গাজায় ৩১০ লাশ এক গণকবরেই
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩২
- গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের
- আতঙ্কিত জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধান
- উত্তর গাজায় ফের হামলা ইসরাইলের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনুস শহরের আল-নাসের হাসপাতালের চত্বরে একটি গণকবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩১০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার ফিলিস্তিনি বেসরকারি প্রতিরক্ষা বিভাগ এসব তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গত রোববার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছিল, খান ইউনুস শহরের একটি হাসপাতালে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সিএনএন, রয়টার্স, আলজাজিরা।
খান ইউনুসের বেসরকারি প্রতিরক্ষা বিভাগের পরিচালক কর্নেল ইয়ামেন আবু সুলেমান সিএনএনকে বলেছেন, গত শনিবার নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছেন তারা। গত সোমবার আরো ৭৩টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২৮৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েকটি লাশ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে কাউকে মাঠেই ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের জীবিত কবর দেয়া হয়েছিল নাকি মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল তা আমরা এখনো জানি না। বেশির ভাগ লাশই পচে গেছে। রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী একজন জানিয়েছে, অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে জানুয়ারিতে হাসপাতালের মাঠে নিহতের পরিবারের সদস্যরা লাশ কবর দিয়েছিল।
ইসরাইলি সেনাপ্রত্যাহারের পর যখন তারা ফিরে আসে, তখন তারা দেখতে পায় যে লাশগুলো উত্তোলন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে এক ব্যক্তি সিএনএনকে বলেছেন, তিনি এখনো তার ২১ বছর বয়সী ছেলের লাশ খুঁজে পাননি, যাকে জানুয়ারিতে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো তাকে খুঁজে পাইনি। আমরা তাকে সেখানে কবর দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা নতুন করে ভালো একটি কবর বানাতে চেয়েছিলাম।’ এর আগে খান ইউনুস বেসরকারি প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র এবং এই অনুসন্ধান মিশনের প্রধান রায়েদ সাকার সিএনএনকে বলেছিলেন, গত ৭ এপ্রিল ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের পর তারা আরো ৪০০ নিখোঁজ মানুষের লাশের সন্ধান করছেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছিল, শহরটিতে সামরিক অভিযানের পর ৭ এপ্রিল ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করা হয়। এরপর লাশগুলো পাওয়া যায়। গণকবরে থাকা লাশগুলোর অধিকাংশই নারী ও শিশুদের বলে জানিয়েছে তারা। এ ছাড়া গণমাধ্যমটির মতে, খান ইউনুসের ওপর ইসরাইলি আক্রমণের পর প্রায় ৫০০ জন নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। অঞ্চলটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব দেখা দিয়েছে।
গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের : মিডল ইস্ট মনিটর জানায়, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গাজায় গণকবর আবিষ্কারের খবরকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। ডুজারিক রিপোর্টগুলোকে ‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং সব গণকবরের পুঙ্খানুপুঙ্খ ও স্বাধীন তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাছাড়া এ অঞ্চলে চলমান সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাতে তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনা সম্পূর্ণরূপে এমনভাবে তদন্ত করতে হবে যা বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন। এ ঘটনাতেই বোঝা যায় কেন আমাদের যুদ্ধবিরতি দরকার, কেন আমাদের এই সঙ্ঘাতের অবসান দেখতে হবে, কেন আমাদের মানবতাবাদীদের জন্য, মানবিক পণ্যের জন্য, হাসপাতালের আরো বেশি সুরক্ষা দেখতে হবে। আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দেখতে হবে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী ৭ অক্টোবর থেকে মার্কিন সমর্থনে গাজায় ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চালাচ্ছে, যার ফলে ৩৪ হাজোরের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী। গণহত্যার অভিযোগে তেল আবিবকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গাজায় যুদ্ধের সাথে সাথে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীরা অধিকৃত পশ্চিমতীরে অভিযান, অনুপ্রবেশ ও গ্রেফতার বাড়িয়েছে। যার ফলে এখানে ৪৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, প্রায় ৪,৯০০ জন আহত হয়েছে এবং প্রায় ৮,৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আতঙ্কিত জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার প্রধান : গাজার হাসপাতালে গণকবরের প্রতিবেদনে আতঙ্কিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, গাজায় নাসের এবং আল-শিফা চিকিৎসাসেবা ধ্বংস করা এবং সেখানে শত শত লাশ গণকবর দেয়ার খবর দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত তিনি। এক মুখপাত্রের বরাতে এই খবর জানিয়েছে রয়টার্স। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, ‘আমরা সতর্কতা বাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করছি। কেননা, স্পষ্টতই একাধিক লাশ পাওয়া গেছে।’ নিহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে কয়েকজনের হাত বাঁধা ছিল। এটি অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। এই ঘটনাগুলোর আরো তদন্ত করা দরকার।’
উত্তর গাজায় আবারো হামলা : উত্তর গাজায় হামলা আরো জোরদার করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেখানে সবচেয়ে ভারী গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছেন অঞ্চলটির বাসিন্দারা। রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। উত্তর গাজার বাসিন্দারা এবং হামাস মিডিয়ার জানানো তথ্য মতে, গাজা উপত্যকার উত্তর প্রান্তের বেইত হানুনের পূর্ব দিকে ইসরাইলি সেনা ট্যাংকগুলো নতুন করে হামলা শুরু করেছে। তবে সেগুলো এখনো শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। ট্যাংকারের ছোড়া কয়েকটি গুলি বিদ্যালয়ে আঘাত হেনেছে। সেখানে গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা আশ্রয় নিচ্ছিলেন। ইহুদি হলিডে পাসওভার উপলক্ষে ইসরাইলে সরকারি অফিস এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা ছিল। এরই মধ্যে সোমবার শেষ রাতে সেখানে রকেট হামলার সতর্কতা জারি করে ইসরাইল। একইসাথে বন্ধ রাখা হয় দক্ষিণ সীমান্ত শহরগুলো। তবে এই হামলায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
খান ইউনুসে ফের অভিযান : দক্ষিণ গাজার খান ইউনুস নগরীর পূর্বাঞ্চলে আবারো হানা দিয়ে আকস্মিক অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ফলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই নগরীতে ফিরে আসা ফিলিস্তিনিরা আবার পালাতে বাধ্য হচ্ছে। অধিবাসীরা সোমবার একথা জানিয়েছে। খান ইউনুসের প্রধান যে হাসপাতালটি ইসরাইলি সেনারা ছেড়ে গিয়েছিল সেখানে গণকবর থেকে আরেথা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। আরো দক্ষিণের রাফাহ নগরীতেও ইসরাইলের হামলা চলছে। যে নগরী গাজার বাসিন্দাদের শেষ আশ্রয়স্থল। যেখানে আশ্রয় নিয়ে আছে গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে তুমুল লড়াইয়ের পর সেখান থেকে ইসরাইল এ মাসে হঠাৎ করেই বেশির ভাগ স্থলসেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ফলে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাড়িঘরের খোঁজে ফিরতে শুরু করেছিল ফিলিস্তিনিরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা