য কাতার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই জনবল কাতার এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিনিয়তই অবদান রাখছেন। কাতারের আমিরকে আরো তরুণ, দক্ষ ও আধা-দক্ষ জনশক্তি, আইটি বিশেষজ্ঞ, পেশাদার প্রযুক্তিবিদ নিয়োগের আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন কাতারের আমির। তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। কাতার এবং বাংলাদেশের মধ্যে সই হওয়া বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, পররাষ্ট্রসচিব এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। আর কাতারের প্রতিনিধিদলে ছিলেন আমিরি দেওয়ান প্রধান শেখ সৌদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল-থানি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোলতান বিন সাদ আল-মুরাইখি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত সেরায়া বিন আলি আল-কাহতানি।
এরপর কাতারের আমির ও তার সফরসঙ্গীরা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, উপদেষ্টাবৃন্দ ও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই ভোজে যোগ দেন। কাতারের আমিরের সম্মানে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দুই দিনের সফর শেষে কাতারের আমির বেলা ৩টায় বিশেষ বিমানে নেপালের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়ে যান।


আরো সংবাদ



premium cement